শিব ঠাকুরের আপন দেশ তারকেশ্বরের দুধপুকুর অন্যতম পুণ্যস্থান
ছবিতে তারকেশ্বরে ভোলানাথের মন্দির(Photo credit: Youtube)

ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ রইল টইটইয়ের পর্ব ১৪।

তারকেশ্বর(Tarakeswar Temple)

শিব ঠাকুরের(Lord Shiva) আপন দেশ এই বাংলাতেও আছে, সেটি তারকেশ্বর। কলকাতার থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে এই তারকেশ্বর, রাজ্যের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শিবমন্দির এখানেই রয়েছে। হাওড়া থেকে ট্রেনে পৌঁছে যাওয়া যায় তারকেশ্বরে। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকেই বাস যাচ্ছে তারকেশ্বর। অনেকে কলকাতায় গঙ্গা থেকে বা বৈদ্যবাটির নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে বাঁকে জল নিয়ে হেঁটে তারকেশ্বর পৌঁছন।তারকেশ্বরে থাকার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের তারকেশ্বর ট্যুরিস্ট লজ। দুধপুকুরের পাড়ে তারকেশ্বর মিউনিসিপ্যাল গেস্ট হাউস। এ ছাড়াও বহু বেসরকারি হোটেল ও ধর্মশালা আছে।

অনাদি স্বয়ম্ভু দেবতা আদিনাথ বা শিবের মন্দিরকে ঘিরে তারকেশ্বরের খ্যাতি। রাজা ভারামল্ল (King  Bhara Mallo)স্বপ্নে শিবের দর্শন পেয়ে ১৭২৯ সালে জঙ্গল কেটে মন্দিরটি তৈরি করান। রেল স্টেশন থেকে ৫ মিনিটের হাঁটা পথে পৌঁছে যাওয়া যায় মন্দিরে। আজকের আটচালা মন্দিরটি তৈরি করেন শিয়াখালার গোবর্ধন রক্ষিত। স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ ছাড়াও মন্দিরে রয়েছেন বাসুদেব, দ্বিমতে ব্রহ্মা। শিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে আর শ্রাবণ মাসের প্রতি সোমবারে অসংখ্য ভক্ত সমাগম হয়। মন্দিরের লাগোয়া দুধপুকুর। সংস্কারের পর দুধপুকুর এখন পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এই পুকুরে স্নান করলে পুণ্য হয় বলে লোকের বিশ্বাস। লাগোয়া রাজবাড়িটিও দর্শনীয়।

তারাপীঠ(Tarapith)

এই রাজ্যের অন্যতম শক্তিপীঠ হল তারাপীঠ। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, শিবের রুদ্র তাণ্ডবের ফলে সতীর দেহের নানা অংশ বহু স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার থেকে ভারত জুড়ে বিভিন্ন সতীপীঠের জন্ম হয়েছে। তারাপীঠকেও ৫১টি সতীপীঠের অন্যতম বলে মনে করা হয়। সতীর চোখের ঊর্ধ্বনেত্রের মণি অর্থাৎ তারা পড়ায় দ্বারকা নদীর পুব পাড়ের চণ্ডীপুর আজ তারাপীঠ। তবে তারাপীঠের আরও বেশি মাহাত্ম্য শক্তিপীঠ বা মহাপীঠ হিসাবে। কথিত আছে, সাধক বশিষ্ঠ দ্বারকার কুলে মহাশ্মশানের শ্বেত শিমূলের তলে পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে তারামায়ের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। তবে, সে দিনের শিমূল গাছ আজ আর নেই। খরস্রোতা দ্বারকাও আজ হেজেমজে নোংরা খাল। জনারণ্যে হারিয়ে গেছে মহাশ্মশানের ভয়াবহতা। ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্ঠর সিদ্ধপীঠ এই তারাপীঠ আরও অনেকেরই সাধনপীঠ, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাধক বামাক্ষ্যাপা।

কলকাতা থেকে তারাপীঠে আসতে গেলে হাওড়া বা শিয়ালদা থেকে ট্রেনে রামপুরহাট আসতে পারেন। সেখান থেকে গাড়িতে তারাপীঠ। কিছু ট্রেন তারাপীঠ রোড স্টেশনেই দাঁড়ায় সেখান থেকে মন্দিরে চলে যেতে পারেন।