US Election Results 2024: মার্কিন মুলুকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে, কোন জিনিসগুলি জেনে ট্রাম্প বনাম কমলা দ্বৈরথ নিয়ে আলোচনা করা উচিত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস, নাকি ২০২০-তে হারের পর নাটকীয় কামব্যাক করে ফের মসনদে ফেরেন ট্রাম্প।

US President Elections 2024. (Photo Credits: X)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (2024 US Elections) ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর, এখন কোনও কোনও প্রদেশে গণনাও শুরু হয়েছে। শুধু আমেরিকা নয়, গোটা দুনিয়া এখন তাকিয়ে মার্কিন মুলুকের নির্বাচনের দিকে। অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই, মার্কিন মসনদে কে বসেন (US Election Results 2024), তার ওপর দুনিয়ার প্রায় সবারই জীবন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামান্য হলেও নির্ভর করে। আগামী বেশ কয়েক ঘণ্টা গোটা বিশ্ব নজর রাখবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার ওপর। একবার ট্রাম্প, তো কখনও কমলা হ্যারিস এগিয়ে যাবে, পিছিয়ে পড়বেন। মার্কিন মুলুকে ভোট গণনায় ডুব দেওয়ার আগে জেনে নিন এই কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।

আরও পড়ুন-টানটান ফলাফলের শুরুটা তিন তিন দিয়ে, নিউ হ্যাম্পশায়ারে প্রথম ৬ ব্যালেট গণনার পর ট্রাম্পে হ্যারিসে টানাটানি

কখনও থেকে ভোট গণনা শুরু হবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়তনে বেশ বড় দেশ। ৫০টি প্রদেশের ৬টি টাইম জোনের মার্কিন মুলুকে এখন বেশীরভাগ জায়গায় ভোটগ্রহণ চলছে, তবে কিছু জায়গায় ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়েছে। মার্কিন মুলুকের নিয়ম হল, ভোটগ্রহণ সরকারীভাবে শেষ হলে, গণনা পর্ব শুরু হয়। আর একটি নিয়ম হল, ভোট গণনার নিয়ম মানা হয় প্রদেশগুলির নিজস্ব নির্বাচনী বিধি মেনে। এই যেমন নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডিক্সভিল নোটেতে ভোটগ্রহণের শেষ ভোটগণনা এখন প্রথম পর্যায়ের শেষের পথে। তবে ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১২টা থেকে ফলাফল আসতে শুরু করবে। সমীক্ষাগুলিতে যেমন বলা হচ্ছে, তেমনটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলে অন্তত বৃহস্পতিবারের আগে বোঝা যাবে না আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন? অনেকটা নির্ভর করছে পেনসিলভিনিয়ার ওপর। সেখানেই ফলপ্রকাশে সবচেয়ে বেশী দেরী হবে বলে জানানো হয়েছে। কারণ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলে সেখানে বারবার ভোট গণনার পর নিশ্চিত হয়েই ফল ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন-ডোনাল্ড ট্রাম্প না কমলা হ্যারিস, আমেরিকার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে? নির্ধারণ করল AI

 ভোটের ফল দেখার সময় কোন কোন বিষয়গুলি নজর রাখতে হবে?

মার্কিন মুলুকে মোট ৫০টি প্রদেশ রয়েছে। প্রতিটি প্রদেশের নিজস্ব নিয়মে ভোট হয়। মার্কিন ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্টকে বেছে নেন না। তাঁরা বাছেন, ইলেকটোরাল কোলাজকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় মোট ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কোলাজের ওপর। অন্তত ২৭২টি ইলেকটোরাল ভোট পেলেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

এই ইলেকটোরাল কোলাজ কীভাবে ঠিক হয়?

৫০টি প্রদেশের জনসংখ্যা ও আয়তেন ওপর ইলেকটোরাল ভোটের পয়েন্ট নির্ধারিত হয়। সবচেয়ে বেশী ইলেকটোরাল ভোট আছে ক্লালিফোর্নিয়া (৫৪), টেক্সাস (৪০), ফ্লোরিডা (৩০)-র মত বড় প্রদেশগুলিতে। উওমিং, হাওয়াই, ভোরমোন্টের মত ছোট প্রদেশগুলিতে আছে ৩টি ভোট। নিয়ম হল, একটা প্রদেশে যে বেশী ভোট পাবে, সেই প্রার্থীই সেই প্রদেশের পুরো পয়েন্ট নিয়ে যাবে। মানে যাকে বলে 'উইনার টেক অল' যেমন বাইডেন গতবার ট্রাম্পের থেকে পেনসিলভিনিয়ায় মাত্র ১১ হাজার ভোট বেশী পেয়েছিলেন, কিন্তু ওই সামান্য ভোটের জন্য বাইডেন ১৯টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে মসনদে বসা নিশ্চিত করেছিলেন।

গোটা দেশে বেশী সংখ্যক ভোট পাওয়া আসল নাকি ইলেকটোরাল কোলাজ?

