মমতা ব্যানার্জি। ফাইল ছবি ( Photo credit-PTI)

কলকাতা, ১৬ জুলাই:  লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি (BJP)-র চমকপ্রদ ফলের পর একেবারে কোণঠাসা তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। লোকসভায় ৪২-টিতে ৪২টি আসনেই জয়ের লক্ষ্যে নেমে, তৃণমূল পায় মাত্র ২২টি আসন। তার চেয়েও বড় কথা মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)-কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী অর্জুন সিং (Arjun Singh), সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan) -দের জিতিয়ে এনেছেন মুকুল রায় (Mukul Roy), উত্তরবঙ্গ-জঙ্গলমহলে কার্যত মুছে গিয়েছে তৃণমূল। ভোটের পর জেলায় জেলায় শুরু হয়েছিল দলবদলের হিড়িক।

২৩ মে ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে গত কয়েকদিন একইরকমভাবে ফুল বদলের হিড়িকে একেবারে চাপে পড়ে গিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল। অপারেশন মুকুলে জোড়া ফুল একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু জায়গায়। কিন্তু শেষ কটা দিন তৃণমূল কিছুটা হলেও জমি পাচ্ছে। ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের টোটকা খুব কাজে দিচ্ছে, সংসদে মহুয়া মিত্র-রা খুব ভাল কাজ করছেন, জেলায় জেলায় সুবিধাবাদীরা দল ছাড়ায় দল এখন অনেকটাই মেদমুক্ত। এমনটাই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। আরও পড়ুন-মুকুল রায়দের অস্বস্তিতে ফেলে বিজেপিতে আসার নয়া নির্দেশিকা চালু হচ্ছে

দল বদলের হিড়িক তো কমেছেই, বরং বেশ কিছু জায়গায় দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ফের দিদির দ্বারস্থ হচ্ছেন। তৃণমূল নেতারা বলছেন, রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। এবার বিজেপি আর গদ্দারদের পাল্টা দেওয়ার পালা।

একাই ৩০৩টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারকে নিয়ে আম জনতার এখন অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু গো রক্ষা-র নামে দাদাগিরি থেকে জিনিসের দামবৃদ্ধি সহ নানা বিষয় নিয়ে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ চরমে উঠতে পারে বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের বিধানসভা ভোট হতে এখনও বছর দুয়েক। এর মাঝে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে।

যেহেতু গোটা দেশেই এখন কার্যত বিজেপি-র দখলে, তাই আর কোনও ঘটনাতেই পদ্ম শিবির দায় এড়াতে পারবেন না বলে মোদি সরকার বিরোধী আন্দোলনের অনেক জায়গা থাকবে। তাই মমতা ব্যানার্জি যেভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই রাস্তাতেই আগামী দু বছর মোদি সরকার বিরোধী আন্দোলন করে তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখবে বলে আশা দলীয় নেতাদের।

রাজ্যের লোকসভা নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতে ১২৯টি আসনে লিড নিয়েছে বিজেপি। বিজেপি-র লিড নেওয়া আসনের মধ্যে আছে সিঙ্গুর, হাবড়া, রাসবিহারী-র মত তৃণমূল গড়েও। কিন্তু তৃণমূল নেতারা মন করছেন, মানুষের পাশে থাকার কর্মসূচি নেওয়ার পর ফের আম জনতার আশীর্বাদ ফিরে পাবেন মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূলের হিসেব হল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে একসঙ্গে লড়তে পারলে দক্ষিণবঙ্গে জমি ফিরে পেতে অসুবিধা হবে না। তবে উত্তরবঙ্গে লড়াইটা কঠিন হয়েছে সেটা মেনে নিচ্ছেন দিদি ঘনিষ্ঠ নেতারা । যদিও উত্তরবঙ্গে উদ্ধারে ২০১১ বিধানসভার স্ট্র্য়াটেজি নিলে সুফল মিলবেই বলে আশা তৃণমূল নেতাদের।

তৃণমূল নেতাদের সোজা হিসেব, বিজেপি-রাজ্য়ে ভাল ফল করেছে সিপিএমের ভোটব্য়াঙ্ক ভেঙে। তাই সিপিএমের ভোট ফের বাম শিবিরে ফিরুক, এই প্রার্থনাও করছে তৃণমূল। তৃণমূলের নেতাদের হিসেবে ৭০-৮০টি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম তাদের ভোটব্যাঙ্ক ফিরে পেলেই বিজেপি আবার নখদাঁত হারাবে।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের ক্ষমতা ধরে রাখতে তৃণমূল যে পাঁচটা জিনিস চাইছে

১) ক মাস পর থেকে রাজ্যজুড়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের জনবিরোধী নীতি ও বিজেপি-র সবগ্রাসি রাজনীতির প্রতিবাদ আন্দোলন হোক

২) সিপিএমের ভোটব্যাঙ্ক ফিরুক

৩) সুবিধাবাদীরা দল ছাড়ার পর এবার সবাই একজোট হয়ে লড়া হোক

৪) কংগ্রেস-সিপিএমের হতাশ নেতা-কর্মীরাও দিদির সঙ্গে হাতে হাত ধরে লড়ে বিজেপি-কে হারাক

৫) মানুষের কাছে ফিরে আবার তৃণমূল সেই ক্ষমতায় বসার আগের মত রূপে ফিরুক।