নতুন দিল্লি, ৯ নভেম্বর: অযোধ্যার (Ayodhya) বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির (Ram Temple) হবে। মসজিদ তৈরির জন্য বিকল্প ৫ একর জমি পাবে মুসলিমদের পক্ষের 'সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড' (Sunni Waqf Board)। অযোধ্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ (Chief Justice of India Ranjan Gogoi)-এর নেতৃত্বে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শনিবার এই রায় দিয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় বলে জানা যাচ্ছে। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির। রায় পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, বিতর্কিত মূল বিতর্কিত জমি পাবে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’ (Ram Janmabhoomi Nyas)। এই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই। তবে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে মূল জমি। কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, তারও পরিকল্পনা করবে ট্রাস্ট।
অযোধ্যা মামলার রায় ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ করা হয় দেশজুড়ে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সোমবার পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি ও কর্নাটকে স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা অযোধ্যা মামলার রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। প্রত্যেকেই শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন করেছেন। বিরোধী নেতারাও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জড়িত সব পক্ষকে শীর্ষ আদালতের রায় মেনে নেওয়ার আবেদন জানান। আরও পড়ুন: Ayodhya Verdict Highlights: একনজরে অযোধ্যা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়
কে কী বললেন:
- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি: সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে। এই রায় কারও জয় বা পরাজয় হিসেবে দেখা উচিত নয়। রাম-ভক্তি হোক বা রহিম-ভক্তি, ভারত-ভক্তির চেতনা জোরদার করার জন্য এটি অপরিহার্য। আমি সকল দেশবাসীকে শান্তি, সম্প্রীতি এবং ঐক্য বজায় রাখতে আবেদন করছি।
- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ: আমি সর্বসম্মতিক্রমে শ্রী রাম জন্মভূমি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাই। আমি সকল সম্প্রদায় এবং ধর্মের মানুষের কাছে এই সিদ্ধান্তটি স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করার এবং শান্তি-সম্প্রীতিতে পূর্ণ 'এক ভারত-শ্রেষ্ঠ ভারত' প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার জন্য আবেদন করছি।
- প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অমিত শাহ: এটি একটি যুগান্তকারী রায়। শান্তি ও শান্তির জন্য জনসাধারণকে আবেদন করছি।
- প্রিয়ঙ্কা গান্ধি: সুপ্রিম কোর্টের রায় সকল দল, সম্প্রদায় এবং নাগরিকদের গ্রহণ করা উচিত। আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের ঐতিহ্যকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
- কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি: সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং রায় দিয়েছে। সবার উচিত এটি গ্রহণ করা এবং শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা।
- বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার: সুপ্রিম কোর্টের রায় সকলেরই স্বাগত জানানো উচিত। এটি সামাজিক সম্প্রীতির জন্য উপকারী হবে। এই বিষয়ে আর কোনও বিতর্ক না হওয়া উচিত, এটিই জনগণের কাছে আমার আবেদন।
- কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা: সুপ্রিম কোর্টের রায় এসেছে, আমরা রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে আছি। এই রায় কেবল মন্দিরের নির্মাণের দ্বারই উন্মুক্ত করেনি। বিজেপি এবং অন্যদেরও এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
- RSS চালক মোহন ভাগবত: সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এই মামলা কয়েক দশক ধরে চলছিল এবং এটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। এটিকে জয় বা পরাজয় হিসাবে দেখা উচিত নয়। আমরা শান্তি বজায় রাখতে সকলের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই।
- অযোধ্যা মামলায় মুসলিম পক্ষের আইনজীবী ইকবাল আনসারি: আমি খুশি যে সুপ্রিম কোর্ট শেষ পর্যন্ত রায় দিয়েছে। আমি আদালতের রায়কে সম্মান করি।
- সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী জাফরাইব জিলানি: আমরা রায়কে সম্মান জানাই। কিন্তু, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করব। তবে এ নিয়ে কোনওরকম বিক্ষোভ বা প্রতিবাদ হবে না।
- নির্মোহী আখড়ার মুখপাত্র কার্তিক চোপড়া: নির্মোহী আখড়া কৃতজ্ঞ যে গত দেড়শ বছরের আমাদের লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রামমন্দির নির্মাণে ট্রাস্টে পর্যাপ্ত প্রতিনিধি রাখার সুযোগ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
- হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ কুমার সিনহা: : এটি ঐতিহাসিক রায়। এই রায় দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে।
- বাবা রামদেব: এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। তৈরি করা হবে একটি বড় রাম মন্দির। মুসলিম পক্ষকে বিকল্প জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। আমি মনে করি হিন্দু ভাইদেরও মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করা উচিত।
- আসাদউদ্দিন ওয়াইসি: রায় নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। সুপ্রিম কোর্ট প্রকৃতপক্ষে সুপ্রিম, কিন্তু তার রায় ফলপ্রসূ নয়। সংবিধানের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়াই করে যাচ্ছিলাম। অনুদান হিসাবে আমাদের ৫ একর জমির দরকার নেই। আমাদের ৫ একর জমির অফার প্রত্যাখ্যান করা উচিত। আমাদের উপহার দিতে হবে না।