Natural Disasters of 2024: উত্তরাখণ্ডের ভূমিধস থেকে হ্যারিকেন হেলেনা, জাপানে ভূমিকম্প-সুনামি, ভয়াবহ বিপর্যয়ের ২০২৪
২০২৪ সাল জুড়ে চলল প্রাকৃতিক দুর্যোগ,বিপর্যয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন, পরিবেশ পরিবর্তনের মত বিষয় দুনিয়ার ওপর যত প্রভাব ফেলছে ততই বাড়ছে বন্যা, ভূমিকম্প, ঘর্ণিঝড়, সাইক্লোন, দাবানলের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: ২০২৪ সাল জুড়ে চলল প্রাকৃতিক দুর্যোগ,বিপর্যয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন, পরিবেশ পরিবর্তনের মত বিষয় দুনিয়ার ওপর যত প্রভাব ফেলছে ততই বাড়ছে বন্যা, ভূমিকম্প, ঘর্ণিঝড়, সাইক্লোন, দাবানলের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয়। গত দশ বছরে বিশ্বজুড়ে বন্যার ঘটনা। এক রিপোর্টে প্রকাশ, ২০২৪ সালে গোটা দুনিয়া জুড়ে চলা বন্যার ভয়বহতা আগের সব বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে।
১) জাপানে ভূমিকম্প (Japan Earthquake):
২০২৪ সালের প্রথম দিনটাই শুরু হয়েছিল ভয়াবহ ভূমিকম্প দিয়ে। পশ্চিম জাপানের ইশিকাওয়াতে ৭.৪ মাত্রার তীব্র কম্পনের পর জারি হয়েছিল সুনামি সতকর্তা৷ তারপর থেকে ১৫৫ বার কম্পন অনুভূত হয়েছিল৷ রিখটার স্কেলে প্রতিটি তীব্রতা ছিল ৬ থেকে ৭৷ ছোট মাত্রার সুনামিও আঘাত করেছিল জাপানের দ্বীপপুঞ্জে। বছরের শুরুতে জাপানের ক্রমাগত কম্পন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সমুদ্র পিছিয়ে গিয়েছিল। সমুদ্র ঘেঁষে জেগে উঠেছে ২৫০ মিটার স্থলভাগ। এই ভূমিকম্পে জাপানে ৪৭৫ জন প্রাণ হারান, গুরুতর জখম হন দেড় হাজার জন।
২) অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল:
নিউ সাউথ ওয়েলশ, ভিক্টোরিয়া সহ অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় দাবানলের ভয়াবহতার মাত্রা ছাপিয়ে গিয়েছিল সব কিছুকে।
৩) নেপালের ভয়াবহ বন্যা:
চলতি বছর সেপ্টেম্বরে 54 বছরের রেকর্ড বৃষ্টিতে বন্যা-ধস, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে নেপালে মৃতের সংখ্যা ২২৫ ছাড়িয়ে যায়।
৪) ইন্দোনেশিয়ায় ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি:
চলতি বছর নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার লাকি-লাকি পর্বতের আগ্নেয়গিরির ভয়াবহতা দেখে চমকে উঠছিল বিশ্ব। ইস্ট নুসা তেনগারা প্রদেশের ফ্লোরস দ্বীপের মাউন্ট লেওতোবি লাকি-লাকি পর্বতে অগ্ন্যুৎপাতে অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়।
৫) পূর্ব আফ্রিকায় সাইক্লোন আনিকা:
বছরজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের ঘটনা ঘটল। কলকাতায় সাইক্লোন দানা-র ঝাপটা থেকে তামিলনাড়ুতে ঘূর্ণিঝড় ফেঙ্গালের দাপট-সব কিছুই হল চলতি বছর। তবে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব আফ্রিকায় হওয়া সাইক্লোন আনিকার যা ভয়াবহতা তা সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল। ঘূর্ণিঝড় আনিকার প্রভাবে পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিক, তানজানিয়া, মাদাগাসকারের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ঘর হারালেন। ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার আছড়ে পড়ার পর কমপক্ষে সাড়ে ৬৫০ জন মারা যান, এখনও নিখোঁজ শতাধিক।
৬) জাম্বিয়ার খরা:
গত একশো বছর এত বড় মাপের খরা দেখা যায়নি, যেটা ২০২৪ সালে হল আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়া। এল নিনোর প্রভাবে হওয়া জাম্বিয়ার খরার প্রভাব পড়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষের জীবনে। এক ফোঁটা জলের জন্য জাম্বিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের হাহাকার দেখে আঁতকে উঠেছিল বিশ্ব।
৭) হ্যারিকেন হেলেন:
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকুলে আছড়ে পড়া হ্যারিকেন হেলেন তছনছ করে দিয়েছিল সব কিছুকে। ফ্লোরিডায় হ্যারিকেন মাঝে মাঝেই লেগে থাকে ঠিকই, কিন্তু হেলেনের মত এত বড় মাত্রার ঝড় সেখানে গত ৫০ বছরে দেখা যায়নি। অনেক সতর্কতা নেওয়া হলেও হেলেনে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। উপকূলবর্তীর বহু বাড়িই সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
৮) জুনে হওয়া চিলির ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্প:
২০২৪ সালের জুনে হওয়া মধ্য চিলির উপকূলবর্তী অঞ্চলে হওয়া ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পের তীব্রতা বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ কম্পন ছিল। এই ভূমিরম্পে বেশ বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পপ্রবণ দক্ষিণ আমেরিকার লঙ্কা আকৃতির দেশে শতাধিক মানুষ মারা যান।
৯) ফিলিপিন্স ও চিনে টাইফুন:
ফেব্রুয়ারিতে হওয়া ফিলিপিন্স ও চিনে ১৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় যে ভয়াবহ টাইফুন এসেছিল, তার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়। ভয়াবহতার বিচারে গত ২৫ বছরে এত বড় আকারের টাইফুন হয়নি চিনে। দুই দেশ মিলে ৩২৫ জনের বেশী মানুষ মারা যান। এক সপ্তাহের বেশী সময় ধরে দশ লক্ষাধিক বাড়ি বিদ্যুতহীন থাকে। টাইফুনের প্রভাবে বন্যার জল নামতে লেগে যায় দিন কুড়ি।
১০) বাংলাদেশে সাইক্লোন নোরার প্রভাবে বন্যা:
বঙ্গোপসাগরে থেকে তৈরি হওয়া সাইক্লোন নোরা আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশ ও মায়নামারের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। মে মাসে হওয়া প্রায় ১৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় আঘাত হানা নোরার প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দুই দেশে ভয়াবহ বন্যা হয়।