কলকাতা, ১ জুন: মাতৃত্বের কোনও নাম হয় না। হয় না কোনও সংজ্ঞাও। তাইতো করোনা ত্রাসের মধ্যেই হাসপাতালে সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করালেন নার্স। প্রসবের পরেই ওটিতে চলছে টানা সি সেকশন। রাত বাড়ছে, বাড়ছে চিন্তাও। এদিকে মাতৃ জঠর থেকে বেরিয়ে উপস্থিতি জানান দিয়েছে নবজাতক। ধীরে ধীরে তার কান্না তিব্র হচ্ছে। কতক্ষণই বা সেসব শুনে চুপ করে থাকা যায়। তাই সমস্ত রকমে সুরক্ষার বন্দোবস্ত করে একরত্তিকে স্তন্যপান করাতে এগিয়ে এলেন হাসপাতালের রিজার্ভে থাকা নার্স উমা অধিকারি। যেখানে করোনা সচেতনতায় প্রসূতির কোভিড-১৯ পরীক্ষা জরুরি। সেখানে একজন নার্স কীকরে সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করান? প্রশ্ন উঠতে পারে, আঁচ করেই প্রমাণ স্বরূপ সেলফিও তুলে রেখেছেন তিনি।
ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার রাতের আরজি কর হাসপাতালের (RG Kar Hospital) ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডের। আর ও নার্সের নাম উমা অধিকারী। সাধারণত মা অসুস্থ থাকলে সদ্যোজাতকে স্তন পান করান সেই সময় ওয়ার্ডের অন্য কোনও নতুন মায়েদের একজন। কিন্তু এখন করোনার থাবায় সেসব বন্ধ। কার থেকে সংক্রমণ ছড়াবে কেউ জানে না। এই মুহূর্তে সেখানে আট জন নতুন মা থাকলেও ক্রন্দনরত শিশুটিকে দুধ খাওয়াতে পারেননি কেউ। এদিকে আটমাস আগেই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েচেন উমা অধিকারী। করোনার ভয়াবহতা ছড়ানোর আগেভাগে ম্যাটারনিটি লিভ শেষ করে হাসপাতালের কাজে ফিরছেন। সদ্যোজাতর কান্না তাঁর সহ্য হল না। তাই সমস্ত নিয়মবিধি মেনেই তাঁকে দুধ খাইয়ে পরিস্থিতির সামাল দিলেন তিনি। আরও পড়ুন- PM Narendra Modi ‘আমাদের করোনা যোদ্ধারা অপরাজেয়, তাঁদের প্রতি কোনওরকম হেনস্তা হিংসা বরদাস্ত করা হবে না’ সাবধান করলেন প্রধানমন্ত্রী
বলাবাহুল্য, এই নার্স নিজেও করোনাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশীদের হেনস্তার মুখে পড়ছেন। বেশকিছু দিন আগে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরেন, তখন তাকে পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পুলিশের সাহায্য নিয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছাতে হয়। যেখানে বৃদ্ধা মা, স্বামী ও তাঁর দুধের শিশু রয়েছে। সবাইকেই থার্মাল স্ক্রিনিং করে প্রমাণ দিতে হয়েছিল যে তাঁরা কেউ মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত নন। চিকিৎসকের শংসাপত্র দেখিয়েই বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ পান তিনি। এদিনও যখন সদ্যোজাতকে দুধ পান করাচ্ছেন, তখন বাড়ি থেকে স্বামীর ফোন আসে। বলা হয়, আট মাসের একরত্তি কিছুতেই মাকে না দেখে ঘুমোবে না। তাই ভিডিও কলে একবার ছেলেকে দেখুন তিনি। ফোনটা ধরতে পারেননি ওই নার্স। এসএমএস করে স্বামীকে জানান তিনি এক সদ্যোজাতকে স্তন পান করাচ্ছেন। বাড়িতে ফেরার পর স্বামী আতঙ্কিত হয়ে পড়লে উমাদেবী আশ্বস্ত করেন, তিনি সুরক্ষা নিয়েই সমস্ত কাজ করেছেন।