Amethi Gandhi: আমেথিতে গান্ধীদের না দাঁড়ানোর পিছনে আধডজন কারণ, ময়নাতদন্তে হুলহীন হাতের স্মৃতিটুকু থাকের ছাপ
নিজেদের গড় আমেথিতে ২৬ বছর বাদে লড়বেন না গান্ধী পরিবারের কেউ। ২০০৪ থেকে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে এই আমেথিতে থেকে টানা তিনবার জেতেন রাহুল গান্ধী। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে স্মৃতি ইরানি-র কাছে হারের পর আর আমেথিতে ফিরে এলেন না রাহুল।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: নিজেদের গড় আমেথি (Amethi)-তে ২৫ বছর বাদে লড়বেন না গান্ধী পরিবারের কেউ। ২০০৪ থেকে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে এই আমেথিতে থেকে টানা তিনবার জেতেন রাহুল গান্ধী। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে স্মৃতি ইরানি-র কাছে হারের পর আর আমেথিতে ফিরে এলেন না রাহুল। তার আগে সঞ্জয় গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী-রা এখানে লড়ছেন। শেষবার ১৯৯৮ লোকসভা নির্বাচনে আমেথিতে গান্ধী পরিবারের বাইরে কংগ্রেসের টিকিটে লড়েছিলেন সতীশ শর্মা।
সেবার বিজেপি-র সঞ্জয় সিংয়ের বিরুদ্ধে হেরেছিলেন কংগ্রেসের সতীশ শর্মা। তার পরের বছর হওয়া লোকসভা নির্বাচনে আমেথিতে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এবার রাহুল গান্ধী লড়ছেন তাঁর মায়ের ছেড়ে আসা রায়বারেলি থেকে। অন্যদিকে, সোনিয়া কন্যা প্রিয়াঙ্গা গান্ধী বঢ়রাও দাঁড় করানো হল না স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে। আরও পড়ুন- ওয়েনাড়ের পর রায়বেরিলি থেকে দাঁড়াচ্ছেন রাহুল গান্ধী; মোদীর কটাক্ষ, 'পালিয়ে যেও না'
কিন্তু কেন? দলীয় রাজনীতির যুক্তি-পাল্টা যুক্তির বাইরে গিয়ে, স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে খোঁজার চেষ্টা করা হল আমেথিতে দীর্ঘ ২৬ বছর বাদে গান্ধীদের না লড়ার ময়নাতদন্ত করা হল--
১) সমীক্ষার রিপোর্টকে গুরুত্ব দেওয়া: বছরখানেক ধরেই উত্তরপ্রদেশের আমেথি সহ দেশের ৫-১০টি লোকসভা কেন্দ্রকে নিয়ে এক নির্বাচনী গবেষক সংস্থা গোপনে সমীক্ষা চালাচ্ছিল কংগ্রেসের হয়ে। এইসব আসনে কংগ্রেসের সংগঠন, দলীয় নেতৃত্ব থেকে সাধারণ মানুষের ইস্যু বোঝার বিশেষ চেষ্টা করা হচ্ছে স্বাধীন সমীক্ষার মাধ্যমে। সেই সমীক্ষায় নাকি উঠে আসে ২০১৯ লোকসভার পর আমেথিতে কংগ্রেস যে জমি হারিয়েছে, তা এখনও ফেরেনি। এখনও এখানে বিজেপির সংগঠনের দাপট অব্যাহত। কোভিডের সময়কালে যোগী আদিত্যনাথ বা মোদী সরকারের কাছে সেখানকার মানুষ খুশি না হলেও, রাহুল গান্ধী বা গান্ধী পরিবারের অনুপস্থিতিতে তারা হতাশ। এখন ভোটের দিন কুড়ি আগে রাহুল বা প্রিয়াঙ্কা অনেক পরিশ্রম করলেও তাদের ভোটের পাখি বদনামটা বিজেপি দারুণভাবে দিতে পারবে। তাই সমীক্ষার রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে গান্ধী পরিবারের কাউকে দাঁড় করানো হল না।
২) আমেথির আতঙ্কের অঙ্ক: আমেথি লোকসভায় যে পাঁচটা বিধানসভা আছে সেগুলি হল-১) তিলোই, ২) সালোন, ৩) জগদীশপুর, ৪) গৌরীগঞ্জ ও ৫) আমেথি। এগুলির মধ্যে একটিতেও কংগ্রেসের বিধায়ক নেই। গত দশ বছরে এই পাঁচটা বিধানসভা কংগ্রেসের কার্যালয়ের সংখ্যাও হু হু করে কমেছে। এই পাঁচটা বিধানসভার মধ্যে তিনটিতে বিজেপি-র, দুটি সমাজবাদী পার্টি-র বিধায়ক আছে। কিন্তু সমাজবাদীদের জেতা দুই আসন গৌরীগঞ্জ ও আমেথি-তে স্মৃতি ইরানি গত তিন মাসে পদ্মের জমি শক্ত করতে পেরেছেন। পাঁচ বছর আগেও রাহুলের পক্ষে দুটি বিধানসভায় স্পষ্ট সমর্থন ছিল। হাতে সময় কম। এমন ঝুঁকির অঙ্ক নিয়ে গান্ধী পরিবার সরে দাঁড়ালো। যদিও কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের আফশোস, রাহুল এবার লড়লে জিততেন-কারণ গতবার স্মৃতির দিকে অনেকটা ঝুঁ থাকা জগদীশপুর ও সালোনে এবার কংগ্রেস জমি উদ্ধার করে ফেলেছিল। পাশপাশি গতবারের চেয়ে সমাজবাদী নেতা-কর্মীরা এবার অনেকটা তাদের সঙ্গে থাকায়-গৌরিগঞ্জ ও আমেথিতে লিড অনেকটাই থাকত। তিলোই-তেও ঠিক লিড আসত।
