একলা চলার পথে জীবন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায়। কখনও তা জীবন মরণ সমস্যাতে গিয়েও ঠেকে। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, ব্যর্থতা, একাকিত্ব জীবনের এক একটা ক্ষণকে বেদনাদায়ক করে তোলে। প্রচন্ড অসহায় করে তোলে। জীবন মানেই সংঘর্ষ। নিজের সঙ্গে নিজের সংঘর্ষ, নিজের সঙ্গে সমাজের সংঘর্ষ, সমাজের সঙ্গে নিজের সংঘর্ষ, সম্পর্কের সঙ্গে সংঘর্ষ। কিন্তু দিনের শেষে আমাদের একটা জিনিসই বাঁচিয়ে রাখে, তা হল আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসই ঠিক করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে বাঁচব না মরে যাব। যে মুহূর্তে আত্মবিশ্বাস ভঙ্গ হবে মৃত্যু অনিবার্য। তা শারীরিকভাবে হোক কিংবা মানসিক।
'চোখ' (I See) আত্মবিশ্বাসের গল্প কিংবা আত্মজাগরণেরও বলা যেতে পারে। ছবির প্রথম দৃশ্যের কয়েক সেকেন্ডের ফ্রেমটি শরীরের ডান দিক থেকে বাঁ দিকের দোলাচল যেন অসহায়তার স্ফুলিঙ্গ মাত্র। সমুদ্রের গর্জন যেন জানান দিচ্ছে কোনও অশনি সঙ্কেতের। স্বপ্নের দুনিয়া থেকে যখন বাস্তবের দুনিয়ায় প্রবেশ হল, প্রোটাগনিস্টকে দেখা গেল গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতে। পাশে পড়ে থাকা ঘুমের ওষুধ, ছুরি কি তবে আত্মবিশ্বাসকে চুরমার করে দেবে?
স্বপ্নে ফের তাঁর জীবনের সমস্যাগুলো কবাডির মতো ছোঁয়াছুয়ি খেলা খেলছে। কিন্তু চরম ব্যর্থতা। সমস্যাগুলিকে ছুঁয়ে জাপটে জড়িয়ে যে বেঁধে রাখা যায় না-তা তো সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই আসবে যাবে। কখনও উত্তাল হবে, কখনও প্রশান্ত, তবে স্থির নয়।
'চোখ' বোধোদয়ের গল্প। আমাদের দু'চোখ যা দেখে তা যাচাই করে মন। আর তৃতীয় চোখ অদৃশ্য সত্যিগুলি আমাদের দেখিয়ে দেয়। তা হতে পারে সজ্ঞানে কিংবা বোধে অথবা মননে। জীবনকে উপভোগ করা নির্ভর করে নিজের ওপর। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কমবেশি টানাপোড়েন থাকে। সেটা কেউ কেউ অনুভব করতে পারে, কেউ পারে না। এখানে এই ছেলেটি তার সমস্ত টানাপোড়েন, একাকিত্ব, ব্যর্থতাগুলো নিজেই অনুভব করতে পারে। আবার সেগুলোকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায়। তাই কাগজের নৌকা বা কবাডি খেলার প্রসঙ্গ, এগুলোর সঙ্গে আমাদের ছোটোবেলা জড়িয়ে আছে। বড়ো বয়স আর ছোটো বয়সের দ্বন্দ্ব সে বোঝার চেষ্টা করছে। তাই বারবার সে সমুদ্রের মতো বিস্তৃত জায়গায় নিজেকে মেলে ধরছে। তাই তো লাল, নীল রং বেরঙের নৌকার মতো ভেসে গিয়েও ফিরে আসে প্রোটাগনিস্ট। দাঁড়িয়ে থাকার সাহস যোগায় কাগজের নৌকা। আত্মহনন লড়াইয়ের পথ হতে পারে না তা "গুহার মতো অন্ধকার" বুঝতে পারে সে।
জীবনকে দু'চোখ মেলে উপভোগ করতে হয়। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, ব্যর্থতা, একাকিত্বের কিংবা সমস্যার সঙ্গে একা লড়াই করতে হয়। ছবির ভাষায় বলতে গেলে, 'বুড়ো আঙ্গুলটা রয়েছেই মুঠো করে ধরার জন্য'। মুষ্টি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় আর শত শত মুষ্টি একত্র হলে বিপ্লব আসে। অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখায় 'চোখ'। বেরঙিন জীবনে রং এনে দেয়, একাকিত্বকে জয় করার গল্প বলে দেয়।
'চোখ' শর্টফিল্মটির (Short Film) পরিচালক এবং প্রযোজক প্রতীক দে চৌধুরী। প্রথম কাজ হিসেবে তাঁর পরিচালনা বেশ প্রশংসাযোগ্য। ছবির প্রোটাগনিস্ট সুমন সাধু। একাকিত্বের চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে তাঁর অভিনয় শৈলী প্রশংসনীয়। চিত্রনাট্য এবং স্ক্রিপ্টে সুমন সাধু এবং অলোকপর্ণা, সম্পাদক রাজর্ষি মজুমদার, কালারিস্ট কেনিথ সাইরাস, সুপ্রিয় মিত্রের আবহ সংগীত এবং শব্দে সায়ন্তন ঘোষের যৌথ প্রয়াসে ছবিটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
ইংল্যান্ডের 'ফার্স্ট টাইম ফিল্মমেকার সেশনস', ইংল্যান্ডের 'লিফট-অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল', সান ফ্রান্সিসকোর 'ফ্লিকফেয়ার' — এই তিনটে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যাল। আর আগামী ১৭-১৮ অক্টোবর কলকাতার 'অঙ্কুর ২০২০- ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ডক্যুমেন্টারি অ্যান্ড শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল'-এ দেখানো হবে। ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ফ্রি স্ট্রিমিং-এ দেখা যাবে পকেটমানি ফিল্মস-এ।