মুম্বই, ১২ ডিসেম্বর: ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর। দিনটার নাম মনে করলেই যেন গা শিউরে ওঠে সমগ্র ভারতবাসীর। সেদিন ভারতের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বই (Mumbai) রক্তাক্ত হয়েছিল সন্ত্রাসবাদী হামলায়। কয়েকদিন আগেই আরও একটা ২৬/১১ পার হয়েছে। আজ অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর মুম্বই সন্ত্রাসবাদ বিরোধী স্কয়্যাডের (ATS) প্রাক্তন প্রধান শহিদ হেমন্ত করকরেরর (Hemant Karkare) ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছিলেন মুম্বই পুলিশের তৎকালীন অ্যান্টি টেররিস্ট স্কয়্যাডের প্রধান। দেশের সাহসী পুলিশ অফিসারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেমন্ত করকরে। ২০০৮ সালে শহিদ হওয়ার আগে তাঁর মুকুটে কয়েকটি পালক ছিল। তবে করকরের মৃত্যু নিয়ে নানা তত্ত্ব ও জল্পনা রয়েছে। আগেও যেমন ছিল, এখনও রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর প্রকৃতি সম্পর্কে বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy Theories) রয়েছে। হেমন্ত করকরের সম্পর্কে আমরা তথ্য সমৃদ্ধ এই লেখাটি প্রস্তুত করেছি। এখানে আপনি তাঁর সম্পর্কে খুবই কম জানান তথ্য পাবেন।
হেমন্ত করকরে কে ছিলেন?
হেমন্ত করকরের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের নাগপুরে (বর্তমান মহারাষ্ট্রে)। শুরুর দিনগুলিতে হিন্দুস্তান লিভার লিমিটেডে (বর্তমানে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার লিমিটেড) কাজ করতেন। ১৯৮২ ব্যাচের এই আইপিএস পরে ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসে (আইপিএস) যোগ দেন। করকরে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা র-র হয়ে অস্ট্রিয়াতে কাজ করেছেন বলে জানা যায়। মুম্বই এটিএসের প্রধান হওয়ার আগে করকরে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আরও পড়ুন: Citizenship Amendment Bill: 'হিন্দুদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে অমিত শাহের দাবি অযৌক্তিক এবং অসত্য', কড়া প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের
হেমন্ত করকরের কয়েকটি মাইলস্টোন
২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত করেছেন হেমন্ত করকরে। মুম্বই থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, উত্তর মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরে একটি মসজিদের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। একটি মোটরবাইকে বোমা বেঁধে রাখা হয়েছিল। বিস্ফোরণে মোট ৮ জন মারা যান। আহত হন অন্ততপক্ষে ১০০ জন। তৎকালীন এটিএস প্রধান হেমন্ত করকরে এই ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের তদন্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। করকরে ১১ জন সন্দেহভাজনকে (যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত) গ্রেফতার করেছিলেন। যার মধ্যে অন্যতম সাধ্বী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর, কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত, স্বামী দয়ানন্দ পান্ডে। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন মহারাষ্ট্রের সরকারের অধীনে চাপের মুখে করকরে সমালোচিত হয়েছিল। অন্যদিকে, তাঁর প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসাও পেয়েছিলেন।
হেমন্ত করকরে কীভাবে নিহত হন
মুম্বই হামলায় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে হেমন্ত করকরে শহিদ হন। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় ১৬০ জন মানুষ নিহত হন। ৬০০ জন জখম হন। ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস (CST) স্টেশনে সন্ত্রাসবাদী হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে যান হেমন্ত করকরে। একটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং একটি হেলমেট পরেই চলে যান তিনি। দ্রুত ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে যান। এরপর তাঁকে বলা হয়েছিল যে সন্ত্রাসবাদীরা আজাদ ময়দান থানার পাশে কামা হাসপাতালের দিকে গেছে। পরে সন্ত্রাসবাদীদের চিহ্নিত করা হয়। গুলির লড়াইয়ে হেমন্ত করকরে এবং তাঁর সহকর্মী অশোক কামতে, বিজয় সালাস্কার এবং অন্যা কনস্টেবলরা শহিদ হন। একমাত্র কনস্টেবল অরুণ যাদব গুলি লাগার পর প্রাণে বেঁচে যান।
হেমন্ত করকরের মৃত্যু সংক্রান্ত বিতর্ক
হেমন্ত করকরেন মৃত্যু নিয়ে নানা সন্দেহজনক বিতর্ক আছে। তার মধ্যে একটি হল শরীরে পাওয়া গুলির উৎস সম্পর্কিত। গুলির উৎস অনুপস্থিত ছিল। এছাড়া জল্পনা ছিল যে তাঁকে একটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট দেওয়া হয়েছিল, যদিও সেই দাবি পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এটাও বলা হয়েছিল যে তার শরীরে পাওয়া গুলি আর সন্ত্রাসবাদীদের চালানো গুলি এক ছিল না। সেই সময়ের আরেকটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হল গুলির লড়াইয়ে হেমন্ত করকরেকে হত্যা করেনি আজমল কাসব ও আবু ইসমাইল।