তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জগতপ্রকাশ নাড্ডা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন নাড্ডা। মন্ত্রী হওয়ায় তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির পদ ছাড়তে হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের মুখে তাঁকে রাজ্যসভা থেকে জিতিয়ে সাংসদ করা হয়। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। শাহ-র জায়গায় তখন দলের সিংহাসনে বসেন নাড্ডা। এবার প্রশ্ন নাড্ডা-র জায়গায় বিজেপির সর্বোচ্চ পদে কে বসবেন।
গত ১০ বছরের মধ্যে এই প্রথম বিজেপি সবচেয়ে কঠিনতম জায়গায় রয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রী হলেও নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ক্যারিশ্মা এবার ফিকে হয়ে গিয়েছে। সরকার বিরোধী হাওয়া প্রবল রয়েছে। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেকটা দূরে থাকায় শরিকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এমন সময় বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি পদে দক্ষ নেতা খুঁজছে দল। আরও পড়ুন-লাদাখের নির্দল সাংসদের সমর্থন কংগ্রেসকে, ৯৯ থেকে ১০২-র পথে হাত শিবির
বিজেপির সিংহাসন পদে বসা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ৫টি নাম নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। এতদিন ধরে সবচেয়ে বেশী আলোচনা চলছিল-ধর্মেন্দ্র প্রধান ও শিবরাজ সিং চৌহানের নাম নিয়ে। কিন্তু দুজনেই মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য হয়ে গিয়েছেন, তাই তাদের দলের সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি থেকে মুরলী মনোহর যোশী, ভেঙ্কাইয়া নাইডু, রাজনাথ সিং, নীতীন গড়করি-র মত নেতারা অতীতে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে কাজ করেছিলেন। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন অমিত শাহ।
এবার দেখা যাক বিজেপির সিংহসানে বসার দৌড়ে কাদের নাম ভাসছে---
১) বিনোদ তাওড়ে (মহারাষ্ট্র, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক): সবচেয়ে বেশী নামটা তাঁরই শোনা যাচ্ছে। অভিজ্ঞ নেতা, মাথা ঠান্ডা, মোদী-শাহ-র ঘনিষ্ঠ বৃত্ত থাকেন, আরএসএসের অপছন্দ নন। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্র সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনোদ তাওড়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হওয়ার বিষয়ে এগিয়ে। তবে এর আগেও অনেকবার তাঁর বড় পদ পাওয়ার সম্ভাবনা হলেও তিনি পাননি। তাই অপেক্ষা করতে হবে।
২) কে লক্ষ্মণ (তেলাঙ্গানা, বিজেপির ওবিসি মোর্চার প্রধান): তেলাঙ্গানার নেতা কে লক্ষ্মণ দলের ওবিসি মোর্চার প্রধান। 'ওবিসি' সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক। দলে ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে পরিচিত। দেশটা ভাল চেনেন। মোদী-শাহর বৃত্তের লোক। পরবর্তী বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভপতি হিসেবে তাঁর নামটা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
৩) সুনীল বানসাল (বাংলা, তেলাঙ্গানা, ওডিশায় দলের দায়িত্বে): দলের সাধারণ সম্পাদক। ঠান্ডা মাথার বিচক্ষণ মানুষ হিসেবে পরিচিত। বাংলায় ব্যর্থ হলেও ওডিশা, তেলাঙ্গানায় তাঁর নেতৃত্বে লড়ে ভাল সাফল্য পেয়েছে দল। উত্তর প্রদেশে দলের সংগঠনে তাঁর বড় প্রভাব রয়েছে। তবে অনেকেই বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে দলের একটা গোষ্ঠী বেশ সক্রিয়। তাই তিনি মোদী-শাহ-র পছন্দের হলেও
৪) ওম মাথুর (রাজস্থান, রাজ্যসভার সাংসদ,আরএসএস প্রচারক): রাজস্থানের নেতা ওম মাথুর দলের সব স্তরের নেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়। মিষ্টি হাসির ওম মাথুরকে নিয়ে অনেকেই বলেন, তিনি সব কাজ এক হাসিতেই ম্যানেজ করতে পারেন। আগ্রাসী রাজনীতিতে বিশ্বাস করলেও সেটা মুখে হাসি, ঠান্ডা মাথাতেই করেন। এমন ধরনের ব্যক্তিকেই দলের সভাপতি করার কথা। কিন্তু মোদী-শাহ-র সঙ্গে সম্পর্ক বাকিদের তুলনায় কিছুটা কম ভাল বলে শোনা যায়।
৫) অনুরাগ ঠাকুর (হিমাচলপ্রদেশের সাংসদ): তরুণ নেতা। গত মন্ত্রিসভায় ভাল মন্ত্রক সহ বেশ গুরুত্ব পেয়েছেন। ক্রমশ দলের মধ্যে শক্তিশালী নেতা হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু হিমচল প্রদেশ বিধানসভায় হারের পিছনে তাঁর ভূমিকা উঠে আসায় পিছিয়ে পড়েন। এবার তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না করায় অনেকেই জল্পনা শুরু করেছেন, তাহলে হয়তো এবার অনুরাগকে দলের সর্বোচ্চ পদে বসানো হবে। আগ্রাসী রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনুরাগের পক্ষে আছেন অমিত শাহ। তবে এখনও তিনি অত বড় পদে বসার অভিজ্ঞ নয় বলেই দলের একাংশের মত।
৬) স্মৃতি ইরানি (আমেথির প্রাক্তন সাংসদ): আমেথিতে হতাশার হারের পর অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছেন। তাঁকে আর মন্ত্রী করেনি দল। তবে জল্পনা, নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে সরব হওয়া নরেন্দ্র মোদীর ইমেজের পক্ষে দারুণ হবে যদি বিজেপিতে প্রথমবার কোনও মহিলা দলের সর্বোচ্চ পদে বসেন। সেই হিসেবে স্মৃতি ইরানির নামটা বারবার উঠে আসছে। তবে সেটা যে খুব জোরাল নয়।