প্রতি বছর ১১ নভেম্বর ভারতে পালন করা হয় জাতীয় শিক্ষা দিবস। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে উৎসর্গ করা হয় এই দিনটি। দেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, পণ্ডিত ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদের জন্মদিনে পালন করা হয় জাতীয় শিক্ষা দিবস। এই দিনটি পালন করার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হল শিক্ষার অধিকার এবং শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। প্রতি বছর ১১ নভেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে স্কুল-কলেজে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা সাক্ষরতার গুরুত্ব এবং শিক্ষার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তাদের মতামত ভাগ করে নেয় জাতীয় শিক্ষা দিবসে। অনেক ধরনের সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করা হয় এই দিনে।
স্বাধীনতার পর মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ভালো করেই জানতেন যে জাতি গঠন ও দেশের উন্নয়নে সুশিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায় দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আনার জন্য অনেক বড় পদক্ষেপ নেন তিনি। জাতীয় শিক্ষা দিবসে শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদানকে স্মরণ করা হয়। ১৮৮৮ সালের ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তার পুরো নাম আবুল কালাম মহিউদ্দিন আহমেদ। তার বাবা খায়রুদ্দিন দিল্লিতে থাকতেন, কিন্তু ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের আগে সৌদি আরবে চলে যান তিনি। ১৮৯৫ সালে খায়রুদ্দিন তার পরিবারসহ ভারতে ফিরে আসেন এবং কলকাতায় স্থায়ী হন।
মৌলানা আবুল কালাম তার উপাধি হিসেবে গ্রহণ করেন ‘আজাদ’। ২০০৮ সালে ১১ নভেম্বর দিনটিতে জাতীয় শিক্ষা দিবস হিসেবে আবুল কালাম আজাদের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করার ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১১ নভেম্বর পালন করা হয় জাতীয় শিক্ষা দিবস। আজাদের নেতৃত্বে ১৯৫১ সালে দেশের প্রথম আইআইটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা মন্ত্রক। এরপর ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তার আমলে গঠিত হয়েছিল আইআইএসসি এবং স্কুল অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড আর্কিটেকচার।
আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস করতেন যে এই প্রতিষ্ঠানগুলি ভবিষ্যতে ভারতের উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে। অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (AICTE) এবং সেকেন্ডারি এডুকেশন কমিশনও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার আমলে। দেশের বিখ্যাত জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। সাহিত্যের বিকাশের জন্য সাহিত্য একাডেমী, ভারতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যের বিকাশের জন্য সঙ্গীত নাটক একাডেমী এবং চিত্রকলার বিকাশের জন্য ললিতকলা একাডেমী গঠন করেন তিনি। ১৯৯২ সালে মরণোত্তর ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয় মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে।