পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে (Rahool Mukherjee) নিয়ে জট ছাড়িয়েও কিছুটা রয়েই গেল। আর সেই কারণেই শনিবার অচলাবস্থা রইল টলিপাড়ায়। এদিন সকাল থেকে পরিচালক, অভিনেতারা উপস্থিত থাকলেও গরহাজির টেকনিশিয়ানরা। যে কারণে আজও চলল কর্মবিরতি। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সিনেমা তো বটেই, পাশাপাশি অনান্য ছবি, সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজের কাজও আজ বন্ধ রইল। এই নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা। পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেই দেন, আজ শনিবার কাজ হল না, মাঝে রবিবার রয়েছে একটা দিন ভেবে দেখুন কী করবেন। সোমবার যদি সদুত্তর না আসে তাহলে পরিচালকরাও কর্মবিরতিতে যাবেন। তখন দেখব আমাদের ছাড়া কীভাবে কাজ হয়।
অন্যদিকে এই নিয়ে এবার মুখ খুললেন অভিনেতা-প্রযোজক তথা তৃণমূল সাংসদ দেব (Dev)। তিনি এদিন এক্স হ্যাণ্ডেলে একটি টুইট করেন। যেখানে লেখেন, "বিষয় : বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু সংকট, কিছু তর্ক ও সমাধানের ইচ্ছে। প্রথম : আজ সকালে টেকনিশিয়ান স্টুডিও তে বাংলা ছবির, টেলিভিশনের পরিচালকরা ফেডারেশন এর সিদ্ধান্তের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখেছে। বহুদিন ধরেই রাখছে, আজ ভঙ্গিটা মুভমেন্ট এর। তার, কিছু, বেশকিছু,অনেক কারণ রয়েছে। *এই মুভমেন্ট এর গোড়ায়, আগায়,সামনে, পিছনে, ডানদিক, বাঁদিক, কোথাও সিনিয়র, জুনিয়র সহ সমস্ত রকমের টেকনিশিয়ান, সিনে শ্রমিকদের স্বার্থহানি র এক ফোঁটা উদ্দেশ্য নেই। বিষয় সেটা নয়ই। বিষয় - পলিসির* "।
দ্বিতীয় পয়েন্ট হিসেবে তিনি লেখেন, "বিষয়টা বনাম বা ভার্সেস এর নয়। যে ভার্সেস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, রাজনৈতিক তরজার, পলিটিক্যাল রঙের, তার নয়, বিশ্বাস করুন না করুন, নয়। বিষয়টা একই পরিবারের মধ্যে। পরিবারটা বাংলা বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি। তাই যে কোনো রাজনৈতিক বনাম এর, অন্য যে কোনো "বনাম" এর বাইরে এই আলোচনা। কিন্তু বললেই তো আর হয়না। বনাম নিয়েই বেশি আলোচনা হবে। "এরা বনাম ওরা", এই মর্মেই আলোচনা হয়, কারণ তাতেই লাভ হয় বেশি, মজাও হয় বেশি। তাই ঐটাই চলতে থাকে। আর কোনো সমস্যার সমাধান হয়না। তাতে বিপদ বাড়তে থাকে গোটা ইন্ডাস্ট্রির। অভিনেতার, পরিচালকের, ফোকাস পুলারের, ট্রলি সেটিং ভাইয়ের, ইলেকট্রিশিয়ান এর, হেয়ার ড্রেসারের, মেক আপ আর্টিস্ট এর, সহকারী পরিচালকের, লাইটের কর্মীদের আরো সকলের মুখ কালো হতে থাকে"।
বিষয় : বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু সংকট, কিছু তর্ক ও সমাধানের ইচ্ছে।
প্রথম :
আজ সকালে টেকনিশিয়ান স্টুডিও তে বাংলা ছবির, টেলিভিশনের পরিচালকরা ফেডারেশন এর সিদ্ধান্তের সামনে কিছু প্রশ্ন রেখেছে। বহুদিন ধরেই রাখছে, আজ ভঙ্গিটা মুভমেন্ট এর। তার, কিছু, বেশকিছু,অনেক কারণ রয়েছে।…
