বাংলায় দিদিকে পরাস্ত করে মোদী ঝড়ে রেকর্ড আসন জিততে প্রার্থী ঘোষণা করল বিজেপি। বাংলার ২০টি আসনে বিজেপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ মোট ৮ জন সাংসদ, ও চারজন বিধায়কের নাম থাকল। বাকি ১১টি কেন্দ্রের মধ্যে দু জন অভিনেতা, দু জন তৃণমূল থেকে আসা নেতারা।
বাংলায় বিজেপির প্রার্থী তালিকায় প্রধান ৬টি চমক হল-
১) আসানসোলে তৃণমূলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সাংসদকে হারাতে বিহারের ভোজপুরী সিনেমার সুপারস্টার পবন সিংকে বিজেপি প্রার্থী করা। আসানসোলে অবাঙালি ভোটারদের মন জিততে বিহারে তারকা হিসেবে পরিচিত অভিনেতা বিতর্কিত পবন সিং দাঁড় করালো বিজেপি। এখান থেকে গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে বাবুল সুপ্রিয় দারুণ জয় পান। বাবুল দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলে, এখানে উপনির্বাচন হয়। সেই উপনির্বাচনে শত্রুঘ্ন সিনহাকে তৃণমূলের টিকিটে রেকর্ড ভোটে জেতেন, পরাস্ত হন বিজেপি-র অগ্নিমিত্রা পাল। তাই বাঙালি মুখ নয়, আসানসোল উদ্ধার ভোজপুরী গায়কই বাজি বিজেপির।
প্রসঙ্গত, ভোজপুরী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সব বড় হিরোই বিজেপি প্রার্থী হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে-এদিনই দিল্লি থেকে ভোজপুরী নায়ক মনোজ তিওয়ারি ও উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর থেকে রবি কিষাণকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে বিজেপির সাংসদ আছেন ভোজপুরী নায়ক দীনেশ লাল যাদব (নিরুহা)।
২) তৃণমূলের সুপারস্টার প্রার্থী দেবের বিরুদ্ধে ঘাটালে বিজেপি প্রার্থী করল টলিউডের নায়ক হিরণকে। হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় বা হিরণ-এর আগে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে দিদি ঝড়ের মাঝেও বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন। দেবে টানা তিনবার জয়ের লক্ষ্যে নামবেন।
৩) কাঁথিতে শিশির অধিকারী গড়ে প্রার্থী করা হল সৌমেন্দু অধিকারী-কে। গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনে কাঁথি থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে আসছেন শিশির অধিকারী। শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু-কে প্রার্থী করে মোদীর পরিবারতন্ত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণায় গেরুয়া শিবিরে চাপ বাড়ল। আসল এই আসন তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিতে অধিকারী পরিবারের দিকেই তাকিয়ে। কাঁথিকে দিব্যেন্দু প্রার্থী হওয়ার পর জল্পনা বাড়ল তমলুকে বিজেপি কাকে দাঁড় করায় তা নিয়ে। কারণ তমলুকে শুভেন্দু দাঁড়ালে, এখানে গতবার তৃণমূলের টিকিটে জেতা তার ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীর কী হবে?
৪) তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা ডাক্তার রথীন চক্রবর্তী-কে হাওড়া থেকে প্রার্থী করল বিজেপি। গত বিধানসভায় হাওড়ার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের প্রার্থী করে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপির। তবু এবার তৃণমূল ছাড়া নেতার ওপরেই ভরসা রাখল গেরুয়া শিবির।
৫) হেভিওয়েটদের নিয়ে কোনও পরিবর্তনের পথে গেল না বিজেপি। রাজ্য থেকে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার, শান্তনু ঠাকুরদের তাদের নিজেদের গড় থেকেই প্রার্থী করা হল। সুভাষ সরকারকে নিয়ে বাঁকুড়া বিজেপিতে একাংশের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও, তাঁর কাজে দলের শীর্ষমহল দারুণ খুশি।
৬) বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী তালিকায় (দিলীপ ঘোষ)-এর মত হেভিওয়েট নেতার কেন্দ্রের নাম নেই। কিন্তু হুগলিতে গতবার দারুণভাবে জেতা লকেট চট্টোপাধ্য়ায়ের নাম থাকল। তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত হয়েছিলেন লকেট।
৭) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার জায়গায় আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী করা হল বিধায়ক মনোজ টিগ্গা-কে।
এক নজরে বাংলায় বিজেপির ঘোষিত ২০ জনের প্রার্থী তালিকা
মন্ত্রীরা-
১) কোচবিহার-নিশীথ প্রামাণিক
২) বাঁকুড়া-সুভাষ সরকার
৩) বনগাঁ- শান্তনু ঠাকুর
সাংসদরা--
৪) বালুরঘাট- সুকান্ত মজুমদার (বিজেপির রাজ্য সভাপতি)
৫) হুগলি-লকেট চট্টোপাধ্যায়
৬) বিষ্ণুপুর-সৌমিত্র খাঁ
৭) রানাঘাট- জগন্নাথ সরকার
৮)পুরুলিয়া-জোর্তিময় মাহাতো
৯) মালদহ উত্তর- খগেন মুর্মু
বিধায়করা
১০) আলিপুরদুয়ার-মনোজ টিগ্গা
১১) মালদা দক্ষিণ- শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী
১২)মুর্শিদাবাদ- গৌরশঙ্কর ঘোষ
১৩) ঘাটাল-হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়
অভিনেতারা-
১৩) ঘাটাল- হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় (হিরণ) (দেবের বিরুদ্ধে)
১৪) আসানসোল-পবন সিং (শত্রুঘ্ন সিনহা-র বিরুদ্ধে)
দলবদলে আসারা-
১৫) হাওড়া-রথীন চক্রবর্তী
১৬) কাঁথি- সৌমেন্দু অধিকারী (শুভেন্দু অধিকারীর ভাই)
অধীর গড়ে
১৭) বহরমপুর- নির্মল সাহা (অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে)
দক্ষিণ ২৪ পরগণায়
১৮) যাদবপুর-অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়
১৯) জয়নগর- অশোক কাণ্ডারী
কেষ্ট গড়ে
২০) বোলপুর-প্রিয়া সাহা
বাদ পড়লেন
জন বার্লা (আলিপুরদুয়ার)