West Bengal By Assembly Poll: এবার রাজ্যের যে দশটি বিধানসভা আসনে হবে উপনির্বাচন
লোকসভা নির্বাচনের পর এবার বাংলায় হবে দশটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। সেখানের জনপ্রতিনিধিরা বিধায়ক পদ ছেড়ে লোকসভা ভোটে লড়ায় সেই বিধানসভা আসনগুলি খালি হয়ে গিয়েছে।
লোকসভা ভোটের পালা শেষ। নরেন্দ্র মোদীকে ধরাশায়ী করে বাংলায় নিজের ম্যাজিক আরও একবার প্রমাণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ঝাঁপালেও ২৯টি আসনে জয়, ৪৫ শতাংশের বেশী ভোট পেয়ে বাংলায় তাঁর কুর্সি মজবলুত করেছেন দিদি। বাংলার রাজনীতিতে এবার বিজেপির কাজ অনেকটা কঠিন হতে চলেছে। অধীর চৌধুরীর প্রত্যাবর্তন, বামফ্রন্টের ফিরে আসার কাজটাও সহজ হবে না।
লোকসভা নির্বাচনের পর এবার বাংলায় হবে দশটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন। সেখানের জনপ্রতিনিধিরা বিধায়ক পদ ছেড়ে লোকসভা ভোটে লড়ায় সেই বিধানসভা আসনগুলি খালি হয়ে গিয়েছে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক, বাংলার কোন ১০টি বিধানসভা আসনে ভোট:
১) নৈহাটি (ব্যারাকপুর লোকসভা): এখানকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুর থেকে সাংসদ হয়েছেন। বিজেপির অর্জুন সিংকে ধরাশায়ী করে পার্থ ভৌমিক এবার সংসদে যাবেন। তাই খালি হওয়া নৈহাটি বিধানসভা আসনে হবে উপনির্বাচন। তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে থেকেই নামবে। নৈহাটি একেবারে তৃণমূলের গড়।
২) মেদিনীপুর: এখানকার বিধায়ক জুন মালিয়া এবার সাংসদ হয়েছেন। বিজেপি-র অগ্নিমিত্র পাল-কে উড়িয়ে দিয়ে দিল্লি যাবেন জুন। তাই এবার মেদিনীপুর বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে। লোকসভায় যাই হোক, গত কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্রে তৃণমূল সহজেই জিতছে।
৩) মানিকতলা (কলকাতা উত্তর): রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পর আসনটি খালি হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ বিধানসভায় এখানের বিজেপি-র প্রার্থী কল্যাণ চৌবে আদালতে মামলা করেন। মামলার জটিলতার সেই কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে উপনির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। আদালতের সমস্যা মেটায় মানিকতলা এবার অবশেষে হবে নির্বাচন। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় ৩ হাজারের বেশী ভোটে লিড পান তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়।
৪) বাগদা (উত্তর ২৪ পরগণা): বিধায়ক পদ ছেড়ে এবার লোকসভা ভোটে বনগাঁয় তৃণমূল প্রার্থী হন সত্যজিত বিশ্বাস। রাজ্যের প্রায় সব জায়গায় দিদি ঝ়় চললেও শেষ পর্যন্ত বিজেপি-র শান্তনু ঠাকুরের কাছে ৭০ হাজারের বেশী ভোটে হারেন সত্যজিত। এবার সেই বাগদায় হবে উপনির্বাচন। খুব সম্ভবত তিনিই এবার তৃণমূলের হয়ে দাঁড়াবেন।
৫) রানাঘাট দক্ষিণ (নদিয়া): ২০২১ বিধানসভায় রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় বিজেপি-র টিকিটে জিতেছিলেন মুকুট মণি পাল। কিন্তু পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে রানাঘাট লোকসভায় দিদির দলের প্রার্থী হন। এবার রানাঘাট লোকসভায় বিজেপি-র জগন্নাথ সরকারের কাছে মুকুট মণি পাল হারেন ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোট। জয়ের মুকুট ওঠে বিজেপি-র জগন্নাথের মাথায়। এবার সেই রানঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় উপনির্বাচন। খুব জমজমাট লড়াই হতে পারে। রানাঘাট এখন দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির একমাত্র নিরাপদ গড়। গত দুটি বিধানসভা ও লোকসভায় রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে হেরেছে তৃণমূল।
