Mamata Banerjee TMC: সবচেয়ে ভাল থেকে খারাপ, বাংলায় কোন নির্বাচনে কেমন ফল করে তৃণমূল
রাজ্যে বিরোধীদের একেবারে ধরাশায়ী করে এবারের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মী, সমর্থকদের কী বার্তা দেন সেটাই দেখার।
২১ জুলাই। তৃণমূলের শহীদ দিবস। গোটা রাজ্য থেকে কর্মী, সমর্থকরা ভিড় করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ শুনতে। রেকর্ড ভিড়ে ভাসতে চলেছে এবারের তৃণমূলের শহীদ দিবস। লোকসভা নির্বাচন ও চার কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনে দারুণ জয়ের পর এবারের তৃণমূলের শহীদ দিবস কার্যত বিজয় উতসবে পরিণত হতে চলেছে। রাজ্যে বিরোধীদের একেবারে ধরাশায়ী করে এবারের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় কর্মী, সমর্থকদের কী বার্তা দেন সেটাই দেখার।
এমন সময় দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের শাসক দলের নির্বাচনী রেকর্ড নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য--
তৃণমূলের সেরা ফল-
২০১৪ লোকসভা নির্বাচন
বাংলায় ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর হওয়া এই লোকসভা ভোটে ৪২টি-র মধ্যে তৃণমূল ৩৫টি আসনে জিতে নজির গড়ে। সেখানে বিজেপি মাত্র ২টি আসনে জেতে (দার্জিলিং,আসানসোল)। দেশজুড়ে নরেন্দ্র মোদী ঝড় তুলে ক্ষমতায় বসলেও, বাংলায় দিকে দিকে চলে দিদি ম্যাজিক।
সবচেয়ে খারাপ ফল-
২০০৪ লোকসভা নির্বাচন
সিপিএমকে হারানোর ব্রত নিয়ে নেমে মমতা তখন রাজ্যজুড়ে আন্দোলন গড়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলীয় কোন্দল, পরিকল্পনাহীন লড়াই, সংগঠনের দিকে তেমনভাবে নজর না দেওয়ার খেসারত দিয়ে শুধুমাত্র দিদি গড় দক্ষিণ কলকাতা ছাড়া রাজ্যের সব জায়গায় হারে তৃণমূল। সেটাই ছিল জোড়া ফুলের দলের সবচেয়ে খারাপ সময়।
সবচেয়ে তৃপ্তির জয়-
২০২১ বিধানসভা নির্বাচন
দু বছর আগে লোকসভায় বড় ধাক্কা খায় তৃণমূল। অনেকেই বলেছিলেন, ২০২১ বিধানসভায় জিতে বাংলায় বিজেপির প্রথমবার ক্ষমতায় আসা সময়ের অপেক্ষা। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ-রা প্রাণপাত করে বারবার বাংলায় ছুটে এসে প্রচার করেন। অমিত শাহ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলেন, এবার বাংলায় বিজেপি ২০০-র বেশী আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসবে। বাংলায় এর আগে রাজ্যের শাসক দলকে হারাতে এত হাইপ্রোফাইল দেখা যায়নি, যেটা করেছিল বিজেপি।
শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশাখী ডালমিয়া সহ একঝাঁক মন্ত্রী, বিধায়করা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় মনে হয়েছিল এবার দিদিকে বাজিমাত করবেন মোদী। কিন্তু কোথায় কী? সব চ্য়ালেঞ্জ উড়িয়ে রেকর্ড ২১৫টি আসনে জিতে টানা তিনবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা।
সবচেয়ে হতাশার-
২০০৬ বিধানসভা নির্বাচন
হয় এবার, নয় নেভার। তৃণমূল নেতারা বলেই দিয়েছিলেন, এবার না পারলে আর সিপিএমকে কখনও হারানো যাবে না। মমতা তার সব শক্তি উজাড় করে প্রচার চালিয়ে ছিলেন, কিন্তু না, সেবার পুরো ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। বামেরা ২৩৫টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরে, সেখানে তৃণমূল পায় মাত্র ৩০টি আসন।
সবচেয়ে লজ্জার হার
২০১৯ লোকসভায় জঙ্গলমহলে হার
