কের পূজো ত্রিপুরার এক বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, যা রাজ্যটির রাজপরিবারের ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই পূজো মূলত ত্রিপুরার দেবতা 'বস্তু'–র আরাধনায় উৎসর্গীকৃত। কের পুজোর অর্থ বন্দী বা নিয়ন্ত্রণ, যার মাধ্যমে সমাজ ও পরিবেশকে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব থেকে রক্ষা করার প্রার্থনা করা হয়।
শ্রাবন মাসের শুক্লা পঞ্চমীতে সাত দিনের খারচি পূজা ১৪ দেবতার মন্দিরে শেষ হওয়ার পরের সাত দিনের মাথায় শুরু হয় কের পূজা। সেই হিসাবে ২০২৫ এর কের পুজো ১৯ জুলাই । তবে হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীর পুজোরমতো সব আচার-উপাচার কের পূজায় দেখা যায় না।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি খয়পুর এলাকায় কের পূজোর প্রধান আয়োজন হয়, বিশেষত উনকোটি জেলার বিভিন্ন জায়গায়। এই পূজা সাধারণত খার্চি পূজোর ১৫ দিন পর অনুষ্ঠিত হয় এবং দু’দিন ধরে চলে। পূজোর সময় রাজপরিবারের পুরোহিতেরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নানা আচার পালন করেন, যার মধ্যে আছে বিশেষ বলি, গানের মাধ্যমে দেবতাকে ডাক এবং একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে সকলের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করা।
এই উৎসবের সময় কিছু কড়া নিষেধাজ্ঞাও মানা হয় – যেমন, পূজোর সময় মহিলাদের অংশগ্রহণে সীমাবদ্ধতা থাকে, গ্রাম বা শহরের নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ নিষেধ থাকে, এবং কোনো নতুন কাজ শুরু করা বারণ। এমনকি রান্নাও হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে।
কের পূজোর মাধ্যমে একদিকে যেমন স্থানীয়দের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ পায়, তেমনই এটি ত্রিপুরার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও রাজপরিবার এই পূজোর আয়োজনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, যা প্রমাণ করে কতটা গুরুত্ব বহন করে এই উৎসব।