Cyclone Bulbul: বুলবুলের তাণ্ডবে রাজ্যে মৃত ৭, আগামীকাল বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের (Cyclone Bulbul) দাপটে রাজ্যে ৯ জনের মৃত্যু (Death) হল। ২৪ ঘণ্টার খবর অনুযায়ী, এদের মধ্যে শনিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় (South 24 pargana) মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বাকি ২ জনের মৃত্যু হয়েছে কালনা (Kalna) এবং নন্দীগ্রামে (Nandigram)। কলকাতাতে (Kolkata) গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে আর একজনের। শনিবার রাতভোর তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) দিকে চলে গেছে বুলবুল। তার আগে লণ্ডভণ্ড করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা-পূর্ব মেদিনীপুরের (East Mednipur) বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর।

বুলবুলের তাণ্ডব (Photo: ANI)

কলকাতা, ১০ নভেম্বর: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের (Cyclone Bulbul) দাপটে রাজ্যে ৭ জনের মৃত্যু (Death) হল। বিবৃতিতে জানিয়েছে নবান্ন। এর আগে  দুর্যোগ মোকাবিলা দফতরের মন্ত্রী জাভেদ খান ৬ জনের মৃত্যুর কথা বলেছিলেন। ২৪ ঘণ্টার খবর অনুযায়ী,   বিপর্যয় মোকাবিলা ও নাগরিক সুরক্ষা দফতর থেকে পেশ করা শেষ বিবৃতি অনুযায়ী, বুলবুল-এর তাণ্ডবে রাজ্যে মোট ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, দেওয়াল চাপা পড়ে একজনের প্রাণহানি ঘটেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। আর পূর্ব মেদিনীপুরে গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। শনিবার রাতভোর তাণ্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের (Bangladesh) দিকে চলে গেছে বুলবুল। তার আগে লণ্ডভণ্ড করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা-পূর্ব মেদিনীপুরের (East Mednipur) বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর।

বুলবুলের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত বসিরহাট, হিঙ্গলগঞ্জ, নোদাখালি। গোকনা গ্রামে মৃত্যু হয়েছে বছর চল্লিশের রেবা বিশ্বাসের। পরিবারের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। রাত ৩টের সময়ে ঝড়ের দাপটে তার ঘরের ওপরেই ভেঙে পড়ে শিরিষ গাছ। মারা যান বছর রেবাদেবী। বুলবুলের দাপটে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে। মারাত্মক জখম হন মইদুল গাজি নামে এক ব্যক্তি। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মারা যান মইদুল। পাশাপাশি ঝড়ের দাপটে ঘর চাপা পড়ে মারা যান হিঙ্গলগঞ্জ মালেকানঘুমটির বাসিন্দা সুচিত্রা মণ্ডল। নোদাখালিতে বুলবুলের তাণ্ডবে উড়ে যায় ঘরের চাল। জল ঢুকে যায় ঘরে, তারমধ্যেই টিভির সুইচ অন করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান বছর পনেরোর কিশোর সুদীপ ভক্ত। এ ছাড়াও গাছ চাপা পড়ে দুই মহিলার মৃত্যু হয়েছে সন্দেশখালি ও হিঙ্গলগঞ্জে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি ও মৈপিঠে প্রচুর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে সাগর নামখানা ও মৌসুমী দ্বীপে। নামখানায় ভেঙে পড়ে ২ জেটি। অন্যদিকে নন্দীগ্রামে ভেকুটিয়ায় রাতে স্বামী সন্তানকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন সুজাতা দাস। মাঝরাতে ঘরের ওপর ভেঙে চাপা পড়ে মারা যান সুজাতা। আরও পড়ুন: Cyclone Bulbul Updates: যতটা গর্জাল ততটা বর্ষাল না, শক্তি হারিয়ে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল; বিকেলের মধ্যেই স্বাভাবিক হবে পরিস্থিতি

এদিন বর্ধমানের কালনাতেও মৃত্যু হয়েছে এক কৃষকের। রাতে ফসলের হাল দেখে বাড়ি ফিরছিলেন সমীর মজুমদার। তখনই আচমকা ছিঁড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার। পথেই মারা যান সমীরবাবু। কলকাতায় শনিবার সন্ধেতে বালিগঞ্জে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়ছে এক যুবকের। সাউথ ট্যাংরা রোডের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম শেখ সোহেল। এছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরের বহু চাষের জমিতে জল জমেছে। নষ্ট হয়েছ ফসল। ভেঙে পড়েছে প্রচুর কাঁচা বাড়ি। দিঘা-শংকরপুরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপড়ে গেছে প্রচুর গাছ। কলকাতা পুলিশের এলাকায় মোট ৩০টি গাছ ভেঙে বা উপড়ে পড়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। জানাল কলকাতা পুলিশ। তপসিয়ায় গাছ উপড়ে তার নীচে চাপা পড়েছিলেন লালবাতি মল্লিক নামে এক মহিলা। তাঁকে উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

এদিকে উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে আগামীকালই 'বুলবুল' বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। হেলিকপ্টারে চেপে তিনি এরিয়াল সার্ভে করবেন। নামখানা ও বকখালির পরিস্থিতি পরিদর্শন করবেন তিনি। তারপর বুলবুল দুর্গত মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিয়ে কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি জেলার জেলাশাসকদের প্রাথমিক রিপোর্ট নবান্নে এসে পৌঁছেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৯ জেলার ৩ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ের ফলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ হাজারের বেশি বাড়ি। প্রায় ৯ হাজার গাছ উপড়ে পড়েছে। ৯৫০টি মোবাইল টাওয়ার ভেঙে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে পরিস্থিতি জেনেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার টুইট করে একথা জানিয়েছেন তিনি। মমতা ব্যানার্জিকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, কেন্দ্র এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ১০টি এবং ওড়িশায় ৬টি দল উদ্ধারকাজে ইতিমধ্যে হাত লাগিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৮টি দলকে।