West Bengal Politics: মাত্র ক'দিনে নাটকীয় ভাবে বদলে গেল রাজ্য রাজনীতি, দিদিকে ব্যাকফুটে ঠেলে পদ্মের দাপাদাপি

নাটকীয় বললেও হয়তো কম বলা হবে। আর দিন কুড়ি আগেও অনেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ফের দেশের ক্ষমতায় এলেও, রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)-র প্রভাবই বজায় থাকবে।

মমতাকে জোর ধাক্কা দিলেন মুকুল রায়। (File Photo)

কলকাতা, ৩ জুন: নাটকীয় বললেও হয়তো কম বলা হবে। আর দিন কুড়ি আগেও অনেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ফের দেশের ক্ষমতায় এলেও, রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)-র প্রভাবই বজায় থাকবে। ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল (TMC) ৩২-৩৫ কিংবা তার বেশি আসনও জিততে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল, সেখানে বিজেপি (BJP) বড়জোড় ৫-৭টি আসন। প্রচারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রীকে এনেও দিদির সঙ্গে টেক্কা দিতে পারছিল না বিজেপি। মমতার সভাতেই বেশি ভিড় চোখে পড়ছিল। কিন্তু দেশের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত আর হিংসা ছড়ানো নির্বাচনে শেষ ফল যখন প্রকাশ পেল তখন অনেকের চক্ষু চড়ক গাছ।

২৩ মে ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল রাজ্যের ৪২টি লোকসভা-র মধ্যে ১৮টি আসন জিতে চমকে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূলের আসন এক ডজন কমে ২২, বামেরা সম্পূর্ণ মুছে গিয়েছে। ৪২টি-র মধ্যে ৪১টি আসনে বামেদের জামানত জব্দ হয়েছে। কংগ্রেসের আসন কমে হয়েছে ২টি। এই ফলটা রাজ্য বিজেপি নেতারা সেভাবে আশা করতে পারেননি। শুধু ১৮টি আসন নয়, ভোট শতাংশের বিচারেও বঙ্গে চমকপ্রদ উত্থান বিজেপির। একলাফে ৪০ শতাংশে বেশি ভোট পেল মোদী-শাহ-র দলের। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল, বর্ধমান তো বটেই ব্যারাকপুর, বনগাঁ, রানাঘাট, হুগলিতেও ঐতিহাসিক জয় পেল দেশের শাসক দল। সঙ্গে আরামাবাগের মত কেন্দ্রেও জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বিজেপি। দেশের পাশাপাশি রাজ্যেও বিজেপি-র ঐতিহাসিক ফলের পর একেবারে চাপে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। দেশের বাকি বিরোধী নেতাদের মত দিদি খড়কুটোর মত উড়ে না গেলেও. রাজ্যে তাঁর সিংহাসন ধরে রাখার কাজটা যে বেশ কঠিন হয়ে গেল সেটা পরিষ্কার। অবাক করা কথা হল ২৭২ বিধানসভার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এখন ১২৮টি কেন্দ্রে এগিয়ে। রাজ্যের বহু তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রী তাদের কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়েছেন। আরও পড়ুন- ফেসবুক, টুইটারে ডিপি বদলে কী রাখলেন মমতা 

তৃণমূল সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে মারাত্মক দিক হল, দিদির দলে ভাঙন ধরেছে। ইতিমধ্যেই দু জন বিধায়ক, শতাধিক কাউন্সিলর দল ছেড়েছেন। মুকুল রায়, অর্জুন সিংরা যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছেন তাতে আগামী দিনে তৃণমূলে আরও ভাঙন হয় কি না সেটা দেখার। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত এসে পড়েছে বিজেপি-র জয় শ্রীরাম স্লোগান। দিদির কনভয় লক্ষ্য করে জয় শ্রীরাম স্লোগান শোনা যাচ্ছে। তাতে দিদি মেজাজ হারাচ্ছেন। যে ভিডিও টিভি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পর মমতার ভাবমূর্তিতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। এবারের লোকসভা ভোটের 'ম্যান অফ দি ম্যাচ' মুকুল রায় এতে বেজায় খুশি। তাঁর মাস্টারস্ট্রোকে বিজেপি অন্তত পাঁচটা আসনে জিতেছে। মোদি টু মন্ত্রিসভায় বাংলা থেকে মাত্র ২জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হলেও রাজ্যে বিজেপি নেতাদের ক্ষোভটা চরমে নয়। কারণ তাঁরা বুঝতে পারছেন দিদিকে সিংহাসন থেকে সরানোর খুব কাছে আছেন তারা।

তবে এটাও ঠিক অতীতে এমন বহু কঠিন জায়গা থেকে দিদি ঠিক ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছেন। কোণঠাসা মমতার পাশে বাংলার মানুষ বেশ কয়েক বছর ধরে আছে। যদিও মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষরা বলছেন, দিদির সেসব দিন অতীত। রাজ্য বিজেপি নেতাদের দাবি, এখন বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়। বাংলার কুর্সিতে বিজেপি আসা নাকি শুধু সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূলের নেতারা মুকুলদের দাবি হেসে ওড়াচ্ছেন। পরিসংখ্যানে এখনও কিছুটা এগিয়ে তৃণমূল। বাকিটা ভবিষ্যত বলবে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন জমে গিয়েছে।



@endif