ছবিটি প্রতীকী (Photo credits: Pixabay)

ভোপাল, ২০ জুন: ইন্টারনেটকে ধন্যবাদ। কারণ তার সৌজন্যেই দীর্ঘ ৪০ বছর (Four decades) পর নিজের বাড়িতে, পরিজনদের কাছে ফিরলেন ৯৪ বছরের এক বৃদ্ধা। মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) বাসিন্দা পাঁচফুলবাই নামের ওই মহিলা চার দশক আগে নিখোঁজ হয়ে যান। দুর্ভাগ্যক্রমে, বড়ি ফিরে এলেও নিজের ছেলেকে দেখতে পেলেন না বৃদ্ধা। কারণ ৩ বছর আগেই তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তিন দিন আগে বৃদ্ধা নাগপুরে (Nagpur) তাঁর নাতির বাড়িতে পৌঁছেছেন।

১৯৭৯-৮০ সাল নাগাদ একটি ট্রাক চালক মধ্যপ্রদেশের দামোহ জেলায় রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকাা এক মহিলাকে উদ্ধার করেন। ওই ট্রাক চালকের ছেলে ইসরার খান পিটিআইকে বলেছেন, "মহিলা মধুচক্রের শিকার হয়েছিলেন এবং ঠিক ভাবে কথা বলতে পারেননি সেই সময়।" ইসরার খানের বাবা ওই মহিলাকে বাড়িতে নিয়ে যান এবং সেই থেকেই তিনি ওই পরিবারের সাথেই থাকতে শুরু করেন। ইসরার তখন খুবই ছোটো ছিলেন। ইসরার বলেন, "আমরা তাঁকে আচ্চন মাসি বলে ডাকি। তিনি মানসিকভাবে অস্থির ছিলেন এবং মারাঠি ভাষায় বিড়বিড় করতেন, যা আমরা বুঝতে পারতাম না। আমি মাঝে মাঝে তাঁকে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম, তবে তিনি কিছুই বলতে পারতেন না।" খান তাঁর সম্পর্কে ফেসবুকেও লিখেছিলেন, তবে কোনও ফল হয়নি। আরও পড়ুন: National Selfie Day 2020: আগামীকাল জাতীয় সেলফি দিবস, দেখুন বেশ কয়েকটি ভাইরাল সেলফি

ইসরার জানিয়েছেন, মহিল একবার খান্জমা নগর নামে একটি জায়গা সম্পর্কে কথা বলতেন। গুগলে সার্চ করেও কোনও ফল পাওয়া যায়নি। তারপরে এই বছরের ৪ মে আমরা লকডাউনের সময় বাড়িতে থাকাকালীন তাঁকে আবার বাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। এবার তিনি পার্সাপুর নামে একটি জায়গার কথা বলেন। গুগল করে দেখা যায় মহারাষ্ট্রে একটি পরাশপুর নামে গ্রাম রয়েছে। এরপর ইসরার অভিষেক নামে এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করেন। যিনি পরাশপুরে একটি দোকান চালান এবং তাঁকে মহিলার কথা জানান। কিরার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত অভিষেক তাঁকে বলেছিলেন যে শহরের কাছে খান্জমা নগর নামে একটি গ্রাম আছে।

ইসরারের কথায়, "আমি তাকে ৭ মে রাত সাড়ে আটটায় মাসির ভিডিয়ো পাঠায় অভিষেককে, উনি সেটা কিরার সম্প্রদায়ের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেছেন। আমি মধ্যরাতের দিকে অভিষেকের কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছিলাম। তিনি বলেন যে মহিলাকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাঁর পরিজনরা চিনতে পেরেছেন।" বৃদ্ধা মহিলার একটি ভিডিয়ো নাগপুরের বাসিন্দা পাঁচফুলবাইয়ের নাতি পৃথ্বী ভাইয়ালাল শিংগানকে পাঠানো হয়েছিল। শিংগানে পরিবারের হতবাক হয়ে যান। তাঁরা তাঁকে বাড়িতে আনতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু লকডাউনের কারণে দেরি হয়। অবশেষে ১৭ জুন শিংগান তাঁর ঠাকুমাকে বাড়ি নিয়ে যান। বৃদ্ধার পুরো নাম পাঁচফুলবাই তেজপালসিং শিংগান।

ইসরার পিটিআইকে বলেছেন, "আমরা মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার অচলপুর তহসিলের খান্জমা নগরের বাসিন্দা, তবে পরিবার পাঁচ দশক আগে নাগপুরে চলে এসেছিল। ১৯৭৯ সালে আমার বাবা আমার ঠাকুমাকে তাঁর মানসিক অসুস্থতার চিকিত্সার জন্য নাগপুরে নিয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসকরা তাঁকে নিরাময়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন। তবে একদিন তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ছেড়ে চলে যান। প্রতিবেশীদের বলেছিলেন যে তিনি তাঁর বাপের বাড়ি যাচ্ছেন। সেই থেকেই চিরতরে হারিয়ে যান। আমার বাবা বহু বছর ধরে তাঁর মাকে খাঁজার চেষ্টা করেছেন। যদিও পারেননি। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। তিন বছর আগে আমি যদি তাঁকে খুঁজে পেতাম তবে অনেক ভালো হত। "