হাতে আর বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। নীলাচলে সুভদ্রা, বলরামকে নিয়ে মাসির বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি জগন্নাথ । সেবায়েতরাও তৈরি।রথ মানেই উৎসব মুখর নীলাচল। দেশ-বিদেশ থেকে আসা তীর্থযাত্রী, পর্যটকদের ভিড়। দুনিয়ার নজর কাড়ে পুরীর রথের বিপুল ভক্ত সমাগম ।চিরাচরিত রীতি মেনে, বিশেষ ধরনের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় তিনটি রথ- জগন্নাথদেবের রথের নাম নন্দীঘোষ, বলভদ্রের তালধ্বজ এবং সুভদ্রার রথ দর্পদলন৷রথে চড়ে মাসির বাড়ি যাত্রা করেন জগন্নাথদেব৷ সঙ্গে থাকেন বলরাম, সুভদ্রা৷। রথের রশিতে টান দেন লক্ষ লক্ষ ভক্ত। এবার জেনে নেওয়া তিনটি রথের বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ-
জগন্নাথদেবের রথের বৈশিষ্ট্যঃ-
জগন্নাথদেবের রথের নাম ‘নন্দীঘোষ’। রথের সারথির নাম দারুক। রথে থাকে ১৬ টি চাকা।জগন্নাথ দেবের রথ নন্দীঘোষ ৪৫.৬ ফুট উঁচু। চাকার পরিধি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি।কথিত আছে, এই রথের নাম দেন স্বয়ং ইন্দ্র। ছোট-বড় আকারের মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে এই রথ নির্মাণ করা হয়।জগন্নাথ দেবের রথের উচ্চতা সাড়ে তেরো মিটার অর্থাত্ ৪৫ ফুট।প্রতিটি চাকারই একটি বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। কথিত আছে, জগন্নাথদেব প্রকট হওয়ার আগে ১৬টি উপাদান দিয়ে পৃথিবী নির্মাণ করেন। চন্দ্রের যে ১৬ কলার কথা আমরা শুনে থাকি, সেটা আসলে চাঁদ ১৬টি কলার পরিক্রমণের মধ্যে দিয়ে একটি কালচক্র সম্পূর্ণ করে। জগন্নাথ দেবের রথের চাকাও সেই ১৬টি কলারই প্রতীক।রথে জগন্নাথদেবের পার্শ্বদেবতা হিসেবে নয়জন দেবতা থাকেন। তাঁরা হলেন, গোপীকৃষ্ণ, গোবর্ধন, রাম, নারায়ণ, ত্রিবিক্রম, বরাহ, রুদ্র, নৃসিংহ এবং হনুমান।
বলরাম দেবের রথের বৈশিষ্ট্যঃ-
বলরামের রথটিকে "তালধ্বজ" বলা হয়, কারণ এর উপরে একটি তাল গাছের চিহ্ন থাকে। এই রথের রং লাল ও সবুজ এবং এর উচ্চতা ৪৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। ৭৬৩টি ছোট বড় কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে নির্মিত এই রথের উচ্চতা ১৩.২ মিটার | দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ৩৩’ x ৩৩”। চাকার সংখ্যা ১৪টি। ধ্বজার নাম উন্মনী এবং রশির নাম বাসুকী নাগ। ন’জন পার্শ্বদেবতা হলেন — গণেশ, কার্তিক, সর্বমঙ্গলা, প্রলম্ব, হলায়ূধ, মৃত্যুঞ্জয়, নাটেশ্বর, মহেশ্বর ও শেষদেব। দ্বারপাল রুদ্র ও সাত্যকি। সারথি মাতলি এবং রক্ষক বাসুদেব।
সুভদ্রার রথের বৈশিষ্ট্যঃ-
সুভদ্রার রথের নাম হল দেবদলন, এর উচ্চতা-১২.৯ মিটার।রথের ধ্বজার/পতাকার নাম নাদম্বিক। ৫৯৩টি টুকরো কাঠ দিয়ে তৈরি এই রথের উচ্চতা ৪২’৩” বা ১২.৯ মিটার এবং দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৩১’৬” x ৩১’৬”। চাকার সংখ্যা ১২। ধ্বজার পাশের পাখি দুটির নাম শ্রুতি ও স্মৃতি। রথটি লাল ও কালো কাপড়ে ঢাকা। ন’জন পার্শ্বদেবী হলেন : চন্ডী, চামুণ্ডা, মঙ্গলা, উগ্রতারা, বনদুর্গা, শূলিদুর্গা, শ্যামাকালী, বিমলা ও বরাহি।
রথযাত্রার পথ-
জগন্নাথ মন্দির থেকে শুরু হয়ে ৩ কিলোমিটার দূরে গুন্ডিচা মন্দিরে পৌঁছায়। এই জায়গাটিকে ভগবানের মাসির বাড়িও মনে করা হয়। অন্য একটি বিশ্বাস অনুসারে, এখানেই বিশ্বকর্মা এই তিনটি মূর্তি তৈরি করেছিলেন, তাই এই স্থানটি ভগবান জগন্নাথের জন্মস্থানও। এখানে তিন দেবতাই ৭ দিন বিশ্রাম নেন। আষাঢ় মাসের দশমীর দিন, সমস্ত রথ আবার মূল মন্দিরের দিকে এগিয়ে যায়। এই ফিরতি যাত্রাকে বলা হয় বহুদা যাত্রা। জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছানোর পর, বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দেবতাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।