Singing Icon Zubeen Garg. (Photo Credits:X)

Zubeen Garg Facts: জন্ম মেঘালয়ে। বেড়ে ওঠা অসমে। স্বপ্ন দেখা কলকাতায়। তারপর গোটা ভারত। তাঁর মিষ্টি গানের সুরে বলিউড মেতে উঠেছিল। সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হল জুবিনের। ৩২টি ভাষায় ৩০ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে নজির গড়া জুবিনের মৃত্য়ুতে চোখে জল গোটা দেশের। গায়ক, সুরকার, অভিনেতা, সমাজসেবী- সব মিলিয়ে তিনি এক সম্পূর্ণ শিল্পী। অসমের লোকসঙ্গীতকে বলিউডের সুরে মিশিয়ে তুলেছেন সর্বভারতীয় গানে। শিলচর থেকে মুম্বই, গুয়াহাটি-র রাস্তা থেকে মুম্বইয়ের স্টুডিও—সবখানেই তাঁর কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত। শৈশবের ব্যান্ড থেকে শুরু করে আজকের বক্স অফিস সাফল্য, প্রতিটি অধ্যায় যেন আবেগ, ট্র্যাজেডি আর বিজয়ের কাহিনি।

আসুন জেনে নিই জুবিনকে কয়েকটি চমকপ্রদ পরিচিত-অপরিচিত তথ্য-

মেঘালয়ে জন্ম, অসমে শিকড়

১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরা শহরে জন্ম, কিন্তু জুবিনের শিকড় জোরহাট, অসমে। বাবা মোহিনী মোহন বোরঠাকুর ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট, যিনি কবি-গীতিকার হিসেবেও পরিচিত (ছদ্মনাম কপিল ঠাকুর)। মা ইলি বোরঠাকুর ছিলেন অভিনেত্রী-নৃত্যশিল্পী-গায়িকা। এই সাংস্কৃতিক পরিবেশই গড়ে তোলে তাঁর সংগীতবোধ।

রক ব্যান্ড থেকে সঙ্গীতযাত্রা শুরু

আশির দশকের শেষ দিকে কিশোর বয়সে তৈরি করেছিলেন ব্যান্ড 'বুম বুম'। লোকসঙ্গীতকে রক মিউজিকের সঙ্গে মিশিয়ে গড়ে উঠেছিল এক বিদ্রোহী সুর। এই পরীক্ষামূলক যাত্রাই পরে জন্ম দেয় 'ইয়া আলি'-র মতো কালজয়ী বলিউড হিটকে।

৩০,০০০-রও বেশি গান, ৩০টি ভাষায়

গান গাওয়ার রেকর্ড যেন ভাঙতেই তৈরি জুবিন। বছরে ৮০০-রও বেশি গান রেকর্ড করেন তিনি। এক রাতে টানা ৩৬টি গান রেকর্ড করার নজির আছে। ভোজপুরি, তামিল, হিন্দি, বাংলা সব ভাষাতেই সাবলীল। শৈশবে পণ্ডিত রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তবলা শেখা থেকেই এই পরিশ্রমী স্বভাব।

ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি, সুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মায়ের মৃত্যুর পর 'পাখি' অ্যালবাম। আর ২০০২ সালে বোন জোনকির দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু তাঁকে ভেঙে দেয়। সেই বেদনা থেকেই জন্ম নেয় 'শিশু' অ্যালবাম, যা উত্তর-পূর্ব ভারতের শ্রোতাদের কাছে আজও অমূল্য সম্পদ।

বলিউডে সাফল্যের গল্প

১৯৯৫-এ মুম্বই যাত্রা। প্রথম দিককার হিন্দি অ্যালবাম 'চাঁদনি রাত' বা 'যুহি কভি' তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। 'ফিজা'(২০০০) বা 'কাঁটে' (২০০২)-তে গান করলেও তেমন সাফল্য আসেনি। কিন্তু ২০০৬-এ অনুরাগ বসু পরিচালিত 'গ্যাংস্টার'-এর 'ইয়া আলি' তাঁকে সারাদেশে জনপ্রিয় করে তোলে।

টলিউডের সেরা কণ্ঠ

বেশ কয়েকটি সুপারহিট বাংলা সিনেমায় অনবদ্য গান গেয়েছেন জুবিন। সেগুলির মধ্যে বোঝে না সে বোঝে না (বোঝে না বোঝে না), প্রিয়া রে প্রিয়া রে (চিরদিনই তুমি যে আমার), তোমার আমার প্রেম (জানেমন)-এর মত চিরকালীন হিট গান গেয়েছেন জুবিন।

১২টি বাদ্যযন্ত্রের ওস্তাদ

গান ছাড়াও বাজাতে পারতেন ম্যান্ডোলিন, গিটার, দোতারার মতো বাদ্যযন্ত্র। তাঁর কম্পোজিশনগুলোয় শোনা যায় লোকসুর আর আধুনিকতার অনন্য মেলবন্ধন।

গায়ক থেকে অভিনেতা-পরিচালক

২০০০ সালে 'হিয়া দিয়া নিযা'অসমের সিনেমায় অভিনেতা-সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ। পরে পরিচালনা করেন'মিশন চায়না' (২০১৭), যা প্রথম অসমিস সিনেমা হিসেবে ৬ কোটিরও বেশি আয় করে। এরপর 'কাঞ্চনজঙ্ঘা'-য় সেই রেকর্ড ছাড়ায় ৭ কোটিতে।

লোকফিউশনের পথিকৃৎ

প্রথম অ্যালবাম 'অনামিকা' (১৯৯২) আসামের সংগীতে বিপ্লব ঘটায়। ভূপেন হাজারিকার ধারা মেনেই জুবিন লোকসুরে রক, সুফি, রোমান্স মিশিয়ে দিয়েছেন 'মেঘর বরণ', 'রং'-এর মতো অ্যালবামে।

পুরস্কার, বিতর্ক, প্রতিবাদ

জাতীয় পুরস্কার ('মন যায়'), একাধিক অসম স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার ইস্ট,সব পেয়েছেন তিনি। আবার বিতর্কও কম হয়নি। হিন্দি গান গাওয়ার জন্য উলফার হুমকি, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মন্তব্যে এফআইআর সব সামলেছেন। কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি শান্তি আর অসমের স্বার্থে দৃঢ় কণ্ঠস্বর।

ব্যক্তিগত জীবন

২০০৮ সালে বিবাহ করেন ফ্যাশন ডিজাইনার গরিমা মহাজনকে। মুম্বইয়ে তাঁদের বাড়ি “সাউন্ড অ্যান্ড সাইলেন্স” একাধারে স্টুডিও ও আবাস। সন্তানহীন থেকেও দাম্পত্য জীবন সুখী।