
ভোটের এক বছর আগে অসমে কংগ্রেসের বড় সিদ্ধান্ত। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Himanta Biswa Sharma)-র প্রবল প্রতিপক্ষ গৌরব গগৈ (Gaurav Gogoi )-কেই সামনে এগিয়ে দিল কংগ্রেস। অসমে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে সাংসাদ গৌরব গগৈ-এর নাম ঘোষণা করল হাত শিবির। যোরহাটের সাংসদ গৌরব গগৈ এখন লোকসভার ডেপুটি বিরোধী দলনেতা। যে তরুণ গগৈর সঙ্গে দ্বন্দ্বে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, তারই ছেলে এবার আগামী বছর সরাসরি তার প্রতিপক্ষ। আগামী বছর অসম বিধানসভা নির্বাচনটা সরাসরি হিমন্ত বনাম গৌরবের মধ্যেই হতে চলেছে তা পরিষ্কার। দুজনের মধ্যেই সম্পর্কটা সাপে নেউলের মত। গৌরবের প্রয়াত বাবা তরুণ গগৈ ১৫ বছর ধরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
গগৈ পরিবার পয়লা নম্বর শত্রু হিমন্তর
অসমে ক্ষমতায় থাকাকালীন কংগ্রেস তরুণ গগৈ-কে প্রাধান্য দিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে মুখ্যমন্ত্রী করেনি। এই ক্ষোভে হিমন্ত কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে এসে বিজেপিতে যোগ দেন। এবং পরে ২০২২ সাল থেকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। হিমন্ত সাফ করে দিয়েছেন, অসম রাজনীতিতে তার পয়লা নম্বর শত্রু গৌরব গগৈই। গগৈ পরিবারের সঙ্গে হিমন্তের দ্বন্দ্বটা অনেক পুরনো। হিমন্ত মনে করেন, গগৈরা গান্ধী পরিবারের কান না ভাঙালে তিনি অনেক আগেই অসমের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন। হিমন্ত ও গৌরব দুজনের স্ত্রী-র বিরুদ্ধে একে অপরকে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।
অসম রাজনীতিতে একাধিপত্য দেখালেও গৌরবকে হারাতে পারেননি হিমন্ত
গত বছর লোকসভায় গৌরব গগৈকে ভোটে হারানোর চ্য়ালেঞ্জ করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন উত্তর পূর্ব ভারতে এখন বিজেপির পয়লা নম্বর নেতা হিমন্ত বিশ্বশর্মা। কিন্তু যোরহাট লোকসভায় বড় ব্যবধানে হিমন্তের পছন্দের প্রার্থীকে ধরাশায়ী করে অসমে 'ম্যান অফ দি ম্যাচ' হয়েছিলেন গৌরব। এরপর গত এক বছরে বারবার গৌরবকে তোপ দেগেছেন হিমন্ত। গৌরবও ছেড়ে কথা বলেলনি অসমের মুখ্যমন্ত্রীক। সম্প্রতি অপারেশন সিঁদুর, ভারত-পাক যুদ্ধপরিস্থিতি, যুদ্ধবিরতির পর অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত দাবি করে ছিলেন, তার রাজ্যের কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর আমন্ত্রণে শত্রু দেশে সফর করেছিলেন! পাশাপাশি গৌরব নাকি প্রতিবেশী দেশের ওই সরকারি সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজও করেছিলেন! এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন যোরহাটের সাংসদ। ২০২৬ বিধানসভা ভোটের হিমন্তকে রাজ্যবাসী পুরোপুরি বিশ্রামে পাঠিয়ে দেবে বলেও কটাক্ষ করেছিলেন অসম কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি।
রাহুলের ঘনিষ্ঠ গৌরব
অসমে দলের গৌরব ফেরাতে গৌরবেই আস্থা রাখল কংগ্রেস। অসমে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের হাল একেবারেই ভাল নয়। অনেক নেতাই হিমন্তর পথ ধরে বিজেপিতে চলে গিয়েছেন। দলে রয়েছে প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। হিমন্ত সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকলেও সাংগঠনিক শক্তির অভাবে বড় কোনও আন্দোলনই করতে পারেনি হাত শিবির। তবে রাহুল গান্ধী নিজে অসমকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। দেশের বদলের শুরুটা অসম দিয়েই করতে চাইছেন রাহুল। আর তাই সেখানে তার সবচেয়ে বড় ভরসার গৌরবকেই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে জেতানোর দায়িত্ব দেওয়া হল।
গৌরব গগৈ-য়ের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গাগুলি
গৌরব গগৈ তিনবারের সাংসদ এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ-য়ের ছেলে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ২০১৪ সালে কংগ্রেসে যোগদান করেন। শুরুতে রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু হিমন্তর বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে গৌরব কংগ্রেসে ক্রমশ প্রথম সারিতে এগিয়ে আসেন। ঠান্ডা মাথার রাজনীতিবিদ, বেশ শিক্ষিত, ভাল কথা বলেন, রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ-এই জিনিসগুলি গৌরবের প্লাস পয়েন্ট। আর মাইনাস পয়েন্ট হল, বাবার মত অতটা মাটির রাজনীতিবিদ নন। তবে ২০২৪ লোকসভায় যেভাবে মাঠে নেমে পরিশ্রম করে জেতেন তা সবার প্রশংসা কোড়ায়। ২০১৩ সালে, ব্রিটিশ নাগরিক এলিজাবেথ কুলবোর্নকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে আছে।
হিমন্ত বিশ্বশর্মার রাজনৈতিক কেরিয়ার
অন্যদিকে, পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা পাঁচবারের বিধায়ক (তিনবার কংগ্রেস ও গত ২ বার বিজেপিতে)। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি। ২০১৫ সালে কংগ্রেসে ছাড়েন। ২০১৬ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। সেই বছর অসমে প্রথমবার বিজেপি সরকার গঠনের পিছনে মুখ্য কারিগর ছিলেন হিমন্ত। তবু তাঁকে সেবার মুখ্যমন্ত্রী করেনি বিজেপি। এরপর ২০২১ অসমে বড় জয়ের পর হিমন্তকে তাঁর স্বপ্নের মুখ্যমন্ত্রী পদ দেন অমিত শাহ-রা। ২০২১ অসম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৬০টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরে, আর কংগ্রেস সেখানে পায় ২৯টি আসন।