নবরাত্রি হল একটি প্রধান হিন্দু উৎসব যা বছরে দুবার ভক্তি, উপবাস এবং উৎসবের মাধ্যমে পালিত হয়। প্রথমটি হল চৈত্র নবরাত্রি, যা মার্চ-এপ্রিল মাসে আসে। দ্বিতীয়টি হল শারদ নবরাত্রি, যা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পালিত হয়।এই দুটি নবরাত্রির মধ্যে শারদীয় নবরাত্রি বেশি পালিত হয়। এটি নয় দিন ধরে দেবী দুর্গা এবং তাঁর নয়টি রূপের সম্মানে পালিত হয়। এই উৎসব শেষ হয় দশেরা বা বিজয়াদশমীর মাধ্যমে - যা অশুভের উপর শুভের বিজয়কে চিহ্নিত করে।
শারদ নবরাত্রির পৌরাণিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য-
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, মহিষাসুর নামক এক শক্তিশালী অসুর স্বর্গ এবং পৃথিবীকে ত্রস্ত করে তুলেছিল। দেবতারা যখন তাকে পরাস্ত করতে পারছিলেন না, তখন তাঁরা সকলে মিলে আদিশক্তি দেবী দুর্গাকে আহ্বান করেন। দেবী দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিন ও নয় রাত ধরে যুদ্ধ করেন এবং অবশেষে দশম দিনে তাকে বধ করেন। এই বিজয়ই নবরাত্রির মূল প্রতিপাদ্য। তাই এই নয় দিনে দেবীর নয়টি রূপ—শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রীর পূজা করা হয়। এই পূজা অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার প্রতীক।
আচার ও উদযাপন-
নবরাত্রি উৎসবটি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হয়। গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন উপাচারে পালিত হয় এই উৎসব-
ঘটস্থাপনা: উৎসবের প্রথম দিনে 'ঘাটস্থাপনা' করা হয়, যা একটি পবিত্র কলস স্থাপন করে নবরাত্রির সূচনাকে চিহ্নিত করে। এই কলসটি দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
উপবাস ও প্রার্থনা: বহু ভক্ত এই নয় দিন উপবাস পালন করেন। তাঁরা দেবীর মন্দিরে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করেন এবং দেবীর উদ্দেশ্যে নানা নৈবেদ্য নিবেদন করেন।
গারবা ও ডান্ডিয়া: গুজরাট, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোতে এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হলো গারবা এবং ডান্ডিয়া রাস নৃত্য। পুরুষ ও মহিলারা রঙিন পোশাকে সজ্জিত হয়ে বৃত্তাকারে এই ঐতিহ্যবাহী নৃত্যে অংশ নেন।
দুর্গাপূজা: পশ্চিমবঙ্গে নবরাত্রির শেষ চার দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত দেবী দুর্গার আরাধনা হয়। এটি দুর্গাপূজা নামে পরিচিত, যা বাঙালিদের কাছে সবচেয়ে বড় উৎসব।
কন্যে পূজা বা কুমারী পূজা: নবরাত্রির অষ্টম বা নবম দিনে 'কন্যে পূজা'বা কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়। এই আচারে কুমারী মেয়েদের দেবী রূপে পূজা করা হয় এবং তাদের পা ধুয়ে, নতুন পোশাক ও খাবার প্রদান করে সম্মান জানানো হয়।
শারদ নবরাত্রি এক আনন্দময় উৎসব, যা মানুষকে একত্রিত করে। এই উৎসবের মূল বার্তা হলো, যতই অন্ধকার আর অশুভ শক্তি থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত শুভশক্তিরই জয় হয়। এটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং সাংস্কৃতিক মিলন ও সামাজিক সংহতিরও প্রতীক।