Juggler Abhay Mitra Passes Away: প্রয়াত কিংবদন্তি জাগলার অভয় মিত্র, সত্যজিৎ রায়ের 'জয় বাবা ফেলুনাথের' আসল জাগলার তিনি

সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) 'জয় বাবা ফেলুনাথের' (Joy Baba Felunath) সেই দৃশ্যটা মনে আছে। যখন সাদা পাঞ্জাবী-ধুতি পরা মগনলাল মেঘরাজের হুকুম, ‘খিলা দিখানো হবে, দেখাবে অর্জুন।" তারপর জটায়ু রূপে অভিনেতা সন্তোষ দত্তের অমোঘ উক্তি, "এক মিনিট, শরবতটা খেয়ে নিই।" এরপর বোর্ডে হেলান দিতেই একের পর এক ছুরি ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-র এই দৃশ্য প্রত্যেক বাঙালির একান্ত আপন। কিন্তু সত্যজিৎ রায়, সন্তোষ দত্ত ছাড়াও এই পুরো দৃশ্যের মূল কাণ্ডারি ছিলেন আরও একজন। যিনি না থাকলে এই দৃশ্য বাঙালি মনে রাখতো না। তিনি, অভয় মিত্র (Abhay Mitra)। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাগলার (Juggler) নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

'জয় বাবা ফেলুনাথের' সই দৃশ্য

কলকাতা, ১২ এপ্রিল: সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) 'জয় বাবা ফেলুনাথের' (Joy Baba Felunath) সেই দৃশ্যটা মনে আছে। যখন সাদা পাঞ্জাবী-ধুতি পরা মগনলাল মেঘরাজের হুকুম, ‘খিলা দিখানো হবে, দেখাবে অর্জুন।" তারপর জটায়ু রূপে অভিনেতা সন্তোষ দত্তের অমোঘ উক্তি, "এক মিনিট, শরবতটা খেয়ে নিই।" এরপর বোর্ডে হেলান দিতেই একের পর এক ছুরি ধেয়ে আসছে তাঁর দিকে। ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-র এই দৃশ্য প্রত্যেক বাঙালির একান্ত আপন। কিন্তু সত্যজিৎ রায়, সন্তোষ দত্ত ছাড়াও এই পুরো দৃশ্যের মূল কাণ্ডারি ছিলেন আরও একজন। যিনি না থাকলে এই দৃশ্য বাঙালি মনে রাখতো না। তিনি, অভয় মিত্র (Abhay Mitra)। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাগলার (Juggler) নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

জানা গেছে, নিজের পাড়ায় লাঠিদা বলে পরিচিত ছিলেন অভয়বাবু। এক ডাকে লোকে চিনিয়ে দেবে বাড়ি। বাবা কালোসোনা মিত্রের কাছ থেকেই ছোটো বয়সে জাগলিংয়ের পাঠ নেওয়া। কিন্তু বাবাকে বেশিদিন কাছে পাননি। নিজের খেলায় অভয় মিত্র ছিলেন জাদুকর। জাগলিংয়ের সমস্ত কিছু নখদর্পণে ছিল তাঁর। সেইসঙ্গে ছিল এই শিল্পটার প্রতি দারুন ভালোবাসা। আরও পড়ুন: Coronavirus Lockdown: লকডাউনে বাড়িতে আটকে? Netflix-র ৬টি সিনেমা রইল আপনার জন্য

নিউজ ১৮ বাংলার খবর অনুযায়ী, একদিন অভয় মিত্রকে নিয়ে সোজা বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে চলে যান পি সি সরকার জুনিয়র। তখন ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ছবিটির পরিকল্পনা চলছে। আর তার জন্য একজন জাগলারের প্রয়োজন, যে থাকবে ক্যামেরার পেছনে, কিন্তু যার অব্যর্থ নিশানা দর্শকদের মাতিয়ে রাখবে। সত্যজিতের প্রশ্ন ছিল ঠিক তিনটি— ছোরা ছোঁড়ার খেলা দেখাতে পারবে কিনা? জাগলিং করতে পারবে কিনা? জানা যায়, দু’ধাপে হয়েছিল পরীক্ষা। ওইদিন বাড়িতেই সত্যজিৎ, বিজয়া ও সন্দীপ রায়কে জাগলিং-র বিভিন্ন খেলা দেখান। সত্যজিৎ রায় রীতিমতো চমকে ওঠেন। একটাই শব্দ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে, ‘ওয়েল ডান!’ পরের পরীক্ষাটি একটু ঝুঁকির ছিল। অভয় মিত্রকে নিয়ে ইন্দ্রপুরীর স্টুডিওতে হাজির হন সত্যজিৎ রায়। সেখানেই রাখা ছিল বিখ্যাত সেই বোর্ডটি। হঠাৎ সত্যজিৎ নিজেই দাঁড়িয়ে পড়লেন বোর্ডের সামনে। তারপর শুধু একটাই কথা- ‘ছোঁড়ো'। পরখ করে খুশি হয়েছিলেন তিনি। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। পর্দায় কামু মুখোপাধ্যায় অর্জুনের রোলটি করলেন। আর পেছন থেকে অব্যর্থভাবে ছুরিগুলো ছুঁড়লেন অভয় মিত্র। তৈরি হল বাংলা সিনেমার অমর দৃশ্যের একটি।

পরে ‘ফটিকচাঁদ’, ‘গুপি বাঘা ফিরে এল’-তেও তাঁর জাগলিং আমরা দেখতে পাই। বিশেষ পরিচয় ছিল মাদার টেরেসা’র সঙ্গে। তাঁর একান্ত স্নেহভাজনও ছিলেন। জীবনে পেয়েছেন বহু সম্মান। অবশ্য গোটা জীবনে লক্ষ্য ছিল একটাই, এই মাদারির খেলা যেন তাঁর মৃত্যুর পরও টিকে থাকে। সন্তানদের শিখিয়েছেন, নাতি-নাতনিদেরও শিখিয়েছেন। কিন্তু দুঃখ ছিল একটাই, এখনকার প্রজন্ম খুব বেশি এখানে আসছে না। জাগলিং অ্যাকাডেমিও শুরু করেছিলেন, কিন্তু সাড়া পাননি তেমন। সেই চিন্তা নিয়েই চলে গেলেন ‘লাঠি দা’ অভয় মিত্র। গোটা উত্তরপাড়া আজ শোকস্তব্ধ। রিষড়া শ্মশানে ততক্ষণে বিলীন হয়ে গেছেন ‘লাঠি দা’।