Jalpaiguri Lok Sabha: রায় দ্বৈরথে ডাক্তার বনাম শিক্ষাবিদ, বিজেপির চ্যালেঞ্জ রাজবংশী ভোটে, তৃণমূলের চিন্তা ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি

আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের সঙ্গে জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ। এবার জলপাইগুড়ি লোকসভার লড়াই দারুণ জমজমাট। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কারা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে।

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারের সঙ্গে জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ। এবার জলপাইগুড়ি লোকসভার লড়াই দারুণ জমজমাট। আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কারা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে।

২০২৪ লোকসভার প্রার্থীরা

বিজেপি- জয়ন্ত কুমার রায়

তৃণমূল- নিমর্ল চন্দ্র রায়

সিপিআই (এম)-দেবরাজ বর্মণ

এসইউসি(আই)- রামপ্রসাদ মণ্ডল

আরও পডুন- Alipurduars Lok Sabha: বেলচা কোদালে ধরেছে মরচে, দুয়ারে জয়ের অপেক্ষা মনোজ টিগ্গার! পদ্মগড়ে হাল ছাড়ছে না তৃণমূল

প্রার্থীদের কথা--

জয়ন্ত কুমার রায় (বিজেপি)- পেশায় ডাক্তার। পৃথক রাজ্যের ইঙ্গিতে স্পষ্ট সায় ছিল তাঁর। প্রার্থী হিসেবে দলের সবার পছন্দের নন। শেষ মুহূর্তে টিকিট পান। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তাঁর প্লাস পয়েন্ট।

নির্মলচন্দ্র রায় (তৃণমূল): কয়েক মাস আগে বিধানসভা উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। ধূপগুড়ি গার্লস কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়। রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ তিনি। এলাকায় ভাবমূর্তিও অত্যন্ত স্বচ্ছ। দীর্ঘদিন ধরেই ভাওয়াইয়া গানের চর্চা করেন নির্মলচন্দ্র।

দেবরাজ বর্মণ (সিপিএম): সিপিএমের তরুণ প্রার্থী দেবরাজ বর্মণের প্রচারে অভিনবত্ব চোখে পড়ছে। তাঁর মিছিলে যুব সম্প্রদায়ের ভিড় চোখে পড়ছে।

কোন কোন বিধানসভায় কাদের লিড (২০২১ বিধানসভার ভিত্তিতে)

জলপাইগুড়ি জেলা

১) ধুপগুড়ি: তৃণমূল (মার্জিন: ৪ হাজার)

২) ময়নাগুড়ি: বিজেপি (মার্জিন: ১২ হাজার)

৩) জলপাইগুড়ি:তৃণমূল (মার্জিন: ৫ হাজার)

৪) রাজগঞ্জ:তৃণমূল (মার্জিন: ৭ হাজার)

৫) ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি: বিজেপি (মার্জিন: ২৮ হাজার)

৬) মাল:তৃণমূল (মার্জিন: ৬ হাজার)

কোচবিহার জেলা

১) মেখলিগঞ্জ:তৃণমূল (মার্জিন: ১৫ হাজার)

২০১৯ লোকসভায় জলপাইগুড়ি লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে ৬টি-তেই লিড পিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূলের একমাত্র লিড ছিল রাজগঞ্জ বিধানসভায়।

নজরকড়া বিষয়

২০২১ বিধানসভার ফলের ভিত্তিতে জলপাইগুড়ি লোকসভার সাতটির মধ্যে ৫টি-তে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। সেখানে বিজেপি জিতেছিল শুধু ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ও ময়নাগুড়িতে। কিন্তু তৃণমূল যে পাঁচটি বিধানসভায় জিতেছিল, তার মিলিত লিড প্রায় ৩৭ হাজার। সেখানে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি ও ময়নাগুড়ি-এই দুটি বিধানসভা মিলিয়ে বিজেপি এগিয়ে প্রায় ৪০ হাজারের বেশী। তবে গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির থেকে ১২ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিল তৃণমূল।

