ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্মবার্ষিকী(Photo Credits: Twitter)

আজ এক ঋতুর জন্মদিন। উনিশে এপ্রিল দিয়ে শুরু যাঁর যাত্রাপথ। নারীর অন্তরমহলে বিরাজ করেন যে পরিচালক (Director), তিনিই ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno Ghosh)। 'দহন','উৎসব','বাড়িওয়ালি','রেইনকোট','চিত্রাঙ্গদা', নারীর অন্তরের বহিঃপ্রকাশ পর্দায় ফুটে উঠেছে তাঁর ছবির মধ্যে দিয়ে। নারীকেন্দ্রিক ছবির এক ধারা খুলে দিয়েছিলেন  পরিচালক ঋতুপর্ণ।

ঋতুপর্ণ ঘোষের হাত ধরে বাংলায় আসল বিশ্বায়ন। বলিউডের খ্যাত বিখ্যাত অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দেখা গেল টলিউডের রুপোলি পর্দায়। মধ্যবিত্ত বাঙালিকে হলমুখো করলেন এই পরিচালক। আরও পড়ুন, প্রয়াত হলিউড অভিনেতা চ্যাডউইক বোসম্যান

এক সময়ে ঋতুর পরিবর্তন হল। সমাজের ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের সত্তা তুলে ধরলেন জীবনে ও পর্দায়। কোঁকড়া চুল আর গোল চশমার ঋতু হলেন অলংকারে সুসজ্জিতা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠল তাঁর 'লিঙ্গ' নিয়ে। শিল্পীর সৃষ্টির থেকে বড় হয়ে গেল তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। চারিদিকে তাঁকে নিয়ে গুঞ্জন। ঋতুপর্ণ কি সমকামী? ক'জন পুরুষ বন্ধু রয়েছন তাঁর?

নানা প্রশ্নের মধ্যেই তিনি অভিনয় করলেন মেমোরিজ ইন মার্চ, আরেকটি প্রেমের গল্পে। বাঙালির বিবেককে দংশন করল ছবিগুলি। ছবিগুলি নিয়ে বাঙালি মনে নানান চাপানউতোর। স্বাভাবিকভাবে নিয়মের উল্টো দিকে হাঁটলে গুঞ্জন তো হবেই।

তিনি বুঝতে শিখিয়েছিলেন, প্রেমের কোনও লিঙ্গ হয় না। তাঁকে কোনও বাঁধনে বাধা যায় না। নারী পুরুষের প্রেমের চেনা ছকটাই একটি সম্পর্ক নয়। এর বাইরেও প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাঙালির সমাজের উল্টোস্রোতে ভাসতে অনেক বেগ পেল। সত্যের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালো সমাজ। সেই সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখালো 'চিত্রাঙ্গদা' (Chitrangada)-একটি ইচ্ছের গল্প। যেখানে রুদ্রর সত্তার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালো তাঁর পরিবারই। সমাজ তো অনেক দূরের কথা। জন্মদাতা মা, বাবাই ছেলের সত্তা মেনে নিতে পারেন না, লজ্জা পান। পুরুষের, পুরুষের প্রতি ভালোবাসার জন্য নারী শরীর না থাকলে ভালোবাসা কি যায় না? তাই রুদ্রকে যেতে হয় জেন্ডার চেঞ্জের অপারেশন থিয়েটারে?

ভাবতে শিখিয়েছিলেন তিনি। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ খুলে দিয়ে গেলেন একটি অন্য ধারা। সমাজের উল্টোস্রোতে বয়ে এক নির্ভীকতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনিই।

পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে অনেক শুভেচ্ছা। দিনের তারা হয়ে তিনি রয়ে যাবেন, মানুষের মনে আর বিপ্লবে।