চলুন 'সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার'
‘সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার’।ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়।
ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের ষষ্ঠপর্বে কাটুক গঙ্গাসাগরের তটে।
গঙ্গা সাগর(Sagar Island)
‘সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর একবার’।ছোটবড় ৫১টি দ্বীপ নিয়ে ৫৮০ বর্গ কিমি জুড়ে সাগরদ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে আসা ও সগর রাজার পুত্রদের জীবনদানের লোকগাথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই তীর্থভূমি। কপিল মুনির আশ্রমটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলেও পরবর্তীকালে গড়ে ওঠা কপিল মুনির মন্দিরটিকে কেন্দ্র করে ভক্ত সমাগম হয়। মকর সংক্রান্তির পুণ্য তিথিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় জমে এই সঙ্গমে।ভ্যানরিকশায় চেপে বেরিয়ে পড়ো দ্বীপ দর্শনে। মঠ–মন্দির-আশ্রমের ছড়াছড়ি এই সাগরসঙ্গমে। রয়েছে কপিল কুটির সাংখ্যযোগ আশ্রম, শঙ্করাচার্য আশ্রম, ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের যোগেন্দ্র মঠ, মনানন্দ কপিলের হরি ওঁ আল্লা গড কপিল কল্পতরু আশ্রম, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ইত্যাদি।নামখানা থেকে জলপথে পৌঁছাতে পারেন কলকাতা থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরের এই দ্বীপভূমিতে। ট্রেনে কাকদ্বীপে পৌঁছে, নৌকায় মুড়িগঙ্গা পেড়িয়ে কচুবেড়িয়া ঘাট। সেখান থেকে বাস বা ভাড়া গাড়িতে ৩০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যান গঙ্গাসাগর। পৌঁছতে হবে।
তীর্থযাত্রী কিংবা ভ্রমণপিপাসু মানুষ, গঙ্গাসাগর সকলের কাছেই আকর্ষণীয় গন্তব্য। রুপোলি বালুতট, পরিষ্কার আকাশ ও শান্ত সমুদ্র সব মিলিয়ে নিরিবিলিতে সপ্তাহান্ত কাটাতে চাওয়া পর্যটকদের কাছে গঙ্গাসাগর বরাবরই আকর্ষণীয়।সাগরদ্বীপ নামেও পরিচিত গঙ্গাসাগরের সবটুকু এখনও চেনা বাকি, তাই এখানে দূষণও কম। দ্বীপের বাতিঘর থেকে গোটা সমুদ্রতটটি দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে। সূর্যাস্তের সময় গোটা আকাশ সোনালি বর্ণের হয়ে যায়, দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে লাল আভা। রুপোলি বালুতটে সূর্যের শেষ রশ্মিগুলি প্রতিফলিত হয়।প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন সারা দেশ থেকে হিন্দু পুণ্যার্থীরা(Hindu Pilgrim) গঙ্গা ও বঙ্গোপসাগরের(Bay of Bengal) সঙ্গম স্থলে ডুব দিয়ে পুণ্যার্জন করতে এখানে আসেন। তারপর তাঁরা কপিল মুনির আশ্রমে পুজো দেন। এ সময় এখানে গঙ্গাসাগর মেলা হয়, যা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মেলা। রামায়ণ(The Ramayana), মহাভারত(The Mahabharata) থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস কিংবা রবীন্দ্রনাথের(Rabindranath Tagore) কবিতা, সর্বত্রই স্থান করে নিয়েছে গঙ্গাসাগর । বহু হিন্দু পুরাণেও গঙ্গাসাগরের উল্লেখ আছে।
ব্যান্ডেল(Bandel)
সাতসকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘুরে আসুন ব্যান্ডেল।আপাত পরিচিত জায়গাটি হয়তো ট্রেনে আসতে যেতে বহুবার দেখেছেন, একবার নেমে ঘুরে আসুন। দেখবেন পর্তুগিজদের তৈরি ব্যান্ডেল চার্চ ঘুরে দেখতে পারেন। নাম নিয়ে গল্পে আসি,প্রচলিত কাহিনিটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পর্তুগিজদের আগমন-বার্তা। এই খানেই গঙ্গায় বন্দর গড়ে তুলেছিল পর্তুগিজরা। এ দেশে ইংরেজ আসার অনেক আগে। তারা বলত বান্দর, সেখান থেকে নাম হয়ে গেল ব্যান্ডেল। মাস্তুলকে পর্তুগিজ ভাষায় ব্যান্ডেল বলা হয়। সেই থেকেই এই গির্জার নাম ব্যান্ডেল।গির্জা(Bandel Charch) উদ্বোধনের উদযাপন যখন চলছে, তখন একটি বিপর্যস্ত পর্তুগিজ জাহাজের পাল চোখে পড়ে সবার। জানা যায়, কিছু দিন আগেই জাহাজটি প্রবল ঝড়ের মুখে পড়েছিল। ভাগ্যক্রমে নাবিকরা জীবিত রয়েছে। ঝড়ের সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি প্রথম যে গির্জাটিকে দেখবেন, সেখানে জাহাজের প্রধান মাস্তুলটি দান করবেন। ক্যাপ্টেন তার কথা রেখেছিলেন। সেই মাস্তুলটি এখনও গির্জা প্রাঙ্গণে রাখা আছে।শোনা যায়, ১৫৩৭-এ বাংলার নবাবকে সাহায্যের বিনিময়ে কারখানা গড়ার অনুমতি পান পর্তুগিজ অ্যাডমিরাল সাম্পাইও, গড়ে ওঠে পর্তুগিজ কলোনিও। ১৫৭৯-তে পর্তুগিজরা হুগলি নদীর তীরে বন্দর পত্তন করে। শাজাহানের(Mughal Emperor Shahjahan) হাতে ধ্বংস হওয়া চার্চ ১৬৪০ সালে নতুন করে গড়ে ওঠে।