ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ রইল টইটইয়ের পর্ব ১৯।
দেউল(Deul)
পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা(Kanksha) থানার অন্তর্গত দেউল আগে ইছাই ঘোষের দেউল নামেই সুপরিচিত ছিল।কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর পানাগড়। তার পর ‘দার্জিলিং মোড়’ থেকে ডান দিকে ঘুরে সোজা ইলামবাজারের রাস্তা। তবে আপনাকে ইলামবাজার যেতে হবে না, আগেই বাঁদিকে বেঁকে যান। পিচ রাস্তা যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকেই লাল মাটিয়র পায়ে চলা পথ অজয় নদের ধার ধরে আপনাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। বোলপুর হয়েও দেউল পৌঁছাতে পারেন।
জঙ্গলে ঘেরা গ্রামটির পূর্বতন নাম ‘ঢেকুর’ মুছে গিয়ে বর্তমানে গৌরাঙ্গপুর। জনবসতি নেই বললেই চলে,গ্রামের গা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজয়। ও-পারে কবি জয়দেবের কেন্দুলি, আর এ-পারে শাল-অর্জুন-শিরীষ এবং বুনো গাছগাছালিতে ভরা গা ছমছমে জঙ্গল। এমনই জঙ্গলের মাঝে রয়েছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ এক বিশাল শিবমন্দির। শ’খানেক ফুট উঁচু মন্দিরের গায়ে জীর্ণ টেরাকোটার নকশা আজও বহন করে চলেছে অতীতের স্মৃতি। এই মন্দিরই ইছাই ঘোষের দেউল (Ichai Ghosh Deul)নামে পরিচিত। এই মন্দিরের বয়স নিয়ে বিতর্ক আছে, কেউ কেউ মনে করেন দেউলটি ১৬শ/১৭শ শতকের। এই দেউল থেকেই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ চলে গিয়েছে ইছাই ঘোষের আরাধ্যা দেবী শ্যামরূপার মন্দিরে। একে বলে শ্যামরূপার গড়। তবে কয়েকটি সিঁড়ি আর মাটির ঢিবি ছাড়া গড়ের আর কোনও চিহ্ন নেই। আর শ্যামরূপার মন্দিরটি নতুন। দেবী এখানেই পূজিতা হন।এখানকার প্রকৃত আকর্ষণ পথেই, যেন ভুলভুলাইয়ার ঘোরে আপনাকে ব্যতিব্যস্ত করতে সর্বদাই তৈরি হয়ে আছে।এ পথে পথ ভুল করার আশঙ্কা পদে পদে। কারণ টুরিস্টদের গাড়ি ছাড়া এই পথে আর বিশেষ কোনও যান চলে না। আর কোনও জনবসতি নেই। তাই পথ বলে দেওয়ারও কেউ নেই। অবশ্যই দিনের আলো থাকতে থাকতে ঘুরে আসতে হবে শ্যামরূপার গড়( Goddess Shyamrupa)।
দেউল-এ দিনে দিনে ফিরে যেতে না চাইলেও অসুবিধার কিছু নেই। অজয় লাগোয়া বেসরকারি লজে অন্তত একটি রাত কাটিয়ে যান। গ্রাম বাংলার নিস্তরঙ্গ জীবন এখানে ধরা দিয়েছে।