— Dev (@idevadhikari) July 27, 2024
তৃতীয় পয়েন্টে তাঁর বক্তব্য, "পরিবারের কারো শরীর খারাপ হলে ডাক্তার টেস্ট করাতে বলে। পলিসি নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সকলে বসে সেই টেস্ট গুলো করে নেওয়াই উচিত কাজ। যদি সত্যিই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে হয়, তাহলে সবার মতামত নিয়েই চলতে হয়। শুধু ভোট নয়, মতামত। সুইচ টিপে ভোট দেওয়া নয়, মতামত। কথায়, লেখায়, বলায়। এবং সকলের। পরিচালকের, ট্রলি যিনি ঠেলেন, তার, লাইট যিনি লাগান তার, একসঙ্গে। এবং সকলের একসঙ্গে। যদি তারজন্য নেতাজি ইন্ডোর লাগে, লাগুক। ময়দান লাগে, লাগুক। ব্রিগেড লাগে লাগুক। পয়সা খরচ করে সবার মতামত শোনা হোক। বোঝাই যাচ্ছে প্রস্তাবটা আবস্তব দিকে চলে যাচ্ছে। কারণ এতদিনের যে নিয়ম তৈরির ব্যবস্থা তাতেও সমাধান হচ্ছে না। বাওয়াল এর ভিউস, ট্র্যাকশন, কমেন্ট বেড়ে চলেছে আর ইন্ডাস্ট্রির সব কর্মীদের, বিশেষ করে যারা অল্প অর্থ রোজগার করেন,তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়েই যাচ্ছে। বাংলা ছবির স্বাস্থ্য ভাল নয়, এটা পার্সেপশন নয়, সত্যি সমস্যা, তাই এর সমাধানও পার্সেপশন দিয়ে হবে না। সত্যি সমাধান দিয়েই করতে হবে।সেখানে ক্ষমতার লাফালাফি দেখালে হবে না, ভোট গুনলে হবে না। এটা রাজনৈতিক সমস্যা নয়, রাজনৈতিক কায়দায় এই সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যা বিনোদন শিল্পীদের, তাদের কাজের পরিবেশের, তাদের সম্মানের। তাদের মানে সকলের। যিনি মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন, তার, যিনি জল দেন, খাবার দেন, তারও"।
চতুর্থ পয়েন্টে তিনি লেখেন, "ফেডারেশন এর সিদ্ধান্তের জেরে গোটা ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে এক বড় আসন্ন বিপদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,সেটা নানা রকম ঘটনা দিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া যায়, বাইরের বিজ্ঞাপন না আসা, বাইরের ছবির কাজ না আসা, পাশের দেশ, একই ভাষার কাজ এখানে না আসা, এসবেরই পথ সরু হতে হতে বন্ধ হতে চলেছে। আজকের বেশি টাকা কাল যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে বিনোদন শিল্প বলে আর কিছু থাকবে না। এটা রকেট সাইন্স নয়, কঠিন অঙ্ক নয়। একটু মাথা খাটালেই বোঝা যাবে। *আবার একটা অনুরোধ, এটা বিনোদন শিল্প। চেনা ভার্সেস এর ন্যারেটিভ দিয়ে মিটবে না। মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে সবার। মন মরে যাচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে, ৮০ সালের পর আবার সেই দিন আসবে, যখন নতুন এ সি স্টুডিও গুলো আবার গুদাম হয়ে যাওয়া ছাড়া আর পথ থাকবে না।* আঞ্চলিক ভাষার বিনোদন ভালবাসা, ঐক্য,সম্মান, আলোচনা ছাড়া বাঁচতে পারে না। প্রয়োজনে সাময়িক সংঘাত হোক, কিন্তু সকলে আরো বেটার পরিবেশ, বেটার অবস্থায়, সকলের জন্য বেটার অবস্থায় পৌঁছতে পারি। *সকলের জন্য।* জয় বাংলা ইন্ডাস্ট্রি জয় বাংলা"।