ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছেন সিনে তারকারা। আগের সব নির্বাচনের তুলনায় এবার লোকসভা ভোট (Lok Sabha Election)-এ লড়ছেন রেকর্ড সংখ্যক সিনেমা-টিভি-অভিনয় জগতের কলাকুশলীরা। ভোটে না লড়লেও দলীয় প্রচারে রেকর্ড সংখ্যক সেলেবদের দেখা যাচ্ছে। টলিউড থেকে বলিউড, উত্তরের সিনেমা থেকে দক্ষিণের সিনেমা- সিনে তারকাদের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার খবর গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত শোনা যাচ্ছে। বাঙলা থেকেও এবার বড় সংখ্যাক টলিউড (Tollywood) সেলেব প্রার্থী হয়েছেন। মুনমুন সেন (Moon Moon Sen) থেকে লকেট চ্যাটার্জি (Locket Chatterjee)। নুসুরত (Nusrat Jahan) থেকে মিমি (Mimi)। দেব (Dev) থেকে জয় ব্যানার্জি (Joy Banerjee)। রাজ্যের নানা জায়গায় টলিউড তারকাদের ভিড়। বলিউডও এই বিষয়ে এগিয়ে। হেমা মালিনী (Hema Malini) , স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani), শত্রুঘ্ন সিনহা (Shatrughan Sinha) -রা গতবারের মত এবারও লড়ছেন। সঙ্গে এবার কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে লড়ছেন উর্মিলা মাতন্ডকর (Urmila Matondkar)।
বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল-কম বেশি সব দলেই তারকার ভিড়। কিন্তু দেশের এক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-র প্রায় সব তারকাই বিজেপি-তে নাম লিখিয়ে বসে আছেন। একটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-র সবচেয়ে বড় দুই নায়ক হাইপ্রোফাইল দুই কেন্দ্রে লড়ছেন। এমনটা খুব কম শোনা গিয়েছে। সেটাই এবার হচ্ছে উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh)। উত্তরপ্রদেশের অন্যতম সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল দুই কেন্দ্রে লড়তে দেখা যাচ্ছে এই মুহূর্তে ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় দুই নায়ককে। এই দুই নায়কই আবার বলিউডে বেশ জনপ্রিয়। ভোজপুরী সিনেমার এক নম্বর নায়ক রবী কিষাণ (Ravi Kishan) এবার লড়বেন গোরক্ষপুর থেকে। যে গোরখপুর হল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পুরনো কেন্দ্র। এই গোরখপুর থেকেই বারবার ভোটে জিতে মোদী-শাহর সুনজরে পড়ে আদিত্যনাথ এখন দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তবে গোরখপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে পাঁচ বার জিতেছিলেন উত্তরপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি যোগী মুখ্যমন্ত্রিত্ব হওয়া পরে এই আসনে উপনির্বাচন হলে সমাজবাদী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন বিজেপি প্রার্থী। এবার তাই পুরো দুর্গ উদ্ধারে বিজেপির বাজি ভোজপুরি মনেগাস্টার রবি কিষাণ।
যে রবি কিষাণের সিনেমা মানেই উত্তরপ্রদেশ-বিহারে সিনেমা হলেই বাইরে লম্বা লাইন। ভোজপুরি সিনেমার পাশাপাশি 'তেরে নাম', 'লাক' সহ নানা বলিউড সিনেমায় অভিনয় করে খ্য়াতি পেয়েছেন রবি কিষাণ। অন্যদিকে, আজমগড় কেন্দ্রে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা মুলায়ম সিং যাদব পুত্র অখিলেশের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে ভোজপুরি সিনেমার বড় তারকা দীনেশ লাল যাদব (ভক্তরা তাঁকে চনে নিরাহুয়া'নামে)-কে। গোটা উত্তর ভারত জুড়ে এই তারকার ফ্যান বেস প্রবলভাবে পোক্ত। শুধু তাই নয়। গো-বলয়ে বিজেপির ভোটে গ্ল্যামার ফ্যাক্টর হিসাবেও নিরাহুয়া একটি বড় বিষয় হয়ে উঠবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশের তরুণ সমাজের ভোটাদের মধ্যে আবেদন দেখার মত। আর অখিলেশকে ধাক্কা দিতে ভোজপুরি আইকন দীনেশ লালের ওপরেই বাজি ধরছে বিজেপি। প্রায় গোটা ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই এবার কোমর বেঁধে রবি কিষাণ- দীনেশ লাল যাদবের হয়ে প্রচার করছেন। মজা করে বলা হচ্ছে, পুরো ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই নাকি বিজেপিতে মিশে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, দিল্লি বিজেপি-র প্রধান হলেন ভোজপুরি সিনেমার আরও এক বড় নাম, মনোজ তিওয়ারি।
কিন্তু ভোজপুরি সিনেমা তারকাদের এবার এত বেশি ভোটের ময়দানে দেখা যাচ্ছে কেন? গতবার রাজ্যের ৮০টি-র মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৭৩টি আসন (২টি সহযোগী দলের আসন সহ)। কিন্তু এবার এসপি, বিএসপি একজোট হওয়ায় মোদী ঝড় গতবারের মত অতটা কাজে নাও আসতে পারে, তাই বিশেষজ্ঞমহলের মতে, উত্তরপ্রদেশের আম ভোটার, গ্রামীন ভোটারদের মধ্যে ঝড় তুলতে ভোজপুরি ফিল্মস্টারদের ব্যবহার করা হচ্ছে।