মুম্বই, ১০ আগস্ট: মহামারী করোনাভাইরাস শুধু জীবন বা প্রিয়জনকেই কাড়েনি। কেড়ে নিয়েছি মানুষের শেষ সম্বলও। সংক্রমণ ঠেকাতে দিনের পর দিন লকডাউনের জেরে বহু মানুষ আজ বেকার। সংসার সচল রাখতে কেউ জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন কেউ বা জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে মৃত্যুকেই বেছে নিচ্ছেন। এর মধ্যেও অনেকে জীবনকে যাপন করার চেষ্টা করছেন। তাইতো সুদূর আয়ার্ল্যান্ড থেকে মুম্বইয়ে ঘটতে চলা এক আত্মহননের ঘটনাকে রুখে দিলেন ফেসবুক (Facebook) কর্মী। সৌজন্যে সোশ্যাল মিডিয়া। ওই ফেসবুক কর্মী দেখেন এক ভারতীয় যুবক ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। সেখানে এমন কিছু কথা রয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট যে তিনি আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমেই ফেসবুকের তরফে ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগের কথাভাবেন আয়ার্ল্যান্ডের কর্মী। পরে বুঝতে পারেন, এমনভাবে এগোতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। হয়তো শেষপর্যন্ত মৃত্যুটা রোখা যাবে না। তাই সময় নষ্ট না করে দিল্লির সাইবার ক্রাইম সেলের সঙ্গেই যোগাযোগ করেন তিনি। ফোন নম্বর দিয়ে গোটা ঘটনাটি জানান। ওই যুবকের প্রোফাইলেই ছিল ফোন নম্বর। শনিবার রাত সাতটা বেজে ৫১ মিনিটে দিল্লির সাইবার ক্রাইমের ডিসিপি ফোনে সতর্কবার্তা পান। তারপর খোঁজ নিয়ে দেখেন নম্বরটি পূর্বদিল্লির মান্ডাওয়ালি এলাকার এক মহিলার। এরপরেই তিনি পূর্বদিল্লির ডিসিপির সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানান এবং মহিলার বাড়ির টিকানাও দেন। পুলিশ তাঁর বাড়িতে পৌঁছে জানতে পারে ফোন নম্বরটি ওই মহিলার হলেও ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তাঁর স্বামীর। বেশ কিছুদিন আগে কর্মহীন হয়ে পড়ায় দাম্পত্য কলহ শুরু হলে রাগ করেই স্বামী মুম্বই চলে গিয়েছেন। সেখানে একটি হোটেলে রান্নার কাজ করছেন। তবে মুম্বইতে স্বামী কোথায় থাকেন, তা স্ত্রী জানেন না। আরও পড়ুন-Mahatma Gandhi: লন্ডনের অকশন হাউসের লেটার বক্সে মিলল মহাত্মা গান্ধীর চশমা, ২১ তারিখে উঠছে নিলামে
এদিকে ততক্ষণে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে অণ্বেষ রায় মুম্বই পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখার ডিসিপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে রয়েছেন রেশমি কারান্ডিকর। তিনি নম্বর পেয়েই লোকেশন ট্রেস করার চেষ্টা করতে থাকেন। তবে ততক্ষণে ফোন সুইচ অফ করে দিয়েছেন ওই যুবক। এদিকে হাল ছাড়েননি কারান্ডিকর। তাই কিছুক্ষণের জন্য ফোন অন হতেই লোকেশন পুলিশের হাতে চলে আসে। জানতে পারেন শহরতলির ভায়ান্ডার এলাকায় রয়েছেন ওই যুবক। অবসাদগ্রস্ত যুবককে কথায় ব্যস্ত রাখেন ডিসিপি। ততক্ষণে ভায়ান্দারে যুবকের ঠিকানার খোঁজে নেমে পড়েছে পুলিশ। তাঁকে উদ্ধারের পর অনেক কষ্টে শান্ত করা হয়। জানা গিয়েছে শুধু চাকরির অভাবে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলাই নয়, তাঁদের শিশুসন্তান রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে দিন চলবে বুঝতে না পেরে হয়রান হয়ে পড়েছিলেন। তাই আত্মহত্যাই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে করেছেন। যুবককে উদ্ধারের পর হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন দিল্লি সাইবার ক্রাইমের ডিসিপি অণ্বেষ রায়। তিনি বলেন, সুদূর আয়ার্ল্যান্ডের এক ফেসবুক কর্মীর দেওয়া তথ্যা এবং দিল্লি ও মু্মবই পুলিশের তৎপরতায় একটা আত্মহত্যা প্রবণ মানুষের জীবন ফেরানো গিয়েছে। এটাই সবথেকে ভাল বিষয়।