নতুন দিল্লি, ১ জুলাই: পয়গম্বর মহম্মদকে (Prophet Muhammad) নিয়ে মন্তব্য করার জন্য টিভি চ্যানেলে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত সাসপেন্ডেড বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার (Nupur Sharma)। আজ এই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court)। শীর্ষ আদালত বলেছে, "নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে যার মন্তব্য উপসাগরীয় দেশগুলির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁর পুরো দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।" আদালত আরও বলেছে যে দেশে যা ঘটছে তার জন্য নূপুর শর্মা একা দায়ী। বিচারপতি সূর্য কান্ত (Justice Surya Kant) বলেন, "কীভাবে বিতর্কে তাঁকে উস্কানি দেওয়া হয়েছিল তা আমরা দেখেছি। কিন্তু তিনি যেভাবে এই সব বলেছেন এবং পরে বলেছেন যে তিনি একজন আইনজীবী ছিলেন, তা লজ্জাজনক। তাঁর পুরো দেশের কাছে ক্ষমা (Apologise) চাওয়া উচিত।"
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোয়ে হাজির হয়ে পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন নূপুর শর্মা। যা নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। এমনকী, নূপুর শর্মার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলেও জোর সমালোচনা শুরু হয়। এরপরই নূপুর শর্মাকে বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি নূপুর শর্মার বক্তব্যকে কেন্দ্রীয় সরকার কখনও সমর্থন করে না বলে স্পষ্ট জানানো হয় মোদী সরকারের তরফে। কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শহরে নূপুরের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়। তাঁকে তলবও করে পুুলিশ। যদিও থানায় হাজিরা এড়িয়ে গিয়ে সময় চান তিনি। আরও পড়ুন: IT Notice To Sharad Pawar: এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারকে নোটিশ পাঠাল আয়কর বিভাগ
তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা সমস্ত এফআইআর যাতে দিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়, তার আবেদন নিয়ে আজ নূপুর শর্মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর আইনজীবী বলেন, সাসপেন্ডেড বিজেপি নেত্রীর হুমকি পাচ্ছেন। জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলে যে নূপুর শর্মা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আদালত আরও বলে, "দিল্লি পুলিশ কী করেছে? আমাদের মুখ খোলাবেন না। যে বিষয়টি বিচারাধীন, তা নিয়ে আলোচনা করা ছাড়া টিভি চ্যানেল ও নূপুর শর্মা আর কী কাজ করছে?"
নুপুর শর্মার পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী মনিন্দর সিং সুপ্রিম কোর্টকে বলেন যে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নূপুর এবং মন্তব্য প্রত্যাহারও করেছেন। জবাবে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, "তাঁর টিভিতে গিয়ে দেশের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। তিনি হুমকির সম্মুখীন নাকি নিজেই নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন? যেভাবে তিনি সারা দেশে আবেগকে উজ্জীবিত করেছেন। এই মহিলা দেশে যা ঘটছে, তার জন্য একা দায়ী।"
নূপুর শর্মার আইনজীবী যখন সুপ্রিম কোর্টকে বলেন যে তিনি তদন্তে যোগ দিচ্ছেন এবং পালিয়ে যাচ্ছেন না, তখন সুপ্রিম কোর্ট বলে, "সেখানে আপনার জন্য একটি রেড কার্পেট বিছিয়ে রাখতে হবে। আপনি যখন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন, তখন সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু কেউ আপনার মক্কেলকে স্পর্শ করার সাহস করছে না। যাতে আপনার মক্কেলের প্রভাব বোঝা যাচ্ছে। তাঁর দৃঢ়চেতা এবং অহংকারী চরিত্র দেখা যাচ্ছে।"তিনি মনে করেন যে তাঁর পিছনে ক্ষমতার ব্যাক আপ আছে এবং দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে যে কোনও বিবৃতি দিতে পারেন।"
তাঁর বিরুদ্ধে নথিভুক্ত সমস্ত এফআইআর দিল্লিতে স্থানান্তর করার জন্য যে আবেদনপয়গম্বর করেছিলেন নূপুর শর্মা। সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি শীর্ষ আদালত। আদালত আবেদনে সাড়া না দেওয়াতে নুপুর শর্মা সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাঁর আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।