৬) হাড়োয়া (উত্তর ২৪ পরগণা): এখানকার বিধায়ক গাজি নুরুল ইসলাম এখন বসিরহাটের সাংসদ হয়েছেন। এবারের লোকসভা ভোটের বিজেপি-র রেখা পাত্রকে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের হাজি নুরুল ইসলাম। বসিরহাট লোকসভার অধীনে থাকা হাড়োয়া বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের সহজ জয় পাওয়ার কথা। তিন বছর আগে হাজি নুরুল এখান থেকে জিতেছিলেন ৮১ হাজার ভোটে। দ্বিতীয় হয়েছিলেন আইএসএফের প্রার্থী। বিজেপি প্রার্থীর জামানত জব্দ হয়েছিল।
৭) তালডাংরা (বাঁকুড়া): এখানকার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী এবারের লোকসভায় জায়েন্ট কিলার। হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকে হারাতে দিদি টিকিট দিয়েছিলেন তালডাংরা বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী-কে। দিদির আস্থা রেখে বাঁকুড়ায় ৩২ হাজার ভোটে জেতেন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। তাই খালি হওয়া তালডাংরা বিধানসভা আসনে হবে উপনির্বাচন। তিন বছর আগে তালডাংরা বিধানসভায় ১৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন অরূপ। সুভাষ সরকারের হারের পর বামেরা এখানে তাদের হারানো ভোট ব্যাঙ্ক ফিরে পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটা হয় কি না তকা বোঝা যাবে তালডাংরা উপনির্বাচনে।
৮) রায়গঞ্জ (উত্তর ২৪ পরগণা): অনেকটা বাগদার মত অবস্থা রায়গঞ্জের। তিন বছর আগে রায়গঞ্জ বিধানসভায় জিতে বিধায়ক হন বিজেপির কৃষ্ণ কল্যাণী। কিন্তু পরে তিনি দলবদলে তৃণমূলে যোগ দেন। সেই কৃষ্ণ কল্যাণীকে দিদি এবার রায়গঞ্জ লোকসভায় প্রার্থী করেন রায়গঞ্জ বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করেন কৃষ্ণ কল্যাণী। দুই কংগ্রেসের ভোট ভাগাভাগিতে এবার বিজেপ কার্তিক পালের কাছে ৬৮ হাজার ভোটে হারেন রায়গঞ্জের প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী। তিনিই খুব সম্ভবত উপ নির্বাচনে এখান থেকে তৃণমূল প্রার্থী হবেন। ২০২১ বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী সাড়ে ২০ হাজারের বেশী ভোটে হারান তৃণমূলের কানাই লাল আগরওয়াল-কে। এবার রায়গঞ্জের লড়াই জমবে।
৯) সিতাই (কোচবিহার): এবার লোকসভা ভোটে জায়েন্ট কিলারের তকমা পেয়েছেন তৃণমূলের জগদীশ বসুনিয়া। ২০২ বিধানসভা ভোটে সিতাই থেকে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়ে দারুণ জয় পেয়েছিলেন জগদীশ। অমিত শাহ-র ডেপুটি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীশ প্রামাণিক-কে হারাতে জগদীশকে টিকিট দিয়েছিলেন দিদি। মমতার সেই বিশ্বাসে দারুণভাবে রকাখতে পেরে জিতেছেন জগদীশ। সিতাই কেন্দ্রটি খালি হওয়ায় একানে উপনির্বাচন। কোচবিহারে তৃণমূলের সবচেয়ে ভরসার জায়গা হিসেবে ধরা হয় সিতাই-কে।
১০) মাদারিহাট (আলিপুরদুয়ার): এখানকার বিধায়ক মনোজ টিগ্গা এবার আলিপুরদুয়ারে বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। জন বার্লা-কে সরিয়ে এবার মনোজ টিগ্গা-কে টিকিট দেয় বিজেপি। তৃণমূলের প্রকাশ চিক বারিককে ৭৫ হাজার ভোটে হারান টিগ্গা। এবার টিগ্গার ছেড়ে যাওয়ায় মাদারিহাট বিধানসভায় হবে উপনির্বাচন। গত বিধানসভায় দিদি ঝড়ের মাঝেও বিজেপি এখানে জিতেছিল প্রায় ৩০ হাজার ভোটে। এই বিধানসভায় কখনও তৃণমূল জিততে পারেনি। দিদি বিরোধী এই বিধানসভার উপনির্বাচনে জোড়া ফুল ফোটে কি না সেটাই দেখার।
কে কোথায় এগিয়ে
তৃণমূল এগিয়ে- মানিকতলা, নৈহাটি, হাড়োয়া, বাগদা, মেদিনীপুর, তালডাংরা, সিতাই।
বিজেপি এগিয়ে- মাদারিহাট, রানাঘাট দক্ষিণ।
৫০:৫০- রায়গঞ্জ।