JNU Violence: রাতভর ধর্নায় গৃহবধূরা! নাগরিক আইনের আঁচে পার্ক সার্কাস যেন শাহিনবাগ

শীতের দুপুরে রোদ পড়ে আসছিল। ঠান্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছিলেন ওঁরা। কিন্তু সেই কাঁপুনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে পাশাপাশি বসে জোর গলায় ওঁরা গাইছিলেন ‘সরফারোশি কি তমন্না (Sarfaroshi Ki Tamanna)।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের আগে এঁরা যে পরস্পরকে চিনতেন, তা-ও নয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে পর্যন্তও এঁরা ভাবতে পারেননি এমনভাবে কখনও বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে তাঁরা পার্ক সার্কাস ময়দানে (Park Circus) এসে প্রকাশ্যে আন্দোলনে সামিল হবেন। গতকাল থেকে পার্ক সার্কাস ময়দানে যারা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। কোনও জনকল্যাণকর সংস্থার নিয়মিত কর্মীও নন। তাঁরা সাধারণ ঘরের গৃহবধূ।

পার্ক সার্কাস (Photo Credits: Wikipedia)

কলকাতা, ৮ জানুয়ারি: শীতের দুপুরে রোদ পড়ে আসছিল। ঠান্ডা হাওয়ায় মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছিলেন ওঁরা। কিন্তু সেই কাঁপুনি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে পাশাপাশি বসে জোর গলায় ওঁরা গাইছিলেন ‘সরফারোশি কি তমন্না (Sarfaroshi Ki Tamanna)।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের আগে এঁরা যে পরস্পরকে চিনতেন, তা-ও নয়। কিন্তু কয়েকদিন আগে পর্যন্তও এঁরা ভাবতে পারেননি এমনভাবে কখনও বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে তাঁরা পার্ক সার্কাস ময়দানে (Park Circus) এসে প্রকাশ্যে আন্দোলনে সামিল হবেন। গতকাল থেকে পার্ক সার্কাস ময়দানে যারা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। কোনও জনকল্যাণকর সংস্থার নিয়মিত কর্মীও নন। তাঁরা সাধারণ ঘরের গৃহবধূ।

অজানা, অপরিচিত এই ‘সাধারণ’ গৃহবধূদের (Housewife) মঙ্গলবার দুপুরে মিলিয়ে এক করে দিয়েছিল যে ঘটনা, আপাতত গোটা দেশ তাতে উত্তাল। পথে নেমে সংশোধিত নাগরিক আইন এবং নাগরিক পঞ্জীকরণ ও এনপিআর-এর প্রতিবাদ করতেই এ দিন পার্ক সার্কাস ময়দানে এক হয়েছিলেন প্রায় ৭০ জন মুসলিম গৃহবধূ। দিল্লির শাহিন বাগ থেকে কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দান, দুই জায়গার মধ্যের দেড় হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব যেন মুহূর্তেই গায়েব। পার্ক সার্কাস ময়দান তখন কলকাতার (Kolkata) শাহিন বাগ। আগাম কোনও পরিকল্পনা ছিল না। মঙ্গলবার দুপুর থেকে নিতান্ত মুখে মুখেই রটে গিয়েছিল পার্ক সার্কাস ময়দানে জমায়েতের কথা। কিছুক্ষণের মধ্যে বিপুল উৎসাহে সেখানে জমা হতে শুরু করেন মুসলিম গৃহবধূরা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারও হাতে ব্যানার পোস্টার। মুখে স্লোগান। কেউ বেরিয়ে এসেছেন সদ্য হাঁটতে শেখা সন্তানের হাত ধরে। কারও বা কোলে শিশু। কেউ ভালো করে চলতে পারেন না --- সঙ্গীর কাঁধে ভর করে এসেছেন প্রতিবাদ জানাতে। কলেজ স্ট্রিট, তালতলা, তোপসিয়া, তিলজলা, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস --- শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে জমা হতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। জমায়েতের মূল উদ্যোক্তা আসমাত জামিল। তিলজলা অঞ্চলের এই সমাজকর্মী আদতে একজন গৃহবধূ। মঙ্গলবারের জমায়েত নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, তাঁর ‘আচ্ছে দিন’ ফেরত নিয়ে আমাদের সেই পুরনো ‘খারাপ দিন’ ফিরিয়ে দিন। আমরা তাতেই ভালো থাকব। তবে আজ এখানে সারা রাত এমন প্রতিবাদ চলবে।’ আরও পড়ুন: JNU Violence: ‘ঐশীর মাথায় রক্ত নয়, রং দেওয়া হয়েছিল৷’ মন্তব্য বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের

কলেজ স্ট্রিটের নুরজাহান জুনাইদ, তালতলার সুব্বুই আজিজ ও পার্ক সার্কাসের নাজো বেগম তো পরিষ্কার বললেন, ‘আমরা সবাই ভারতীয় (Indian)। হঠাৎ করে কোনও তুঘলকের কাছে আমাদের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে রাজি নই। কারও যদি দরকার থাকে, তবে তিনি প্রমাণ করুন আমি ভারতীয় নই। সারা রাতের প্রতিবাদে আমরা আছি।’ এই সময়ের খবর অনুযায়ী, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, নাগরিক পঞ্জীকরণ ও এনপিআর-এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত স্লোগান দিতে থাকা শাহিন হুসেন সঙ্গে এনেছিলেন তাঁর ছ’ বছরের ছেলেকে (Son)। একবছরের শিশু ও শাশুড়ি ফিরদৌসিকে সঙ্গে নিয়ে জমায়েতে এসেছিলেন নিলোফার সাদিকও। দু’জনেই বললেন, ‘এটা আমাদের সবার অস্তিত্বের লড়াই। ছোট বলে ওদের বাইরে রাখা যাবে না। বিপদ তো ছোটদের কোনও ছাড় দেবে না। তাই ওদেরও থাকতে হবে।’



@endif