পরিবেশ রক্ষায় বাসের মধ্যেই বাগান করেছেন এই চালক, কোথায় জানেন?
ছবি: প্রতীকী(photo credit: Wikimedia commons)

বেঙ্গালুরুর নাম মনে আসলেই আমাদের প্রথমেই মনে আসে হাইটেক সিটির কথা। হ্যাঁ দেশের অন্যতমবড় তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্র হচ্ছে দক্ষিণের এই শহর। যত হাইপ্রোফাইল চাকরি হতে পারে তার শুরুটা কিন্তু এই শহরেই। ঝাঁ চকচকে রাস্তাঘাট, গগনচুম্বি অট্টালিকা, নামী দামি স্কুল, কলেজ, কি নেই সেই তালিকায়। তবে আমরা অতীতকে ভুলতে খুব বেশি সময় নিই না। একটু মনে করার চেষ্টা করুন, ভারতবর্ষের সবুজ শহর বলতে একসময় বেঙ্গালুরুকেই মনে করা হত। হত কি তাইতো ছিল, সবুজে ঢাকা শহর ছিল বেঙ্গালুরু, কালের নিয়মে যতবেশি আধুনিকতা আমাদের গ্রাস করছে ততবেশি সবুজ হারিয়ে গিয়েছে শহরাঞ্চল থেকে, এদিক থেকে দেখতে গেলে এক নম্বরে রয়েছে বেঙ্গালুরু, কল-কারখানা, অফিস আদালত, বড় বড় মার্কেট কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে হাউজিং কমপ্লেক্স, বিদেশী স্কুল, বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার অফিস সবমিলিয়ে শহরের মধ্যে গাছের জন্য একটুকরো সবুজ উদ্যানের জন্য আর জায়গা বেঁচে নেই। এই পরিস্থিতিকে বদলাতে ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই শহরের বেশকিছু সমাজকল্যাণ মূলক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করে চলেছে। তাদের একটাই লক্ষ্য গাছ বাঁচিয়ে পরিবেশ ও মানুষের সু্স্থতা ফিরিয়ে আনা। সেই কাজেই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন শহরের সরকারি বাসের চালক নারায়ণআপ্পা (Narayanappa)।

তিনি পুরনো দিনগুলিকে ফিরে পেতে চান, সেজন্য গাছ লাগানোর বড়ই সাধ। এদিকে সাধ্য তেমন নেই। বেঙ্গালুরুর বুকে জমিজিরেত থাকা তো চাট্টিখানি কথা নয়, আর বাড়ি বসে সারাদিন গাছ লাগালে তো পেটের ভাত চলবে না, তাই ঠিক করেন বাসেই চলবে পরিবেশ রক্ষার প্রচার।বছর দুয়েক আগে ২০১৭সালে তিনি বাসের মধ্যেই একটা টবে গাছ লাগান। সকাল সন্ধ্যায় নিয়ম করে জল দেওয়াও চলে। সরকারি বাসে ভিড় নেহাত কম হয় না। প্রত্যেক যাত্রীর নজরেই বিষয়টি এসেছে। ওই গাছ দেখেই তাঁরা অনুপ্রাণীত হন, ফ্ল্যাটবাড়ির এক চিলতে ব্যালকনিতেও ছোট্ট টবে  ডালপালা মেলে চারাগাছ। সুযোগ পেলেই গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচানোর জন্য যাত্রীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন নারায়ণআপ্পা। যাত্রীরা তাঁর আচরণে খুশি, নিজেরাও মাঝে মাঝে পানীয়জলের বোতল থেকে বাসের গাছে জল দেন। আর নারায়ণআপ্পা তো নিয়ম করে সকাল সাড়ে ছটা ও রাতে ডিউটি শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার গাছে জল দেন, এভাবেই চলছে।

মাত্র একটা গাছ নিয়ে শুরু হয়েছিল বাগান করার স্বপ্ন, এখন সেখানে ১৪টি গাছ। চালকের আসনের পাশে, কেবিনের ঠিক বাইরে ও যাত্রীদের পিছনের আসনের বাইরে, সবমিলিয়ে সবুজে ঢাকা সরকারি বাস নারায়ণআপ্পার। যাত্রীরা জানেন এই বাসে উঠলে মূল্যবান অক্সিজেন মিলবে। আর ৫৯ বছরের চালক তিনি তো চান তাঁর চলমান বাগান দেখে অন্যরাও শহরটাকে একটু সবুজ রাখার কথা ভাবুন। তাতে মন তো ভাল হবেই, একইসঙ্গে ভাললাগাও  দিনের পর দিন বেড়ে চলবে। আর মাত্র একটা বছর,  হ্যাঁ দেখতে দেখতে ২৭টা বছর সরকারি বাসের চালক হিসেবে চাকরি করে ফেললেন নারায়ণআপ্পা। এবার অবসর নেওয়ার সময় এসেছে। আগামী বছরই অবসর নেবেন তিনি, তার আগে চান, তাঁর বাসের সব যাত্রীই যেন নিজের বাড়িতে একটা স্বপ্নের বাগান করে নিতে পারেন, দিনের শেষে সেখানেই আছে মুক্তির ঠিকানা।