ভগবান শিবের খুব প্রিয় বেলপাতা পরিচিত বিল্বপত্র নামেও। ভগবান শিবের প্রতিটি উৎসব ও পুজোয় নিবেদন করা হয় বেলপাতা। মান্যতা রয়েছে বেলপাতা নিবেদন করলে প্রসন্ন হয়ে ভক্তদের সমস্ত ইচ্ছা পূরণ করেন মহাদেব। মহাদেবকে বেলপাতা নিবেদন করার ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব রয়েছে। তিন পাতা নিয়ে হয় বেলপাতা, তিনটি পাতাকে কখনও মনে করা হয় ত্রিত্বের প্রতীক অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব তথা সৃষ্টি, রক্ষণাবেক্ষণ ও ধ্বংসের প্রতীক। আবার কখনও তিনটি গুণ অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ ও তম এবং কখনও মনে করা হয় 'ওম' শব্দের প্রতীক। ধর্মীয় শাস্ত্র অনুযায়ী, বেলপাতার এই তিনটি পাতা মহাদেবের তিনটি চোখ বা মহাদেবের অস্ত্র ত্রিশূলের প্রতীক।

শুধুমাত্র তিনটি পাতা বিশিষ্ট বেলপাতা শিবলিঙ্গে নিবেদন করা উচিত। বেলপাতায় তিনটি পাতা থাকলেই একে মনে হয় সম্পূর্ণ। বেলপাতাকে বুড়ো আঙুল, অনামিকা আঙুল এবং মধ্যমা আঙুল দিয়ে ধরে অর্পণ করতে হয় শিবলিঙ্গে। বিশেষ মনোবাসনা পূরণ করার জন্য শিবলিঙ্গে অর্পণ করতে হয় ১১, ২১ ও ৫১টি বেলপাতা এবং প্রতিবার 'ওম নমঃ শিবায়' মন্ত্র জপ করে অর্পণ করতে হয় বেলপাতা। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, বেলপাতার মধ্যে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বেলপাতায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং শীতলতা প্রদান করে। বেলপাতার মিশ্রণ লাগালে শরীরের তাপ কমে যায়। এছাড়া আয়ুর্বেদে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় বেলপাতা।

শ্রাবণ মাসে সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমস্ত মূল্যবান জিনিসের সঙ্গে বের হয় হালাহালের বিষও। বিশ্বকে হালাহালের ক্রোধ থেকে বাঁচানোর জন্য সেই বিষ পান করেছিলেন ভগবান শিব। বিষের প্রভাবে ভগবান শিবের সমস্ত শরীর জ্বলতে শুরু করে, এর ফলে জ্বলতে থাকে সমগ্র বিশ্ব। ভগবান শিবকে শীতলতা প্রদান করার জন্য সমস্ত দেবতারা মহাদেবের শরীরে গঙ্গা জল ঢেলে দেন, বেলপাতা খাওয়ান এবং মহাদেবের শরীরে লাগানো হয় বেলপাতা, এরপর অনেক স্বস্তি পান তিনি। সেই সময়ের পর থেকে ভগবান শিবকে গঙ্গা জলের অভিষেক করা হয় এবং তাঁকে বেলপাতা দেওয়ার প্রথা রয়েছে।