ফাইল ছবি

আজ নবমী (Navami)। হাতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরেই ঘরের মেয়ে উমা (Uma) রওনা দেবেন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে। বরণ-সিঁদুর খেলায় শুরু হয়ে যাবে তার তোড়জোড়। বাংলার সংস্কৃতিতে (Bengali Culture) যতই পরিবর্তন আসুক, ঘোরতর নাস্তিকও কোলাকুলি আর প্রণামে শুভেচ্ছা- সম্প্রীতি বিনিময় করে থাকে এই দিন। আর তার অঙ্গ হিসেবে বাংলার সংস্কৃতিতে চল রয়েছে প্রণামের পর মিষ্টি (Sweet) খাওয়ানোর। সেই মিষ্টি বাজার থেকে কিনে নয়, নিজের হাতে বানিয়েই আপনজনকে খাওয়াতে ভালবাসে বাঙালি (Bangali)। বাঙালি বাড়িতে ইতিমধ্যেই অতিথি আপ্যায়নের সেই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। চলুন দশমীর (Dashami) আগের দিন সাজিয়ে দিই মিষ্টির পাত। এই দশমীতে পাতে থাক হাতে গড়া সব মিষ্টি।

যেসব বাঙালি এখন বিজয়ার মিষ্টি বাড়িতে বানান শুরু করেননি, তাদের জন্য 'লেটেস্টলি বাংলা' (LatestLY Bangla) সাজিয়ে দিচ্ছে দশমী স্পেশাল ১০ মিষ্টির নাম। আর সঙ্গে অবশ্যই থাকছে ১০ মিষ্টির রেসিপি (Recipe)। চটপট বানিয়ে ফেলুন। আর এই বিজয়ায় খুশিতে ভরে দিন আপনার কাছের মানুষের মন। আরও পড়ুন- Durga Puja 2019: প্যান্ডেল হপিংয়ের তাড়া? এই সমস্ত খাবার কম সময়ে বানিয়ে ছুটুন মণ্ডপে; দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকবে পেট

নারকেল নাড়ু

প্রয়োজন মত গুড় ও কোরানো নারকেল (Coconut) একসঙ্গে করে জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দিয়ে যখন দুটো উপকরণই একসঙ্গে পাক হয়ে যাবে তখন তাতে প্রয়োজন মত এলাচ, কাজু কুচো দিয়ে নাড়াতে হবে কিছুক্ষণ। তারপর নামিয়ে ঠাণ্ডা করে ছোট ছোট বলের আকারে গড়ে নাড়ু (Nadu) বানাতে হবে।

নারকেল নাড়ু

বালুসাই

প্রথমে ময়দা আর বেকিং সোডা একসঙ্গে চেলে নিতে হবে। ৬ চা চামচ ঘি দিয়ে বেশ সময় নিয়ে দু'হাতের তালু দিয়ে ঘসে ঘসে মেশাতে হবে সেটা । দেখতে অনেকটা ব্রেডক্রাম্ব-এর মতো গুড়ো গুড়ো হবে। তখন টকদই দিয়ে আলতো হাতে মাখাতে হবে। তারপর ঢেকে রাখতে হবে আধ ঘন্টা। আধ ঘন্টা পর একটু মেখে ছোট ছোট লেচি নিয়ে দুই হাতের তালু দিয়ে গোল গোল কাবাবের চ্যাপ্টা আকৃতির মতো বানিয়ে মাঝখানে এক আঙ্গুল দিয়ে একটু গর্ত করে দিতে হবে। তেল হালকা গরম হলে তাতে মিষ্টিগুলো দিয়ে বাদামি করে ভাজতে হবে। খুব অল্প আঁচে উল্টে পাল্টে দুই দিক বাদামি করে নেড়ে নেড়ে ভাজতে (Fry) হবে। তারপর রসে ডোবতে হবে। হালকা গরম অবস্থাতেই রসের মধ্যে দিতে হবে। আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। ব্যাস তৈরি মজাদার বালুসাই (Balusai)।

বালুসাই

মোয়া

মুড়ি এবং গুড়কে একসাথে জ্বাল দিয়ে গোল পাকিয়ে যে মিষ্টি তৈরি করা হয় তাকেই মোয়া (Moa) বলে। অল্প আঁচে কড়াই বসিয়ে নিন। এরপর গুড় জ্বালাতে হবে। গুড় গলতে শুরু করলে সামান্য জলের ছিটে দিন। এবার গুড় কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে আঠালো করতে হবে। গুড় আঠালো হয়ে গেলে মুড়ি দিয়ে দিন। গুড় ও মুড়ি ভালোভাবে নেড়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার নামিয়ে হালকা ঠান্ডা হলে হাতের তালুতে সামান্য ঘি মেখে সহনীয় গরম থাকতেই ভালোভাবে চেপে হাতের তালুতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গোল মোয়া বানিয়ে নিতে হবে।

