
হাসপাতালের বেডে শুয়ে একাধিকবার বয়ান বদলেছিলেন তিনি। তবে প্রণয় দে-র নাবালক ছেলে সুস্থ হতেই সত্যিটা বেরিয়ে আসে। অবশেষে কার্যত চাপে পড়েই ট্যাংরাকাণ্ডের অভিশপ্ত রাতে কী ঘটেছিল তা স্বীকার করলেন প্রণয়ের ভাই প্রসূন দে। তারপরেই ট্যাংরায় (Tangra) অতুল সূর রোডের বাড়িতে ১৭ ফেব্রুয়ারির রাত থেকে ঠিক কী কী ঘটেছিল, সেই রহস্যের জট অনেকটাই খুলে গেল। এদিন পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিলেন দে পরিবারের ছোটছেলে প্রসূন দে। নিজের মেয়ে, বৌয়ের পাশাপাশি বৌদিকে তিনি যে নিজেই খুন করেছেন তা স্বীকার করে নিয়েছে সে।
অভিশপ্ত রাতে পর্যায়ক্রমে কী ঘটেছিল, জানালেন প্রসূন দে
জানা যাচ্ছে, ১৭ ফেব্রুয়ারির রাতে পরিকল্পনা মাফিক ঘুমের ওষুধ ও প্রেসারের ওষুধ হামানদিস্তায় গুড়ো করে পায়েস ও মিষ্টিতে মেশিয়ে তা সকলে মিলে খায়। কিন্তু রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ঘুম ভেঙে যায় প্রসূনের। স্ত্রী রোমিকেও ঘুম থেকে তুলে দেয়। দাদা প্রণয় দে-র ঘরে গিয়ে দেখে তাঁদের ঘুম ভেঙেছে। অন্যদিকে প্রতীপ ও প্রিয়ম্বদাও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল। বাড়ির বড়রা ড্রইংরুমে এসে বুঝতে পারে যে ঘুমের ওষুধ কাজ করেনি। তখনই পরিকল্পনা করা হয় খুনের। তবে চারজন যদি আগে খুন করে তাহলে বাচ্চারা বেঁচে যাবে। সেই কারণে স্ত্রীর কথায় আগে নিজের মেয়েকে খুন করতে যান প্রসূন।
প্রথমে খুন হয় মেয়ে প্রিয়ম্বদা
প্রসূন বলেছেন, মেয়ে ঘুমোচ্ছিল তাই সন্তর্পনে মেয়ের স্টাডি টেবিল থেকে একটি পেপার কাটিংয়ের ছুরি নিয়ে খুন করতে এগিয়ে যায় সে। রোমি তাঁর পা চেপে ধরেন, তারপর মেয়ের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হাত কাটে প্রসূন। খুন করার পর মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে আসে সে। এরপর নিজের স্ত্রীয়ের হাত কাটে সে। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ না হওয়ায় রোমিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে গলার নলি ছুরি দিয়ে কেটে দেয়। কিছু সময় ঘরে বসে স্ত্রীয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দাদা প্রণয়ের ঘরে যায় প্রসূন।
স্ত্রী-মেয়েকে খুন করে বৌদিকে খুন করেন প্রসূন
রক্তাক্ত ছুরি দেখে রোমি ও প্রিয়ম্বদার দেহ দেখতে যান সুদেষ্ণা দে। তারপর দেওরকে নিজেই বলে রোমির মতো তাঁকেও যেন মেরে ফেলা হয়। এরপর সুদেষ্ণাকেও খুন করে সে। এদিকে প্রণয়ের নাবালক ছেলে তখন বাড়ির তিন সদস্যের মৃতদেহ দেখে ঘাবড়ে যায়। তারপরেও কাকা তাঁর হাতের শিরা কাটে। কিন্তু তাতেও কিছু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে গলার নলি কাটতে যায়। তখন বাবা, কাকাদের কাছে কাঁদতে কাঁদতে আর্জি জানায় যে তাঁকে যেন না মেরে ফেলা হয়। তারপরেই নাবালককে খুন করার পরিকল্পনা বাতিল করে।
সিটবেল্ট খুলে গাড়ি চালিয়েছিল প্রসূন ও প্রণয়
এরপর প্রসূন ওপরে গিয়ে রক্তমাখা হাত ধুয়ে জামাকাপড় পরিবর্তন করে আবারও প্রণয়ের সঙ্গে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেটিও সফল না হওয়ায় নাবালককে নিয়ে দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হন। এমনকী গাড়ি যখন অভিষিক্তা মোড়ের পিলারে ধাক্কা খায়, তার আগে নিজেদের সিটবেল্টও খুলে ফেলেন প্রণয় ও প্রসূন। ভাবে যে সিটবেল্ট খুললে এয়ারব্যাগ খুলবে না। কিন্তু গাড়ির টেকনোলজি উন্নত হওয়ায় এয়ারব্যাগ বেরিয়ে আসে এবং বেঁচে যায় দুজনে।