লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর বাংলার মানুষের মন ফিরে পেতে কোন পাঁচটা জিনিস করতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি
আট বছর রাজ্যের সিংহাসনে বসার পর এই প্রথম মমতা ব্যানার্জি বেশ চাপে। সারদা,নারদা কেলেঙ্কারির পরও রাজ্যের মানুষ মমতাকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। মমতা দিদি একবার কাছে এলেই বাংলার ভোটাররা সব ভুলে গিয়ে জোড়া ফুলে ছাপ মারেন, এই ফর্মুলা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কাজ করল না। বরং নরেন্দ্র মোদি ঝড়ে দিদির সিংহাসন খুব মজবুত দেখাচ্ছে না।
কলকাতা, ২৯ মে: আট বছর রাজ্যের সিংহাসনে বসার পর এই প্রথম মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee) বেশ চাপে। সারদা,নারদা কেলেঙ্কারির পরও রাজ্যের মানুষ মমতাকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন। মমতা দিদি একবার কাছে এলেই বাংলার ভোটাররা সব ভুলে গিয়ে জোড়া ফুলে ছাপ মারেন, এই ফর্মুলা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কাজ করল না। বরং নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ঝড়ে দিদির সিংহাসন খুব মজবুত দেখাচ্ছে না। সিপিএম এতগুলো বছরে যা পারেনি, সেটাই করে দেখাচ্ছে মোদি-মুকুল জুটি। একদিকে দেশব্য়াপি মোদি ঐতিহাসিক জয়, রাজ্যে ১৮টি আসনে বিজেপি (BJP)-র জয়, তার মধ্যে আবার মুকুল রায়ের চালে একের পর এক বড় নেতা তৃণমূল ছাড়ছেন। ক দিন হতাশ থাকার পর সিংহাসন বাঁচাতে ফের গা ঝাড়া দিয়ে উঠছেন দিদি। গতকাল, রাজ্য মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল ঘটিয়ে মমতা উন্নয়নের রাস্তায় বাজিমাত করতে চাইছেন। বিজেপি ১২৮টি বিধানসভায় এগিয়ে রয়েছে, দলের কিছু বিধায়কও দল ছেড়েছেন, হয়তো আরও বিধায়কও দল ছাড়তে পারেন।
এমন একটা সময় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি বেশ কিছু জিনিস করতে চলেছেন-দেখুন সেগুলি কী কী
১) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, নানা প্রকল্পে জোর
রাজ্যে কর্মসংস্থানের অবস্থা যে ভাল নয় সেটা মমতা ব্যানার্জি মুখে স্বীকার করেন না। তবে তৃণমূলের নেতারা মানেন কর্মসংস্থানের বিষয়টা তাদের ভোগাচ্ছে। জেলায় জেলায় কর্মসংস্থান নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। সরকারী কাজ তো বটেই, সেভাবে শিল্প না এলেও বেসরকারী ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থার হার প্রত্যাশিত নয়, অন্য রাজ্যে গিয়ে বাংলার মানুষের কাজ করার সংখ্য়া বাড়ছে। মমতা চাইছেন বাংলার মানুষকে অনেক কাজের ব্যবস্থা করে আস্থা ফেরানো। পাশাপাশি কন্যাশ্রী-যুবশ্রীর মত আরও নানা প্রকল্পে জোর দেওয়া।
২) দলে শুদ্ধিকরণ, দূরে সরে যাওয়া নেতাদের কাছে টানা
সিপিএম ক্ষমতায় থেকে সরার আগে যে সমস্যায় পড়েছিল, তেমনটা নাকি তৃণমূলের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। নেতারা ক্ষমতার মোহে মানুষের কথা ভুলছেন। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করছেন। নেতাদের ঘরবাড়ি. জীবনযাত্রার মান এমন জায়গায় গিয়েছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করছে। দিদি এবার দলে শুদ্ধিকরণের পথে। ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু কারণে দল থেকে দূরে সরে যাওয়া নেতাদের কাছে টেনে একসঙ্গে ঝাঁপাতে চান মমতা। দিদি বুঝেছেন, এবাবে চললে বিজেপি-র বিজয়রথ রোখা যাবে না।
৩) ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন নেতাদের মানুষের কাছে ফিরে যাওয়া
ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন নেতারা দলের ক্ষতি করছেন। জেলায় জেলায় বেশ কিছু নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। সিপিএম ক্ষমতায় থাকার শেষের দিকে ঠিক একই সমস্যায় পড়েছিল। এসি বাড়ি, গাড়িতে থেকে মানুষের ঘামের দাম দিতে ভুলে যাওয়া নেতাদের মানুষের কাছে ফিরে যাওয়ার কথা পরার্মশ দিয়েছেন মমতা।
৪) বাম মনোভাবাপন্ন মানুষদের কাছে টানা
সিপিএমকে হারাতে মমতা হাত মিলিয়েছিলেন এসইউসি (আই), এককালের দাপুটে নকশাল নেতাদের সঙ্গে। হাতে নাতে ফলও পেয়েছিলেন। সিঙ্গুর আন্দোলনে বাম মনোভাবাপন্ন মানুষদের পাশে পেয়ে মমতার অনেক লাভ হয়েছিল। এবার রাজ্যে বিজেপি-র জয়ের সবচেয়ে বড় কারণ-বাম ভোটের প্রায় পুরোটাইস তাদের ভোটবাক্সে চলে যাওয়া। রাজ্যের বামমনোভাবাপন্ন মানুষ মমতার ওপর ক্ষুব্ধ। তাদেক কাছে টানার কাজটা করার কথা ভাবছেন মমতা।
৫) কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া
গতবারের থেকেও বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছেন নরেন্দ্র মোদি। এবার মোদি বিরুদ্ধে আন্দোলনের অনেক সুযোগ থাকছে। কারণ ভারতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতা থাকার ৫-১০ বছরটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক। এই সময়ই মানুষের মনে প্রতিষ্টান বিরোধিতার হাওয়া ওঠে। দিদি চাইছেন, রাজ্যজুড়ে কেন্দ্র বিরোধী আন্দলোন তুঙ্গে তুলে ফের রাজ্যের মানুষের মন ফিরে পাওয়া।