দলমা পাহাড়ের নিচে শাল পিয়ালের ফাঁকে উঁকি দেয় নির্জন বেলপাহাড়ি
তাজপুর(Photo credit: You tube)

ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের  অষ্টম পর্বে রইল বেলপাড়ির জঙ্গলের ইতিবৃত্ত।

বেলপাহাড়ি- কাঁকড়াঝোড়(Belpahari - Kakrajhore)

কলকাতা(Kolkata) থেকে বেশ খানিকটা উজিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঝাড়গ্রামের অদূরের বেলপাহাড়িতে। দলমা পাহাড়ের(Dalma Hills) নিচে এই অরণ্যের প্রাকৃতিক শোভা আপনার মন টানবে।শাল, মহুয়া, পিয়াল, সোনাঝুরি, শিরিষ, ইউক্যালিপটাস, সবই মিলিয়ে সৌন্দর্যের আঁতুড়ঘর হল এই বেলপাহাড়ির জঙ্গল।বেলপাহাড়ি থেকে লাল মোরামের পথ পৌঁছে দেয় স্বপ্নপুরী ঘাঘরায়। ৯ কিমি পথ। জিপে যাওয়া যেতে পারে, কিংবা হেঁটে, সংক্ষিপ্ত রাস্তায় সময় লাগে মিনিট চল্লিশ। শাল(Sal)-পিয়াল(Pial)-অমলতাস(Amaltas)-ইউক্যালিপটাসের(Eucalyptus) বনবাসর ভেদ করে পায়ে চলা পথ। পাহাড়ে ঘেরা চার পাশ। চার দিকে সবুজ শালের সমারোহ। আর মাঝে বিস্তীর্ণ ব্ল্যাক স্টোনের অজস্র গহ্বর ভেদ করে সাপের ফনার মতো ফুসছে জলরাশি। ইতিউতি মাথা উচিয়ে আছে টিলা। জলের আঘাতে এখানকার পাথরগুলির আকৃতি কলসি বা গাগড়ির মতো। স্থানীয় ভাষায় তাকে বলে ‘গাগরা’। সেখান থেকেই ঘাঘরা নামটির জন্ম। বহু কাল ধরেই এই ঘাঘরা স্থানীয় উপজাতি ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে অন্যতম পবিত্র স্থান। ঘাঘরার মাঝ দিয়ে বয়ে যায় তারাফেনি। অদূরে তারাফেনি ব্যারেজ। কংসাবতীর জল বন্দি হয়েছে ১০ লকগেটের বাঁধে।চোখে পড়ে কানাইসোল পাহাড়ের ঢালে পূর্ণিমার চাঁদ। মকর সংক্রান্তিতে এলাকা জুড়ে চলে টুসুর উৎসব।

‘কাঁকড়া’ শব্দের অর্থ পাহাড়। ‘ঝোড়’ শব্দের অর্থ অরণ্য।পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি অরণ্যে ঘেরা ট্রেকিং পয়েন্ট হল এই কাঁকড়াঝোড়।বেলপাহাড়ি থেকে আরও ১০ কিমি যেতে তামাজুড়ি বাসপথে ভোলাবেদা। সেখান থেকে ১৮ কিমি হেঁটে বা সাইকেলে বা জিপে চলে যাওয়া যায় জঙ্গলের অন্দরে, কাঁকড়াঝোড়।৯০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই এলাকা। রয়েছে কুসুম, শাল, সেগুন, মহুয়া, আকাশমণি গাছ। এখানে কাজু বাদাম,কফি ও কমলালেবুর চাষ হয়। এখানে থাকার জন্য আছে বন দফতরের পর্যটক আবাস। আছে অতি সাধারণ মানের বেসরকারি লজ। বিদ্যুৎ নেই কাঁকড়াঝোড়ে। রাতে কেরোসিনের আলো। টর্চ আর মশা তাড়ানোর ধূপ বা মশা নিরোধক ক্রিম সঙ্গে থাকা ভালো। পথ বন্ধুর ও নির্জনতা কাঁকড়াঝোড়ে সবথেকে বড় প্রাপ্তি।

তাজপুর(Tajpur)

দীঘা শংকরপুর মন্দারমণির(Digha-Shankarpur-Mandarmani) ভিড় এখনও ততটা তাজপুরের দিকে ধেয়ে আসেনি।তবুও পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর ব্যবসার কথা মাথায় রেখে তাজপুরেও একের পর এক হোটেল, রিসর্ট গজিয়ে উঠছে।তবে একটাই শান্তি সৈকত থেকে অনেকটা দূরে এই হোটেলচত্বর। ঝাউবন বালিয়াড়ি পেরিেই সৈকত ছুঁতে হয় পর্যটকদের।চাঁদনি রাতে সমুদ্র কেমন মায়াময় তাজপুরে। দেখা মিলবে নানা পাখির। রাতে শোনা যাবে রাতচরা পাখিদের ডাক কিংবা শিয়ালের। কেমন গা ছম ছমে আবহাওয়ায় এখনও নি্র্জনতা ধরে রেখেছে সুখী তাজপুর। তবে কতদিন ধরে রাখতে পারবে তানিয়ে সন্দেহ রয়েছে।দীঘা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বালিসাই। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পেরোলেই আপনার গন্তব্য তাজপুর। ওই তিন কিলোমিটার পথে কোনও বসতি নেই। চোখে পড়বে নুন তৈরির প্রকল্প। সমুদ্রের জল ঘিরে রেখে কী ভাবে নুন তৈরি হয় তা দেখা যাবে।