বিশ্বকাপ খেলার ভাগ্য ছিল না-লক্ষ্ণণ, প্রবীণ কুমারদের।

ইংল্যান্ড- ওয়েলশে হতে চলা বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2019) জন্য ক দিন আগেই ভারতীয় দল ঘোষিত হয়। সেই দল ঘোষণার পর সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে আবেগের ঝড় বয়েছিল তিনি ছিলেন আম্বাতি রায়াড়ু (Ambati Rayudu)। রায়াড়ু একটা সময় বিশ্বকাপের দলে থাকা কার্যত নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন, কিন্তু এরপর ফর্ম হারিয়ে নিজের স্থানকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের ৩৩ বছরের এই তারকা ব্যাটসম্যান। শেষ অবধি রায়াড়ুকে রাখা হয়নি বিশ্বকাপ দলে। রায়াডুর পরিবর্তে বিজয় শঙ্কর (Vijay Shankar), দীনেশ কার্তিক (Dinesh Kartik)-দেরই সুযোগ দেওয়া হয়। আসুন এমন সময় দেখে নেওয়া যাক-ভারতের এমন চার তারকা ক্রিকেটার যারা কখনও বিশ্বকাপে না খেলার পিছনে ভাগ্যকে দুষতে পারেন--

৪) প্রবীণ কুমার (Praveen Kumar)

২০১১ বিশ্বকাপে দেশের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলে তুরুপের তাস হওয়ার কথা ছিল প্রবীণ কুমারের। উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচে স্পিনাররা রাজ করেন, তবে পেসারদের হাল খারাপ হয়। এটা চেনা ফর্মুলা। উত্তরপ্রদেশের প্রতিভাবান পেসার প্রবীণ কুমার সেই ফর্মুলাটা বদলে ধোনির দলের তাস হয়ে উঠেছিলেন। প্রবীণের ছিলেন কিপটে বোলার, উইকেটটেকিং বোলার, ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ায়, প্রাথমিক দলে থেকেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়নি তাঁর। প্রবীণের জায়গায় ভারতের বিশ্বকাপ দলে ঢোকেন এস.শ্রীসন্থ। বাকিটা সবার জানা ভারত ২৮ বছর পর ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জেতে। প্রবীণ কুমার সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারতেন। অথচ তিনি পুরো বিশ্বকাপ অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে দেখেন।

৩) পার্থিব প্যাটেল (Parthiv Patel)

২০০৩ বিশ্বকাপ দলে মাত্র ১৮ বছর বয়েসে সুযোগ পান গুজরাটের প্রতিভাবান উইকেটকিপার পার্থিব প্যাটেল। পার্থিবের প্রতিভায় আস্থা রেখে অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি তাঁকে বিশ্বকাপ দলে জায়গা দেন। কিন্তু ব্যাটিংয়ের গভীরতা বাড়ানোর স্বার্থে, রাহুল দ্রাবিড়কে উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাত দাঁড় করান সৌরভ। ফলে পুরো বিশ্বকাপটাই রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটাতে হয় পার্থিবকে। এরপর ভারতীয় ক্রিকেটে এমএস ধোনির আবির্ভাব ঘটে, আর কখনও বিশ্বকাপ দলে থাকার সুযোগ তৈরি করতে পারেননি পার্থিব।

২) আম্বাতি রায়াডু (Ambati Rayudu)

ভারতীয় ক্রিকেটে একটা সময় তাঁকে সবচেয়ে প্রতিভাবান বলে অ্যাখা দেওয়া হয়েছিল। পরে বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগে যোগ দেন বোর্ড তাঁকে নির্বাসন করে। নির্বাসন কাটিয়ে ফিরে এসে রায়াড়ু সেভাবে কিছু করতে পারছিলেন না। কিন্তু এরপর হঠাত্ই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে চমকপ্রদ ফল করে জাতীয় দলে ফিরে আসেন রায়াড়ু। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে রায়াড়ু শুরুটা দারুণ করেন, তারপর ধারাবাহিকতার অভাবে বাদ পড়েন। চড়াই-উতরাই কেরিয়ারে রায়াড়ু এরপর আইপিএলে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করে ফের জাতীয় দলে কামব্যাক করেন। গত এক বছর ধরে অনেকটা সময় তাঁকে দেওয়া হয়। কামব্যাকের শুরুটা দারুণ করেছিলেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল ধোনির দলের চার নম্বর স্থানটা পাকা করে ফেলেছেন রায়াড়ু। কিন্তু এরপর রায়াডু ফর্ম হারান। তবু তাঁর প্রতিভার ওপর আস্থা রেখে রায়াডুকে সুযোগ দিয়ে যান কোহলি। কিন্তু ফর্ম ভারী নিষ্ঠুর জিনিস। একবার হারালে, সেটা সব সময় সঠিক স্থানে ফিরে আসে না। ২০১৯ বিশ্বকাপের দলে থাকা নিশ্চিত করেও, দল নির্বাচনের আগে ফর্ম হারিয়ে বিশ্বকাপে খেলা হল না রায়াড়ুর। ২০২৩ বিশ্বকাপের সময় তাঁর বয়স হবে ৩৭। এরপর রায়াডু আর কখনও বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

১) ভিভি এস লক্ষ্মণ (VVS Laxman)

নিঃসন্দেহে দেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তাঁর নামটা উপরের দিকে থাকবে। বিশ্ব ক্রিকেটের 'ওয়ান্ডার ২৮১'-র নায়ক ভিভি এস লক্ষ্ণণ কখনও বিশ্বকাপে খেলেননি। কারণ লক্ষ্ণণের ব্যাটিং টেস্টে যতটা চলত, ওয়ানডে সেভাবে চলত না। তবু ওয়ানডে-তে লক্ষ্ণণের রেকর্ডটা একেবারে খারাপ নয়। সৌরভ গাঙ্গুলি বারবার লক্ষ্ণণকে ওয়ানডে-তে সুযোগ দিয়েছিলেন। তবে ভিভিএস সেভাবে ওয়ানডে-তে স্পেশাল হয়ে উঠতে পারেননি। লক্ষ্ণণের বিশ্বকাপের দলে থাকার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল ২০০৩ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। কিন্তু একটুর জন্য সেই দলে থাকা হয়নি লক্ষ্ণণের। সৌরভ গাঙ্গুলি-জন রাইঠ জুটি লক্ষ্ণণের পরিবর্তে বেছে নেন অলরাউন্ডার দীনেশ মোঙ্গিয়াকে। দেশের হয়ে ৮৬টা ওয়ানডে খেলে তিন হাজারের বেশি রান করা লক্ষ্মণের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন কখনও পূরণ হয়নি।