২০১৯ লোকসভায় মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর- রাজ্যের জঙ্গলমহলের সব কটি আসনে হেরেছিল তৃণমূল। অথচ জঙ্গলমহলেই সবচেয়ে বেশী আস্থা ছিল তৃণমূলের
সবচেয়ে কঠিন জয়
২০০০ পাঁশকুড়া লোকসভা উপনির্বাচন
বাম গড় পাঁশকুড়ায় তখন এর আগে কখনও হারেনি সিপিআই। তৃণমূল তখন সবে বছর দুয়েকের দল। সেই অঞ্চলে সংগঠন বলতে কিছুই নেই। বুথে এজেন্ট দেওয়া তো দূরের কথা দলের পতাকা বইবার লোকেরও অভাব। সেই সময় এসে পড়ে উপনির্বাচন। সিপিআই প্রার্থী করে গুরুদাস দাশগুপ্ত-কে। সেখানে দিদি দাঁড় করান বিক্রম সরকার-কে। সব হিসেব উল্টে জিতে যান বিক্রম সরকার। তৃণমূলের ইতিহাসে অনেক কঠিন জয় এসেছে, কিন্তু তাদের মধ্যে এক নম্বর বাছতে বললে এই জয়টাই হয়তো প্রথমে আসবে। ২০১১ বিধানসভা যাদবপুরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-কে হারানোও অবশ্যই দলের সেরা জয়গুলির তালিকায় থাকবে।
এখনও জেতা হয়নি যেখানে
দার্জিলিংয়ে লোকসভা ও বিধানসভা আসন
পাহাড়ে শত চেষ্টা করেও জেতা হচ্ছে না তৃণমূলের।
মালদায় লোকসভায় আসন
মালদা বারবার হতাশ করেছে দিদিকে। এবারও লোকসভার দুটি আসনেই হেরেছে তৃণমূল। একটিতে বিজেপির কাছে, অন্যটিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তবে ২০২১ বিধানসভায় এখানে ভাল করেছিল তৃণমূল।
মাদারিহাটে বিধানসভা আসন
আলিপুরদুয়ার লোকসভার এই কেন্দ্রে কখনই জিততে পারেনি তৃণমূল। ২০১৬ ও ২০২১ বিধানসভায় এখান থেকে অনায়াসে জেতেন বিজেপির মনোজ টিগ্গা। তার আগে ২০১১ বিধানসভায় জেতেন আরসিপির কুমার কুজুর। তার আগে আরএসপি-র দখলেই ছিল মাদারিহাট।
২০২৬ বিধানসভায় লক্ষ্য
১) ২৩৫+ আসনে জেতা: ২০২৪ লোকসভায় ২৯টি লোকসভায় জয়, আর ১৯৩টি বিধানসভায় লিড ছিল তৃণমূলের। তবে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব, মোদী হাওয়া একেবারে না থাকলে অন্তত ২২০টি বিধানসভায় লিড থাকার সুযোগ ছিল রাজ্যের শাসক দলের। তবে এবার মমতা, অভিষেকের লক্ষ্য হবে ২০০৬-এ বামেদের ২৩৫ আসন একাই ছাপিয়ে যাওয়া।
২) শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্কে আগের দাপট ফেরানো: লোকসভায় ভাল ফল করলেও, শহুরে মধ্যবিত্ত ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ দিদির থেকে মুখ ফিরিয়েছে সেটা পরিষ্কার। পুর এলাকায় বিজেপির ফল ভাল হয়েছে। এই ভোটব্যাঙ্ক ফেরত পাওয়াই তৃণমূলের লক্ষ্য হবে।
কঠিন চ্যালেঞ্জ
১) তমলুক, কাঁথি, নন্দীগ্রাম উদ্ধার।
২) উত্তর বঙ্গে ভাল ফল।
৩) পাহাড় রাজনীতির অঙ্ক মেলানো দখল।
৪) দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্ব রোখা
৫) দলের একাংশের দুর্নীতি রোখা
এক নজরে কোন নির্বাচনে কটা আসনে জেতে তৃণমূল--
২০২৪ লোকসভা নির্বাচন (৪২টি আসন)
২৯টি আসনে জয়।
২০২১ বিধানসভা নির্বাচন (২৯৪টি আসন)
২১৫টি আসনে জয়।
২০২১ কলকাতা পুরসভা নির্বাচন
১৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩৫টি-তে জয়।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচন
১৯টি আসনে জয়
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন
১৮৪টি আসনে জয়
২০১৪ লোকসভা নির্বাচন
৩৫টি আসনে জয়
২০১১ বিধানসভা নির্বাচন
১৮৪টি আসনে জয়
২০০৯ লোকসভা নির্বাচনে
১৯টি আসনে জয় (কংগ্রেস (৬), এসইউসিআই (১)-য়ের সঙ্গে জোটে দিদির দিকে এসেছিল ২৬ সাংসদের সমর্থন)।
২০০৬ বিধানসভা নির্বাচন
৩০টি আসনে জয়
২০০৪ লোকসভা নির্বাচন
১টি আসনে জয় (শুধুমাত্র দক্ষিণ কলকাতায়)
২০০১ বিধানসভা নির্বাচন
৬০টি আসনে জয়
১৯৯৯ লোকসভা নির্বাচন
৮টি আসনে জয়