ঝাউ বীথিকার মাঝে গ্রাম বাংলার কোলে আপনার অপেক্ষায় বকখালি
বকখালি(Photo Credit: Wikimedia Commons)

ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের সপ্তম পর্বের আলোচ্য বকখাল ও ফ্রেজারগঞ্জ।

বকখালি -ফ্রেজারগঞ্জ( Bakkhali Frasergunj)

কলকাতা(Kolkata) থেকে ১৩০ কিমি দূরে রয়েছে পাশাপাশি দুটি সমুদ্র সৈকত বকখালি ও ফ্রেজারগঞ্জ। দুদিনের ছুটিতে টুক করে শহর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ুন। আদিগন্ত নীল আকাশ, গ্রাম বাংলার সুজলা সুফলা শ্যামলিমার চিত্র। আর টাটকা মাছের স্বাদে দিল খুশ হয়ে যাবে। কলকাতার ধর্মতলা থেকে ভূতল পরিবহণের বাসে সরাসরি বকখালি পৌঁছনো যায়। বাসে বা ট্রেনে নামখানা পৌঁছে বাস ধরেও যেতে পারেন আপনার গন্তব্যে। বকখালিতে বেড়াতে গিয়ে একই সঙ্গে ঘুরে আসুন ফ্রেজারগঞ্জ। থাকার জন্য বকখালিতে সমুদ্রের কাছেই রাজ্য পর্যটনের ট্যুরিস্ট লজ ও বেশ কয়েকটি হোটেল আছে। বাসস্ট্যান্ডের কাছে বন দপ্তরের রেস্টহাউস। ফ্রেজারগঞ্জে বেনফিশের সাগরকন্যা গেস্টহাউস(Sagarkanya Guest House) ও সাগরী কটেজ।

বকখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে হাঁটা দূরত্বে ঝাউবীথিকার সবুজ পেরিয়ে সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রে জাল ফেলে বাগদা চিংড়ির মীন ধরে জেলেরা। সমুদ্রের ধারে রয়েছে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে তৈরি প রপর বসার জায়গা। নীল সমুদ্রে অপরূপ সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত আর জ্যোৎস্না রাত। বাসস্ট্যান্ডের পিছনে সাঁকো পেরিয়ে বন বিভাগের এলাকায় রয়েছে কুমীর প্রকল্প, কচ্ছপ প্রকল্প আর ডিয়ার পার্ক। বকখালি থেকে ভ্যানরিকশা ভাড়া করে বেড়িয়ে আসা যায় নামখানা-বকখালি পথে অর্ধেক দূরত্বে পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের হেনরি আইল্যান্ড থেকে। পথের দু’ধারে বাংলার গ্রামের চেনা চিত্র। পথে বাইশমাথা খেজুরগাছ পেরিয়ে আরও খানিক এগিয়ে একের পর এক মাছের ভেড়ি। মোট ১৬২টি ভেড়ি আছে। ফিশারিজ-এর বাংলোর পাশে জলাশয়ে নৌকাভ্রমণের ব্যবস্থা আছে। বকখালি থেকে ২ কিমি দূরে ফ্রেজারগঞ্জ সৈকত। ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার তৎকালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজার গড়ে তুলেছিলেন এই সৈকতাবাস। তাঁর নামানুসারেই পূর্বতন নারায়ণতলার নতুন নামকরণ হয়। ফ্রেজারের বাংলোটি সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে গেলেও সাহেবি আমলের বাংলোর ধ্বংসাবশেষগুলো আজও অতীতের স্মৃতি বহন করে। ফ্রেজারগঞ্জে রয়েছে বেনফিশের হারবার। হারবারে সার দিয়ে মাছ ধরার নৌকোগুলো দূরযাত্রার প্রস্তুতি নেয়। এখান থেকে নৌকো ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জম্বু দ্বীপ থেকে।

গড়চুমুক(Garchumuk)

শহরের কোলাহল থেকে কাছেপিঠের কোনও শান্ত জায়গায় দিনদুই কাটিয়ে আসার স্বপ্ন দেখছেন? চলে যেতে পারেন হাওড়া( Howrah)উলুবেড়িয়া লাগোয়া গড়চুমুকে। সবাই বলে বটে, হুগলি আর দামোদরের সঙ্গমে গড়চুমুক। আসলে দামোদর বা হুগলি, দুই নদীই এখান থেকে অল্প দুরে। এখানে যে নদীতে নৌকাবিহার হয় সেটা চেহারায় নদী হলেও আসলে খাল—দামোদর আর হুগলিকে জুড়েছে। পুবে হুগলি, পশ্চিমে দামোদর(Hooghly and the Damodar River)। দুই নদীর মিলন ঘটাতে খাল কাটা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। সেই খাল এখন লোকের মুখে মুখে নদী। সেই খালের উপর বাঁধ, উলুঘাটা ৫৮ গেট। সেই বাঁধের উপরের সেতু পেরোলেই গড়চুমুক। আক্ষেপ একটাই, গড়চুমুক থেকে জেলা পরিষদের আয় যথেষ্ট হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও গড়চুমুকের পরিকাঠামোর এখনও বেশ কিছুটা উন্নয়ন প্রয়োজন।দু’টি নদীর মাঝে বনাঞ্চলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসা। সেখানেই অবস্থিত মিনি জু ‘মৃগদাব’ ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতি বছরই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চুটিয়ে বনভোজন চলে। পর্যটকদের ভিড়ও হয় প্রচুর। বেশ কিছু হরিণের অস্থির পদচারণা, সশঙ্ক দৃষ্টিপাত এবং দে ছুট। ময়ূর পেখম মেলে। গুটি গুটি পায়ে শজারু এসে আলাপ করে যায়। নীলগাই হাই তোলে। নদিতে নৌকা বিহারে যেতে পারেন। গড়চমুক যেতে গেলে হাওড়া থেকে ট্রেনে উলুবেড়িয়া যান তারপর সেখান থেকে বাস ধরে গন্তব্যে। ধর্মতলা থেকে বাসেও সোজাসুজি গড়চমুকে পৌঁছাতে পারেন।