হাজারদুয়ারি প্রাসাদের ১০০টি দরজা ভুয়ো, কেন জানেন?
ছবিতে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, (Photo Credit:Wikimedia Commons)

ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের ১২পর্বে রইল হাজারদুয়ারির ইতিহাস।

হাজারদুয়ারি প্রাসাদ(Hazarduari Palace )

মুর্শিদাবাদ শহরের সেরা আকর্ষণ হাজারদুয়ারি। ১৮৩৭ সালে নবাব নাজিম হুমায়ুন  ঝা(Nawab Nazim Humayun Jah)-এর জন্য ৮০ ফুট উঁচু তিনতলা গম্বুজওয়ালা এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়। আদপে ৯০০টি দরজা হলেও আরও ১০০টি কৃত্রিম দরজা রয়েছে প্রাসাদে। তাই নাম হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। প্রাচীন মুর্শিদাবাদের স্মৃতি নিয়ে অপরূপ গথিকশৈলীর এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম।ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরও কিছু বিশিষ্ট নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এই মিউজিয়ামে। হাজারদুয়ারির চত্বরে রয়েছে ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে জনার্দন কর্মকারের তৈরি ১৮ ফুট লম্বা, আট টন ওজনের ‘জাহানকোষা’ কামান বা বিশ্বজয়ী কামান। এই কামানে একবার তোপ দাগতে ৩০ কেজি বারুদ লাগত বলে জানা যায়। এটি বাচ্চেওয়ালি কামান নামেও পরিচিত।

আক্ষরিক অর্থেই এ এক ঐতিহাসিক জাদুঘর(Historical Museum)। নীচের তলায় রয়েছে তৎকালীন নবাবদের ব্যবহৃত প্রায় ২৭০০টি অস্ত্রশস্ত্র। যার মধ্যে আলিবর্দি(Alivardi Khan)ও সিরাজের(Siraj ud-Daulah) তরবারি এমনকী যে ছুরিকা দিয়ে মহম্মদি বেগ সিরাজকে খুন করেছিল তা পর্যন্ত রক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়। এই সুরম্য বিশাল রাজপ্রাসাদের দ্বিতলে দেখা যায় রুপোর সিংহাসন যেটি ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী মহারানি ভিক্টোরিয়ার দেওয়া উপহার। ১৬১টি ঝাড়যুক্ত বিশাল ঝাড়বাতির নীচে সিংহাসনে বসে নবাব দরবার পরিচালনা করতেন। মন্ত্রণাকক্ষের লুকোচুরি আয়না, দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত বিশ্ববিখ্যাত সব ঘড়ি, মার্শাল, টিশিয়ান, রাফায়েল, ভ্যান ডাইক প্রমুখ ইউরোপীয় শিল্পীর অয়েল পেন্টিং, প্রাচীন সব পাথরের মূর্তি হাজারদুয়ারিকে বিখ্যাত করে তুলেছে। ত্রিতলে আছে নবাবী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনা দিয়ে মোড়া কোরাণ শরিফ, অমূল্য পুঁথিপত্র, আইন-ই-আকবরির পান্ডুলিপি সহ অসংখ্য বইয়ের সম্ভার।

কিরীটেশ্বরী মন্দির(Kiriteswari Temple)

মুর্শিদাবাদ(Murshidabad) থেকে ৬ কিমি দূরে কিরীটেশ্বরী মন্দির। কিরীটেশ্বরী একান্ন পীঠের অন্যতম। এই দেবীর পূর্ব নাম ছিল কিরীটকণা। দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহ একান্ন অংশে বিভক্ত হয়ে ভারতে নানা স্থানে পতিত হয়েছিল। কিরীটেশ্বরী পীঠে সতীর কিরীটের এক কণামাত্র পড়েছিল বলে প্রবাদ আছে। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী; মন্দিরের মধ্যে কোনও মূর্তি নেই। মূল মন্দিরটি ধ্বংস হলেও কারুকার্যময় প্রস্তর বেদিটি এখনও বর্তমান। প্রাচীন এই বেদির উপর আরও একটি বেদি আছে এবং এটিই দেবীর কিরীটরূপে পূজিত হয়। এই পীঠস্থানের দেবী বিমলা ও ভৈরব সম্বর্ত নামে খ্যাত। কিরীটেশ্বরী ভৈরব বলে যে মূর্তি পূজিত হয় তা প্রকৃত পক্ষে একটি বুদ্ধমূর্তি। সম্ভবত কিরীটেশ্বরীর মূল মন্দিরটি পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাধিকারী দর্পনারায়ণ এই মন্দিরের সংস্কার করেছিলেন। এই মন্দিরের পিছনে দু’টি শিবমন্দির(Shiva Temple) রাজা রাজবল্লভের(Raja Rajballav) প্রতিষ্ঠিত বলে কথিত।