বারাসত, ২১ নভেম্বর: ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। দিনটা ওদের কাছে ছিনিয়ে নেওয়া জয়ের দিন। সমাজের একাংশ মানুষের ধারণার মূলে কুঠারাঘাত করার দিন। ওঁরা সমকামী (Gay)। নিজেদের ভালোলাগার...ভালোবাসার কথা যাদের বলতে হত পিছনে...আড়ালে...আবডালে। কিন্তু আইনিভাবে বৈধতা পেলেই যে কিছু মানুষের বদ্ধপরিকর ধারণা বদলানো যায় না এমনটা ভেবে উঠতে পারেননি উত্তর চব্বিশ পরগণার শুভঙ্কর রায় (Shuvankar Roy)। বাবা-মায়ের বাধ্য হিসেবেই নিজেকে মনে করতেন তিনি। তাই আমতা-আমতা করে হলেও নিজের সমকামিতার কথা জানিয়ে ফেলেন। পরিবারের কাছে বিষয়টা মেনে নেওয়া যে খুব সহজ হবে এমন ধারণা শুভঙ্করের ছিলনা। কিন্তু তাই বলে বাধ্য সন্তানের এমন পছন্দ শুনে তাঁর পিছনে ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে দেবেন জন্মদাতা তা ঘুণাক্ষরেও ধারণায় রাখেননি তিনি।
সমকামিতার কথা বাড়িতে জানাতেই কয়েকদিন পর থেকেই তাঁর উপর শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার শুরু করেন বাবা-মা বলে অভিযোগ শুভংকরের। শুভঙ্করের কথায়, “ওঁরা আমাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান। তিনি পরিষ্কার বলে দেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ এবং আমার যৌন পছন্দের ব্যাপারটা কোনও অসুখ নয়। বাবা-মা এ কথায় খুশি হননি। ওঁরা বলতে থাকে আমি অসুস্থ। আমার প্রতিটা পদক্ষেপ নজরে রাখা শুরু হয়।” কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন শুভংকর। শুভংকরের বয়ফ্রেন্ড বিরাট দে'র বয়স ২৯। তিনি আরও বলেন, “আমার দিনটা ভাল যাচ্ছিল না। আমার বয়ফ্রেন্ড আমাদের সম্পর্ক নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। ও বলেছিল আমি যদি ব্যাপারটা না জানাই তাহলে আমি কোনও দিন সম্পর্ক নিয়ে সৎ হতে পারব না। সে কারণেই আমি এত বড় ঝুঁকিটা নিই।" এরপর শুভংকরের বাবা-মা সম্বন্ধ করে তার বিয়ে (Marriage) দেওয়ার জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। কিন্তু শুভঙ্কর তাদের সাফ জানিয়ে দেন, এরকম সম্পর্ক আমি আমার বয়ফ্রেন্ড (Boyfriend) ছাড়া আর কারও সঙ্গে ভাবতেই পারি না। ওর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেলে তার জায়গায় অন্য কোনও ছেলের সঙ্গেই সম্পর্ক হবে আমার। একথা শোনার পরই তাঁর বাবা-মায়ের আক্রোশ আরও বাড়তে থাকে শুভঙ্করের প্রতি। ঘটনার জল এমন জায়গায় গড়ায় যে খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। শুভঙ্করের কথায়, তাঁর বাবা তাঁকে বলেন, ভাড়াটে খুনি (Contract Killer) দিয়ে বিরাটকে খুন করতে উনি পিছপা হবেন না। এরপরেই গত ১৫ নভেম্বর বাড়ি ছেড়ে ট্রান্সজেন্ডার সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিনহার বাড়িতে আশ্রয় নেবেন বলে স্থির করেন শুভংকর। আরও পড়ুন: Fire At Park street Shop: পার্ক স্ট্রিটের কাপড়ের দোকানে ভয়াবহ আগুন, আপাতত নিয়ন্ত্রণে
গত ১৭ নভেম্বর বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বারাসাত থানায় (Barasat Police Station) অভিযোগ দায়ের করেছেন শুভংকর। শুভংকরের বাবা গোপাল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানিয়েছেন “আমরা আদৌ ওকে মারধর করিনি। ওই ওর মাকে মেরেছে। যার জন্য ওর মায়ের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে।”