মোয়া

ল্যাংচা

ছানা বানানোর জন্য একটি কাড়াতে দুধ (Milk) গরম করতে দিন। দুধ ফুটতে শুরু করলে আচঁ ছোটো করে ভিনিগার দিয়ে দুধ কাটিয়ে ছানা হতে দিন। দুধ কেটে পুরোপুরি ছানা হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আচঁ বন্ধ করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিন। ছানা থেকে ভিনিগারের গন্ধ দূর করতে ঠান্ডা জল দিয়ে ছানা ভালো করে ধুয়ে নিন। কিছুটা ছানার জল চেপে চেপে ছাকনি থেকে বের করে ছানা ঢেকে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন যাতে ছানাটা পুরো জলমুক্ত হয়ে যায়। জলমুক্ত ছানাটি একটি প্লেটে রেখে তাতে ময়দা, সুজি, খোয়া ও বেকিং পাউডার যোগ করুন। হাতের তালু দিয়ে ঠেসে ঠেসে মসৃণ মেখে নিয়ে একটি ডো তৈরি করে ১০ মিনিট রেখে দিন। এই সময় একটি কাড়াতে জল, চিনি ও এলাচ একসাথে ফুটিয়ে খুব ঘন বা খুব পাতলা হবে না এমন রস বানিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর ডো থেকে অল্প অল্প করে ছানার মিশ্রণ নিয়ে ল্যাংচার আকার দিন। একটি প্যানে সাদা তেল ও ঘি এক সঙ্গে গরম করে ঢিমে আঁচে ল্যাংচা গুলো গাঢ় লাল করে ভেজে নিন। ভাজা ল্যাংচাগুলো গরম গরম চিনির রসে দিয়ে ঘন্টা চারেক ঢেকে রেখে দিন। তাহলেই ল্যাংচা (Langcha) রেডি।

ল্যাংচা

ছানার সন্দেশ

ছানা, চিনি ও এলাচগুঁড়ো এক সঙ্গে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। চিনি গলে একটু আঠালো হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। এবার একটি পাত্রে সামান্য ঘি মেখে সন্দেশের মিশ্রণ ঢেলে বসিয়ে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ছুরি দিয়ে চারকোনা অথবা বরফির মত করে কেটে ফেলুন। চাইলে ছাঁচে দিয়ে নানা রকম আকৃতি দিতে পারেন। হাত দিয়েও করে নিতে পারেন এ কাজ। ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন মজাদার ছানার সন্দেশ (Chanar Sandesh)।

ছানার সন্দেশ

কাজু বরফি

একটি প্যানে চিনি, জল এবং জাফরান দিন। চিনি সম্পূর্ণরূপে গলে না যাওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। এলাচ গুঁড়ো দিন। ঘন-আঠালো না হওয়া পর্যন্ত ভাল করে নেড়ে নিন। এবার চিনির সিরাপে মোটামুটি গুঁড়ো কাজুবাদাম দিন এবং অল্প আঁচে রান্না করুন। একটি অ্যালুমিনিয়ামের ট্রে নিন এবং তাতে প্রস্তুত মিশ্রণটি ঢেলে নিন। মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হতে দিন। টুকরো টুকরো করে কাটুন। ব্যাস তৈরি কাজু বরফি (Kaju Barfi)।

কাজু বরফি

বোঁদে

চালের গুঁড়ো ও বেসন মিশিয়ে তাতে জল দিয়ে একটি থকথকে তরল মিশ্রণ প্রস্তুত করুন। একটি ছিদ্রযুক্ত ছানতার মধ্য দিয়ে বিন্দু বিন্দু (Bonde) তরল মিশ্রণ কড়াইয়ে ফুটন্ত ঘিতে ছারুন। ঘিয়ে কড়া করে ভেজে গোলকৃতি দানাগুলি সামান্য জাফরান মেশানো চিনির রসে ছেড়ে দিন।

বোঁদে

নিমকি

এটি মিষ্টান্ন পদ না হলেও বিজয়ার পাতে এই পদ আবশ্যক। ময়দা নুন, ঘি ময়ান দিয়ে মেখে নিন। নিমকির আকারে কাটুন। গরম তেলে ছেঁকে তুলুন গরম গরম নিমকি (Nimki)।

নিমকি

আইসক্রিম

প্রথমে একটা পাত্র ১৫ মিনিট ধরে ডিপ ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। তারপর তাতে ১ কাপ হুইপ ক্রিম নিতে হবে। ক্রিমটাকে ইলেক্ট্রিক বিটার দিয়ে বিট করে নিতে হবে ঘন হওয়া পর্যন্ত। ঘন হয়ে গেলে তাতে ১ চা চামচ ভ্যানিলা এসেন্স ও ৫ টেবিল চামচ কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে দিতে হবে। এবার সব ভালোভাবে মেশাতে হবে হালকা হাতে। মিশ্রণটি ২ ঘন্টার জন্য ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ২ ঘণ্টা পর নামিয়ে একটু নেড়ে দিতে হবে। এর ফলে বরফ জমে আইসক্রিমটি শক্ত হয়ে যাবে না। আবার ফ্রিজে রেখে দিতে হবে ৭-৮ ঘন্টার জন্য। হয়ে গেল মজাদার ভ্যানিলা আইসক্রিম (vanila Ice Cream)।

আইস ক্রিম

তবে আর দেরি কেন! জমিয়ে হোক বিজয়ার খাওয়া-দাওয়া।