নতুন দিল্লি, ১০ ডিসেম্বর: একেবারে নাটকীয়ভাবে লোকসভায় মধ্যরাতে পাস হয়ে (Lok Sabha late on Monday) গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ (Citizenship Amendment Bill, 2019)। এমনিতেই সংসদে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। তায় এনডিএ জোট শরিকরাও সঙ্গে আছে। এরপরেও বিরোধীরা এই বিল নিয়ে ভোটাভুটিতে যেতে চাইলে শাসকদলের তরফে কোনও আপত্তি তোলা হয়নি। ভোটে দেখা গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের তরফে ৩১১টি ভোট পড়েছে। বিরোধিতা করে পড়েছে মাত্র ৮০টি ভোট। তাই বিল পাস হওার পথে কোনও বাধা রইল না। এদিকে বিল পাস হতে না হতেই বিলের কপি ছিঁড়ে লোকসভায় প্রতিবাদ জানালেন মিম নেতা আসাদউদ্দিন ওয়েসি। বিলের বিরোধিতায় জোড়াল বক্তৃতা রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)ও কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরি (Adhir Chaudhury)।
এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় পাস হওয়ার আগে অন্তন সাত ঘণ্টা বিতর্ক চলে। সেই বিতর্কে হিটলারের সময়কেও মনে করাতে ছাড়েনি। সংসদে অমিত শাহ (Amit Shah) বিলটি পেশ করতে না করতেই বিরোধীরা তাঁকে রীতিমতো ছেঁকে ধরেন। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের প্রস্তাবেও গোটা লোকসভায় এতটা তোলপাড় হয়নি। সোমবার দিনভর একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে এই বিল এনে দেশের হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এক অদৃশ্য বিভেদের প্রাচীর তৈরি করছে কেন্দ্র। শিবসেনার মুখপত্র সামনা-য় এনিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিল নিয়ে দেশে ধর্মযুদ্ধের আশঙ্কাও স্পষ্ট করা হয়েছে। আসাদউদ্দিন ওয়েসি বলেছেন, হিটলার ও গুরিয়নের সঙ্গে অমিত শাহকে ইতিহাস এই বিলের জন্য মনে রাখবে। এই বিলই ফের দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিতকে তৈরি করে দিল। যেকারণেই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল। এই বিল পাসের সময় রীতিমতো কেঁদে ফেলেন ওয়েসি। অধীর চৌধুরি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন বিলটি অসাংবিধানিক। প্রথমত সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা তা লঙ্ঘন করছে। ওই ধারায় সমানাধিকারের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়াও সংবিধানের ৫, ১০ ও ১৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে এই বিল। একই মত জানান বিরোধীরা। আরও পড়ুন-Citizenship Amendment Bill Debate:নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বলবৎ হলে ইতিহাস হিটলার গুরিয়নের সঙ্গে অমিত শাহকেও স্মরণ করবে, তোপ দাগলেন আসাদউদ্দিন ওয়েসি
Delighted that the Lok Sabha has passed the Citizenship (Amendment) Bill, 2019 after a rich and extensive debate. I thank the various MPs and parties that supported the Bill. This Bill is in line with India’s centuries old ethos of assimilation and belief in humanitarian values.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 9, 2019
I would like to specially applaud Home Minister @AmitShah Ji for lucidly explaining all aspects of the Citizenship (Amendment) Bill, 2019. He also gave elaborate answers to the various points raised by respective MPs during the discussion in the Lok Sabha.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 9, 2019
বিল পাস প্রসঙ্গে বিরোধীদের বক্তব্যে জবাব দিতে অন্তত ১২ বার শাহকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে সংসদে শিবসেনার প্রতিনিধিরা নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে ভোট দেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল বালা সাহেব ঠাকরে সর্বদা অনুপ্রবেশের বিপক্ষেই ছিলেন। অমিত শাহ বলেছেন, যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলিমরা ওই তিন দেশে সংখ্যালঘু নয়। বরং ওই তিন দেশই ইসলামিক রাষ্ট্র। সেখানে মুসলিমদের ধর্মাচারণে কোনও বাধা নেই। বরং নিগৃহীত হয়েছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পারসি, শিখ, জৈনরা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করেছে কংগ্রেস। নেহরু-লিয়াকত চুক্তির মাধ্যমে তা করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ না হলে এই পরিস্থিতিই কখনও আসত না। এর পরেও পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা মুসলিমরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। তা বিবেচনা করে দেখা হবে। তবে রোহিঙ্গাদের কোনওভাবেই ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ, মায়ানমার হল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকতে চাইছে। তবে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোনও রেশনকার্ডের দরকার নেই। এনিয়ে কোনওরকম বিভ্রান্তি মূলক প্রচারে কেউ কান দেবেন না।