জলপাইগুড়ি লোকসভায় অন্তত ২৭ শতাংশ রাজবংশী ভোট রয়েছে।

২০১৯ লোকসভার ফল

জয়ন্ত কুমার রায় (বিজেপি): ৭,৬০,১৪৫ (৫০.৬৫%)

বিজয় চন্দ্র বর্মন (তৃণমূল): ৫,৭৬,১৪১ (৩৮.৩৯%)

ভগীরথ চন্দ্র রায় (সিপিএম): ৭৬, ০৫৪ (৫.০৭%)

বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায় জয়ী প্রায় ২ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে

বিজেপিকে জিততে হলে

এই লোকসভার ৭টি বিধানসভার মধ্যে ৫টি-তেই পিছিয়ে বিজেপি। এমনটা শুনে মনে হতেই পারে, এবার এখানকার বিজেপি-র বিদায়ী সাংসদ জয়ন্ত রায়ের জয়টা কঠিন। তবে জয়ন্তর সুবিধা হল যে দুটি বিধানসভায় বিজেপি জিতেছিল, সেখানকার মার্জিন অনেকটা বেশী। এক সময় রাজ্যের মন্ত্রী, বর্তমানে শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেবের এলাকা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে বিজেপির ২৮ হাজার লিড আছে। তবে শুধু ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির দিকে বেশী ভরসা করলে বিজেপি সমস্যা পড়তে পারে। কারণ গৌতম দেবের ওপর স্থানীয় ভোটারদের একাংশ ক্ষুব্ধ ছিলেন বিধানসভার ভোটে। সেই ফ্যাক্টাররা এবার থাকছে না। জয়ন্ত রায়কে জিততে হলে জলপাইগুড়ি, মাল থেকে বড় লিড নিতে হবে। সঙ্গে খগেশ্বর রায়ের রাজগঞ্জে তৃণমূলের লিড যাতে কিছুতেই বেশী না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে গেরুয়া শিবিরকে।

তৃণমূলকে জিততে হলে

গৌতম দেবের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আর ময়নাগুড়ি-এই দুটি বিধানসভা বড় মাথাব্যথা তৃণমূলের। তবে ধুপগুড়ির বিধায়ক নিমর্ল চন্দ্র রায় এলাকা পুনুরুদ্ধার ফর্মুলা ভাল করে জানেন বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি। মোট কথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আর ময়নাগুড়ির জমি পুনরুদ্ধার করা, আর ২০২১ বিধানসভার ফল ধরে রাখলে ১০ বছর পর জলপাইগুড়ি লোকসভায় তৃণমূলের দখলে ফিরতে পারে।

বাম ভোট

২০১৪ লোকসভায় জলপাইগুড়িতে সিপিআই (এম)-এর ভোট ছিল ৪ লক্ষ ২৫ হাজার। পাঁচ বছর পর সেটা কমে হয় মাত্র ৭৬ হাজার। ২৫ শতাংশ কমে যাওয়া বাম ভোটের প্রায় পুরোটাই যায় গেরুয়া শিবিরে। ২০১৪-২০১৯ লোকসভার মধ্যে বিজেপির ভোট বেড়েছিল ৫ লক্ষ ৪০ হাজার। তবে এবার বামেরা কিছুটা হলেও জমি উদ্ধার করেছে। বামেদের ভোট দেড় লক্ষ পাড় হলে বিজেপি বেশ সমস্যায় পড়বে।

বিজেপি-র স্বস্তি- তৃণমূলের দুর্নীতির কথা আর আলাদা করে প্রচার করতে হচ্ছে না।

তৃণমূলের স্বস্তি- গত লোকসভার মত এবার আর তেমন মোদী হাওয়া নেই। রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কও দিদির দলের সুবিধার।

তৃণমূলের এক্স ফ্যাক্টর- ঝড়ে দিদির ভূমিকা।

তৃণমূলের চিন্তা-ঝড়ে ত্রান বিলি।