বেড়াতে যেতে কে না ভালবাসে।ছুটির সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার একটা নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।এই মাণিকজোড়কে সঙ্গে পেতে আমরা প্রত্যেকেই মরিয়া।আর এখনকার দিনে ঘরেবাইরে কাজের চাপ, মেন্টালস্ট্রেস, অফিসে মাথা জ্বলিয়ে দেওয়া প্রজেক্ট, ক্লায়েন্ট ডিল, উফ হাঁপিয়ে ওঠার উপকরণের শেষ নেই।কিন্তু স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার সময় বিশেষ বেঁচে নেই। তবে এসবের মধ্যে কলকাতার কাছেপিঠে টুক করে ঘুরে আসতে পারলে মন্দ হয় না।টইটইয়ের প্রথম পর্বে রইল সপ্তাহান্তে দীঘা বেড়িয়ে আসার গল্প।
দীঘা ও শংকরপুর(Digha & Shankarpur)
কাজের প্রেশার ভুলে প্রিয়জনের সঙ্গে সমুদ্রের জলে গা ভেজানোর জন্য হাতের কাছের দীঘা সবারই প্রিয়।এখন দিঘার সমুদ্র সমুদ্র অনেকটা এগিয়ে আসায় কংক্রিট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে পাড়।বাজারের কাছে অনেকটা জায়গা জুড়ে পর্যটকদের স্নানের ভিড় লেগে থাকে।যাত্রী চাহিদা মেটাতে দিঘার সৈকত প্রসারিত হয়েছে ওড়িশা সীমান্তে(Odisha Border) নিউ দীঘা পর্যন্ত।নিউ দীঘার সৈকতটি(New Digha Beach)তুলনায় চওড়া, ঝাউগাছে মোড়া।সমুদ্রে নেমে হইহই করার পর যদি বেড়িয়ে নেওয়ার এনার্জি অবশিষ্ট থাকে তাহলে ঘুরে দেখুন সর্প উদ্যান, মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম, দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র।শুক্রবার রাতে বেরিয়ে সকালে দীঘা পৌঁছে সমুদ্র স্নান ও ঘোরাঘুরির পর ১৩ কিমি দূরের শংকরপুরে যেতে পারেন। মৎস্যপ্রকল্প ও ঝাউবীথিকায় ছাওয়া সমুদ্রতট এই শঙ্করপুর।দীঘার ভিড় এড়াতে শংকরপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান।এখানে এলে একদিকে নিরিবিল সৈকত হাতছানি দিয়ে অবসরের লোভ দেখাবে।তেমনই আর একদিকে মৎস্যবন্দরের ব্যস্ততা নিয়ে অপেক্ষা করছে আর এক শংকরপুর।সমুদ্রে গিয়ে কত ধরনের মাছই না মৎস্যজীবীদের(Fisher man) হাতে আসে, সেসবের বিকিকিনির হাট এখানেই।শংকরপুরে এখনও ঝাউবনের দেখা মেলে।বালিয়াড়ির ঢাল বেয়ে সোজা নেমে যান সৈকতে।দূরে নীল সমুদ্রের হাতছানি আর বিচের মধ্যে হইচই এই প্রাপ্তি কিন্তু দীঘায় নেই।শুধু দুজনের অবসর যাপন নয়, জমজমাট পারিবারিক পিকনিকেরও আদর্শ জায়গা শঙ্করপুর।বেলা শেষে সূর্যাস্তর ছবি বুকে নিয়ে ফেরা।দীঘা থেকে সারাটা দিনের জন্য শংকরপুরে চলে আসতে রাত্রিবাসের জন্য এখানে পাবেন বেনফিসের লজ মৎস্যগন্ধা ও জোয়ার।পেয়ে যাবেন বেশকিছু বেসরকারি হোটেলও।হাওড়া থেকে ট্রেনে অথবা ধর্মতলা থেকে বাস ধরে দীঘা-শংকরপুরে আসতে পারেন।আর নিজেদের গাড়ি থাকলে তো কথাই নেই।
টাকি(Taki)
কলকাতা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টাকির বাতাসে ভেসে বেড়ায় জমিদারির গল্প।দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে ১৯৪৭ সালের পরে অনেকেই ও পার বাংলা থেকে চলে এসেছিলেন এ পারে। সেই তাঁরাই টাকি-হাসনাবাদ-বসিরহাটে(Hasnabad-Basirhat) বসতি গড়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তখন থেকেই পর্যটনকে কেন্দ্র করে টাকির আত্মপ্রকাশ। ইছামতীর(Ichamati River) ওপাড়ে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের সাতক্ষীরা জেলা ও শ্রীপুর। বিধানচন্দ্র রায়ের পৈতৃক বাড়ি ওই শ্রীপুরেই। দুর্গাদশমীতে দুই বাংলার মিলনকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই ইছামতী, দুপারের উৎসব মুখর বাঙালি ইছামতীতেই প্রতিমা বিসর্জনে আসে, এসময় প্রতিবেশী দেশের মানুষের মধ্যে মিষ্টিমুখও হয়।কাজের চাপ থেকে ফুরসৎ মিলতেই ঘুরে আসতে পারেন টাকি।পূর্ণিমার রাতে রীতিমতো রূপবতী হয়ে ওঠে ইছামতী, দিনেরবেলা পার বরাবর হেঁটে গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করুন, রাত হলে হোটেলের ব্যালকনি থেকে দেখুন চাঁদের আলোয় স্বচ্ছতোয়া ইচ্ছামতীকে।মুঘলসম্রাট আকবরের(Mughal Emperor Akbar) সেনাপতি মান সিং-এর নামে রয়েছে এখানকার একটি রাস্তা। ওই পথেই নাকি মান সিং টাকি আক্রমণ করেছিলেন, প্রমাণ স্বরূপ স্মারকও বসেছে ওই পথে। রাজবাড়ির দুর্গাদালানটি দেখার মতো। ছোট গোলাকার ইটে তৈরি দালান। টাকি সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে হাসনাবাদের দিকে যেতে পড়বে কুলেশ্বরী কালীবাড়ি, রামকৃষ্ণ মিশন।১৯৩১-এ প্রতিষ্ঠিত এখানকার মন্দিরটির অনেকটা বেলুড় মঠের আদলে নির্মিত। দিঘির পাড়ে রয়েছে ৩০০ বছরের পুরনো জোড়া শিবমন্দির। নদীর তীর ছুঁয়ে গ্রামের ভিতর ঢুকে জালালপুরের নন্দদুলাল মন্দির। বৈশাখের অক্ষয় তৃতীয়ায় তিন দিনের মেলা বসে মন্দিরের সামনের মাঠে। সইদপুরে দেখা যাবে ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরীর(General Shankar Roychowdhury) বসতভিটে। ইছামতীর নির্মল বাতাস আর ইতিহাসের সাহচর্যে কাটতেই পারে দুটি দিন।