৩) বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধু আমেথিতে সীমাবদ্ধ না রাখা: নির্বাচনের প্রথম দুটো দফায় ভোটদানের হার ও ট্রেন্ড বিজেপি-কে কিছুটা হলেও স্মায়ুর চাপে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বা বিজেপির শীর্ষ নেতারা আর আগের মত জোর দিয়ে ৪০০ পাড়ের কথা বলছেন না। এমনটাই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। এমন সময় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধু উত্তর প্রদেশে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। ইউপি-তে কংগ্রেস জমি হারিয়েছে। সেখানে যা করার করতে হবে অখিলেশ যাদবকেই। কংগ্রেসের বরং দায়িত্ব অন্য রাজ্যে বিজেপিকে চাপে রাখা। বিজেপি চাইবে রাহুল, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীদের ইউপি-তে আটকে রাখতে। কিন্তু আগামী তিনটি দফা কংগ্রসের কাছে অগ্নিপরীক্ষার। এমন অবস্থায় রাহুল-প্রিয়াঙ্কা যদি শুধু আমেথিতে আটকে থাকেন (প্রার্থী হলে যেটা করতেই হবে), সেটা বাকি রাজ্যে প্রভাব ফেলবে। কারণ রাহুল-প্রিয়াঙ্কা প্রচারে না গেলে সেখানে বিজেপি বিরোধী হাইপ, মিডিয়া প্রচার, মানুষের মধ্যে সাড়া কমে পড়ে। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধু আমেথিতে সীমাবদ্ধ রাখল না কংগ্রেস।
৪) অহেতুক ইউপি-র লড়াইকে হাইপ না দেওয়া: আমেথিতে রাহুল, প্রিয়াঙ্কার লড়াই মানেই গোটা দেশের সংবাদমাধ্যমের নজর। অতিরিক্ত মিডিয়া হাইপ। কংগ্রেসের হিসেবে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মোদী সরকারকে হারাতে হলে কর্ণাটক, বিহার, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মত রাজ্যগুলিতে ভাল ফল করতে হবে। ইউপি, অসম, উত্তর পূর্ব ভারতে বিজেপি-কে খুব বেশী কমানো তখনই যাবে, যখন কেন্দ্রে মোদী থাকবে না। তাই আমেথিতে গান্ধী পরিবারকে না নামিয়ে ইউপি-কে অতিরিক্ত হাইলাইট করল না কংগ্রেস। কংগ্রেসের সাফ হিসেব, ইউপি-তে ইন্ডিয়ার ঝান্ডা অখিলেশ যাদবের হাতেই থাকবে।
৫) আমেথির অঙ্ক মেলাতে পারাকেই বেশী গুরুত্ব: রাহুল না প্রিয়াঙ্কা নন। আমেথিতে স্মৃতি ইরানিকে হারিয়ে কংগ্রেসের গড় উদ্ধারকেই বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস। হাতের হিসেব হল, আমেথিতে শেষ কটা দিনের প্রচারের চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হল সেখানকার রাজনীতির, সেখানকার পাঁচটা বিধানসভার অঙ্ক মেলানো। কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতা কিশোরী লাল শর্মা আমেথির ভোট রাজনীতির অঙ্ক হাতের তালুর মত চেনেন বলে দাবি। সমাজবাদী পার্টি-র সঙ্গে সম্বন্বয় সাধন করে চলে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী-কে দিয়ে আগামী কয়েকটা দিন টানা প্রচার চালিয়ে কিশোর লাল শর্মা কংগ্রেসকে জেতাতে পারবেন বলে কংগ্রেস হাইকমান্ডের বিশ্বাস। রাহুল প্রার্থী হিসেবে না থাকায় আগামী কটা দিন প্রচারের সব আলো থাকবে স্মৃতি ইরানির দিকেই, সেই সুযোগে ভোটের অঙ্ক মেলানোর খেলাটা কিশোরী লাল খেলতে পারবেন বলেই কংগ্রেসের বিশ্বাস।
৬) প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এখনও ভোটে দাঁড়াতে তৈরি নন: পুদুচেরি থেকে লাক্ষাদ্বীপ, কর্ণাটক, তেলাঙ্গানা-একের পর এক রাজ্য থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢ়রা-র কাছে এবার লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে চাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। প্রিয়াঙ্কা এবার জনসভায় মোদীকে সমানে টক্কর দিচ্ছেন। প্রিয়াঙ্কার কথা সোশ্য়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। এমন সময় প্রিয়াঙ্কা নিজে প্রার্থী না হয়ে, দলের হয়ে গোটা দেশে প্রচার করতে চান। এমন সময় রাহুলের কাছে রায়বারেলি ও আমেথির মধ্যে কোনও একটা বেছে নেওয়ার অপশন ছিল। রাহুল প্রথমটাই বেছে নিলেন। কারণ রায়বারেলি এখনও কংগ্রেস গড়। আর আমেথির থেকে রায়বারেলি অনেকটাই সুরক্ষিত আসন।
(Social media brings you the latest breaking news, viral news from the world of social media including Twitter, Instagram and YouTube. The above post is embedded directly from the user's social media account. This body of content has not been edited or may not be edited by Latestly staff. Opinions appearing on social media posts and the facts do not reflect the opinions of Latestly, and Latestly assumes no responsibility for the same.)