গোটা দেশে বেশী ভোট পেলেও ইলেকটোরাল কোলাজে হেরে গেলে সেই প্রার্থীর প্রেসিডেন্টের মসনদে বসা হয় না। মার্কিন মুলুকে ভোটে জিততে লাগে ইলেকটোরাল কোলাজ। এই যেমন, ২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রাট হিলারি ক্লিন্টন তাঁর রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকে ৩০ লক্ষের মত ভোট (পপুলার ভোট) বেশী পেলেও, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কারণ ট্রাম্প যেখানে ৩৬৪টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে হিলারি পান মাত্র ২২৭টি আসন। ম্যাজিক ফিগার যেখানে ২৭২।

সাম্প্রতিককালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর কোনবার হয়েছিল?

২০০০ সালে। যেখানে ডেমোক্রাট প্রার্থী আল গোর মুখোমুখি হয়েছিলেন রিপাবলিকান জর্জ বুশের। বিল ক্লিন্টনের উত্তরসূরি আল গোর তাঁর প্রতিপক্ষ বুশের থেকে ৫০ লক্ষের বেশী ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইলেকটোরাল কোলাজে মাত্র তিন ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যান আল গোর। জর্জ বুশ পান ২৭১টি, আর আল গোর ২৬৮টি ভোট। মাত্র একটা প্রদেশে ৫ হাজার ভোটের সামান্য ব্যবধানে হারায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি আল গোর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সেই প্রথমবার হয়, যেখানে গোটা দেশে বেশী ভোট (পপুলার) পেয়েও হেরে যান কোনও প্রার্থী। এরপর ২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন তাঁর প্রতিপক্ষ ট্রাম্পের চেয়ে বেশী পপুলার পেলেও ইলেকটোরাল কোলাজের ভোটে হেরে যান।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার নিয়ম কী?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার নিয়ম হল- স্য়ুইং স্টেটস বা ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটসগুলিতে জেতা। আমেরিকার ৫০টি-র মধ্যে প্রায় ৪৩টি প্রদেশেই ভোটাররা ডেমোক্রাট বা রিপাবলিকানদের মধ্যেই একজন প্রার্থীকে বারবার জিতিয়ে আসেন। যেমন আলাস্কা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা মানেই সেখানে জিতবেনই রিপাবলিকান প্রার্থী। সে যেই হোন। এগুলোকে বলে রেড স্টেট (যেহেতু রিপাবলিকান পার্টির রঙ লাল)। আবার ক্যালিফোর্নিয়া, কোলারাডো, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন, ভার্জিনিয়ার মত প্রদেশ মানেই জিতবেন ডেমোক্রাটরা। এগুলোকে বলে বব্লু স্টেট (যেহেতু ডেমোক্রাটদের প্রতীকে নীল রঙ আছে)। কিন্তু এমন কিছু রাজ্য আছে, যেখানে ভোটারদের রায় প্রতি ভোটে বদলায়। যাকে বলে সুইং স্টেট। এই সুইং স্টেটস বা পার্পল স্টেটসগুলি হল- পেনসিলভিনিয়া (১৯টি ইলেকটোরাল ভোট), নর্থ ক্যারোলিনা (১৬টি ভোট), জর্জিয়া (১৬টি ভোট), মিচিগান (১৫টি ভোট),আরিজোনা (১১টি ভোট), উইসকোনসিন (১০টি ভোট), ও নেভেদা (৬টি ভোট)। এই সুইং স্টেটগুলি মিলিয়ে মোট ৯৩টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে যে বেশী সংখ্যায় জিতবেন, তিনিই দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশের চেয়ারে বসবেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার ব্যাপারে কে এগিয়ে?

গত কয়েকটি নির্বাচনের থেকে অনেক বেশী কঠিন এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সব সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিস দ্বৈরথ ৫০:৫০। তবে স্যুইং স্টেটগুলিতে ৪-৩ এগিয়ে ট্রাম্প। আর পপুলার ভোটে অন্তত ১ শতাংশে এগিয়ে কমলা।

ফল সরাসরি কোথায় দেখা যাবে?

ভারতের সব নিউজ চ্য়ানেলেই আপডেট মিলবে। লেটেস্টলি-র ওয়েবসাইটেও থাকবে প্রতি মূর্হর্তের খবর। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এনবিসি-তে সরাসরি ভোট গণনার আপডেট ও ফলাফল দেখানো হবে।