প্রতি বছর ২৩ নভেম্বর পালন করা হয় জাতীয় কাজু দিবস। এই দিনটিকে বিশেষ দিন হিসেবে পালনের নিয়ম শুরু হয় আমেরিকায়। কিডনির আকৃতির ড্রাই ফ্রুট কাজু সারা বিশ্বের মানুষ পছন্দ করে। কাজু সরাসরি খাওয়া থেকে রান্নায় ব্যবহার করা পর্যন্ত বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথমবার পালন করা হয় জাতীয় কাজু দিবস। সারা পৃথিবীতে যত ড্রাই ফ্রুট পাওয়া যায় তার মধ্যে কাজুর স্বাদ অনন্য। গুণে সমৃদ্ধ কাজু শরীরে স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল সরবরাহ করে এবং শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে। এছাড়া কাজু বাদাম খেলে মস্তিষ্ক সবল থাকে এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। কাজু একটি বিদেশী ড্রাই ফ্রুট, তবে ভারতের মাটি এবং জলবায়ু এর চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এর ফল ভারতে ব্যাপকভাবে চাষ করে বিদেশে পাঠানো হয় কাজু।

'কাজু' নামটি পর্তুগিজ টুপিয়ান শব্দ 'আকাজু' থেকে এসেছে, যার অর্থ আখরোট থেকেই উৎপন্ন শুকনো ফল। ব্রাজিলের নাটাল, রিও গ্র্যান্ডে দো নর্তে, বিশ্বের বৃহত্তম কাজু গাছের আবাসস্থল। কাজু বাদাম কাঁচা হলে তাদের বাইরের আবরণে অ্যানাকার্ডিক অ্যাসিড থাকে যা ত্বকের জ্বালা নিরাময়ে খুবই সহায়ক। এই কারণেই ইউরোপীয়রা ১৫৫৮ সালে যখন কাজু আবিষ্কার করেছিল, তখন ভেবেছিল যে এটি খাওয়ার উপযুক্ত নয়। পর্তুগিজরা আখরোট পছন্দ করে, তাই তারা ভারতে কাজু নিয়ে এসেছিল। এরপর ভারতে কাজু চাষ করা শুরু হয়। কাজু দ্রুত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের খাদ্য ও বাণিজ্যের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠে।

১৯২০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যখন জেনারেল ফুডস কর্পোরেশন নিয়মিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে পাঠানো শুরু করে কাজু। আমেরিকানরা এটির স্বাদ পাওয়ার পর কাজুর চাহিদা বেড়ে যায়। ১৯৪১ সাল পর্যন্ত, ভারত থেকে বছরে প্রায় ২২ হাজার টনের বেশি কাজু আমদানি করা হয়। ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পছন্দের হল কাজুবাদাম। পুষ্টিগুণে ভরপুর কাজু মিষ্টি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারে ব্যবহৃত হয়। রান্নায় কাজুবাদাম যুক্ত করার পর এর স্বাদ অসাধারণ হয়ে যায়। সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি কাজু স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী। বিশেষ করে কাজুবাদাম হৃৎপিণ্ডের ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখতে উপকারী। কাজু বাদাম খেলে শরীরের মেটাবলিজম ভালো থাকে। কাজুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, পটাসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ উপাদান, যা স্বাস্থ্যকর।

কাজুতে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম থাকে। কাজুতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এতটাই শক্তিশালী যে এটি হৃদরোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। কাজুতে উপস্থিত অলিক অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে সহায়ক। কাজুতে উচ্চ পটাশিয়াম এবং কম সোডিয়াম উপাদানের কারণে কাজুতে রক্তচাপ কম থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। মাইগ্রেন এবং মাথা ব্যথার সমস্যা থাকলে কাজু বাদাম খাওয়া উচিত নয়। কাজুতে খুব বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম এবং সোডিয়াম থাকে, তাই অতিরিক্ত খেলে হার্ট অ্যাটাক ও দুর্বলতার মতো সমস্যা হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণও হতে পারে এটি। এছাড়াও কাজুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।