দিল্লি, ৩১ মে: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) শপথ গ্রহণের পর তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যরা শপথ নিতে শুরু করেন। একই শপথবাক্য শুনতে শুনতে উপস্থিত অভ্যাগতরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু রাইসিনার উঠোনে ফের জেগে ওঠে যখন রাজ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করতে আসেন ওড়িশার প্রতাপ সারঙ্গি (Pratap Chandra Sarangi)। ততক্ষণে দর্শকাসন থেকে মুহুর্মুহু করতালিতে জমে গিয়েছে ভবন প্রাঙ্গণ। পাজামাপাঞ্জাবিতে উস্কোখুস্কো চুল নিয়ে ততক্ষণে ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ‘ওড়িশার মোদি’। এই সাদামাটা মানুষটির গুরুত্ব এতটাই বেশি যে বিজেপির অন্যান্য মন্ত্রীদের দামী পোশাক শহুরে হাভভাবও ম্লান হয়ে গেল।
মঞ্চে ততক্ষণে আলো ছড়াতে শুরু করেছেন, হ্যাঁ, তাঁকে নিয়ে উন্মাদনা এমনই। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর লক্ষ লক্ষ ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ শহুরে জীবনের চাকচিক্য, বিলাস, সুবিধা থেকে তিনি অনেক দূরে। বালাসোরের এক ঝুপড়ি বাড়িই তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। এবার লোকসভা ভোটে ওড়িশার বালাসোর আসন থেকে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী প্রতাপ চন্দ্র সারঙ্গি। তাঁর রাজ্যের মানুষ বলেন, ‘ওড়িশার মোদি’। বালাসোরে বিজু জনতা দলের প্রার্থী রবীন্দ্র কুমার জেনাকে তিনি হারিয়েছেন ১২ হাজার ৯৫৬ ভোটে।
অবিবাহিত প্রতাপবাবুর অন্যতম কাজই হল দেশের মানুষের সেবায় কাজ করা। তিনি সাধু হতে চেয়েছিলেন। সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছায় একবার বেলুড়মঠেও আসেন। কিন্তু যখনই সন্ন্যাসী মহারাজরা জানতে পারেন, বাবার মৃত্যু হয়েছে, মা বাড়িতে একা। সঙ্গে সঙ্গেই সারঙ্গিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় মায়ের সেবা করার নির্দেশ দিয়ে। তারপর থেকে মায়ের ও দেশের সেবাতেই নিজেকে নিয়োজিত করেছেন তিনি। বিয়ে করেননি, থাকেন এক ঝুপড়ি সদৃশ বাড়িতে। গতবছর মায়ের মৃত্যু হওয়াতে এখন একেবারেই একার সংসার। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাঁর অবসর কেটে যায়। দুঃস্থ শিশুদের সাহায্যার্থে স্কুলও করেছেন তিনি। নরেন্দ্র মোদি ব্যাক্তিগতভাবে বালাসোরের এই আত্মভোলা মানুষটিকে খুব পছন্দ করেন। লোকসভা ভোটে সারঙ্গি জিতে যাওয়ায় মোদি তাই খুব খুশি। কারণ সারঙ্গির মতো তিনিও-তো সন্ন্যাস নিতে চেয়েছিলেন। তবে সন্ন্যাসী না হয়েও আজ গেরুয়া শিবিরেই তাঁদের কর্মক্ষেত্র সুনিশ্চিত হয়েছে, এটাই বা কম কীসে।