Lok Sabha Elections 2019: তৃণমূলের খারাপ ফলের পিছনে থাকল এই পাঁচ কারণ, এক ধাক্কায় কেন এক ডজন আসন হারালেন দিদি!
তৃণমূলের হারের পিছনে কি মমতা-র কিছু সিদ্ধান্ত দায়ি! (Photo Credits: ANI)

কলকাতা, ২৪ মে: গতবারের চেয়ে ১২টা আসন কম পেল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। রাজ্যের বিজেপি-র মহউত্থানে চাপে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এবার লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Elections 2019)  ৪২-এ ৪২টি আসন জয়ের টার্গেটে নেমেছিল তৃণমূল (TMC)। দিদি চেয়েছিলেন রাজ্যকে পুরো বিরোধী মুক্ত করে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ জয় করতে। কিন্তু ৪২-তো দূর অস্ত তৃণমূলের আসন এক ধাক্কায় অনেকটা কমে গেল। ৪২-এর মধ্যে তৃণমূল পেল মাত্র ২২টি, বিজেপি সেখানে পেল ১৮টি আসন। কিন্তু কেন? রাজ্যে আচমকা এমন কী হল যাতে বিজেপি-র কাছে এভাবে ধাক্কা খেল তৃণমূল! রইল সম্ভাব্য পাঁচ কারণ-

১) প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল

আসানসোল (Asansol)-এ কেন মুনমুন সেন (Moon Moon Sen)-কে প্রার্থী করে আনা হল সেটা অনেকে তৃণমূল কর্মীই বুঝতে পারেননি। গতবার দোলা সেন (Dola Sen) কে দাঁড় করিয়ে যে ভুলটা করেছিলেন, তার চেয়েও বড় ভুল মুনমুন-কে এনে করে ফেলেন মমতা। আসানসোলে সাতটি কেন্দ্রেই তৃণমূলের বিধায়ক ছিল। জিতেন্দ্র তিওয়ারির মত দাপুটে নেতাকে বাবুলের বিরুদ্ধে দাঁড় করালে ভাল ফাইট হত। কিন্তু মমতার আজব ফর্মুলায় সুচিত্রা কন্যা দাঁড়ালেন শিল্পাঞ্চলের অবাঙালী অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে। সেলেবের বিরুদ্ধে সেলেব দাঁড় করিয়ে বাজিমাতের ফর্মুলাটা এখানে কাজ করবে না সেটা অনেকেই জানতেন, বোঝেননি শুধু দিদি। তবে শুধু আসানসোল কেন, উত্তরবঙ্গেও তৃণমূলের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল ছিল সেটা দিদির আড়ালে তৃণমূলের অনেক শীর্ষ নেতাই বলছেন। প্রার্থী বাছার আগে জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনও না বলাটাই শেষ অবধি ক্ষতি করল মমতার।

২) আট বছরে ক্ষমতায় থাকার পর দিদি বিরোধী হাওয়া

ঐতিহাসিক সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর ২০১১ সালে জনগণের বিশাল রায় নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসেন মমতা ব্যানার্জি। মমতাকে নিয়ে সেই সময় মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন বাম জমানার অন্ধকার ঘুচিয়ে নতুন সূর্য আনবেন দিদি। কিন্তু গ্রামে রাস্তাঘাট, কিছু প্রকল্প ছাড়া সেভাবে রাজ্যে সামগ্রিক উন্নয়ন হয়নি। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় মমতা সরকার ভাল করলেও কর্মসংস্থান, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে একেবারে পিছিয়ে পড়তে থাকে রাজ্য। বাম জমানায় ভোটের অনিয়মের কথা শোনা যেত, সেটা দিদির আমলেও শোনা গেল, দেখা গেল। আর সে সবই ২০১৯ ভোটে বিরোধী ভোট এককাট্টা হয়ে বিজেপি-র বাক্সে জমা পড়তেই দিদি চাপে পড়ে গেলেন।

৩) নীচু তলার কর্মীদের মন বুঝতে না পারা

নীচু তলার কর্মীরা সারা বছর পরিশ্রম করেন, ভোটে জেতান। অথচ তারা তেমন কিছু পান না। তৃণমূলে যে পায়, সব পায়। আর পায় না, সে কিছুই পায় না। একই ব্যক্তি মেয়র, মন্ত্রী, কাউন্সিলর থাকেন, অথচ অনেক বিশ্বস্ত পার্টি কর্মীই কিছু পান না। ভোটের সময়ও সেলেবদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়। দলের নীচু তলায় একটা ক্ষোভ ছিল। তৃণমূলের অনেক কর্মীই বলছেন, এবার রাজ্যে বিজেপির দারুণ ফলের পিছনে রয়েছে দলের নীচু তলার একটা অংশের সাবোতেজ। স্থানীয় নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দলও দলতে ভুগিয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে বহু এলাকায় এগিয়ে গিয়েছে বিজেপি। এর পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে বিজেপির উত্থানের রিপোর্টও ঠিকমতো আসেনি উপরতলায়।

৪) মোদীকে আক্রমণের পিছনে বেশি সময় ব্যয়

এবারের লোকসভা ভোটে দিদির একমাত্র অ্যাজেন্ডা ছিল মোদীকে হারানো। মমতার সব জনসভায় এবার শুধু মোদী আর মোদী। এতে ভোটের মেরুকরণে ফায়দাটা পুরোটাই নিয়ে গেল বিজেপি।

৫) মুকুল রায় দল ছাড়ার পর সংগঠন মেরামতে মন না দেওয়া

আগে একটা সময় ছিল, যখন মমতা রাজ্যের প্রশাসনের দিকটা দেখতেন। আর মুকুল রায় দেখতেন দলের সংগঠন। সেই সময় সব ঠিকই চলচিল। কিন্তু মুকুল রায় দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের সংগঠনে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়। মুকুলকে গদ্দার বলে দিদি দলের সব কাজই নিজে করতে চাইলেন। কিন্তু একদিকে এত বড় রাজ্য প্রশাসন সামলে দল চালানোটা দিদির কাছে সহজ ছিল না। মুকুলের জায়গাটা তৃণমূলে কেউ নিতেও পারেননি। মুকুল তৃণমূলের অন্দরমহলটা এতটাই চিনতেন যে, সেটা ঢাকা দেওয়ার মত আর কাউকে পাওয়া গেল না। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ঝাড়গ্রাম। কুনার হেমব্রেমের জয়েকর পিছনে মুকুল জোর দিয়েছিলেন জঙ্গলমহলে তৃণমূলের অন্তরকলহকেই। সেটাই হল।