Durga Puja 2022: ‘মায়ের ভাষায় মায়ের পুজো', অভিনব উদ্যোগে সামিল বঙ্গবাসী, এবার বাংলাতেই হোক মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি

মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য‌ (Kaliprasanna Bhattacharjee), পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী

সব বাঙালির অমোঘ অভ‌্যাস মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি। দুর্গাপুজোয় (Durga Pujo) অষ্টমীর সকালে স্নান সেরে নতুন বস্ত্রে পরিবারের মঙ্গলকামনায় ব্রতী হন গণনাতীত বঙ্গকুল। ঘোর নাস্তিকেরও মাথা নুয়ে পড়ে দশভুজার পায়ের কাছে। সে মন্ত্র আত্মস্থ করতে পারেন সকলে? অর্থোদ্ধার করতে পারে এই প্রজন্ম? তাই আর সংস্কৃতে নয় এবার মায়ের পুজো হবে মায়ের ভাষাতেই। অভিনব এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন কলকাতার তিনজন প্রবীন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য‌ (Kaliprasanna Bhattacharjee), পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। কলকাতা তো বটেই, এক সূত্রে এই অঞ্জলির ভাষা বাঁধবে সারা পৃথিবীর বাঙালিকে।

প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, না বুঝেই মন্ত্রোচ্চারণ করেন অসংখ‌্য মানুষ। ‘ওঁ রুদ্রচণ্ডে প্রচণ্ডাসি প্রচণ্ড গণনাশিনী…’ উচ্চারণের সময় তিনি দেখেছেন কেউ উসখুস করছেন। কারও ঘুরছে চোখ। প্রবীণ পুরোহিতের পর্যবেক্ষণ, দুর্বোধ‌্য মন্ত্র বুঝতে না পেরেই এমনতর আচরণ। তাঁর কথায়, ‘‘কতকগুলো কথা উচ্চারণ করে, তার মানে বুঝলাম না। এটা অত‌্যন্ত অনভিপ্রেত। মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রগুলোকে বাংলাভাষায় যদি বলা যায় তাহলে একজন নিজের ভাবটাকে প্রকাশ করতে পারে।

’’ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar) জানিয়েছেন, যে ভাষা আমরা বুঝি না, তার মধ্যে একটা গুরুগম্ভীর মহিমা রয়েছে, এমন অন্ধবিশ্বাস আছে অনেকের। এটা ভিত্তিহীন। শিক্ষাবিদের সংযোজন, সংস্কৃত মন্ত্রে কোনও বিশেষ ইন্দ্রজাল রয়েছে, এমনটা নয়। আর যদি বা কিছু থেকেও থাকে, আপামর বাঙালির ভুল উচ্চারণে দিন দিন তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।

এমন উদ্যোগে গেল গেল রব তুলছেন কতিপয় রক্ষণশীল। প্রাচীনপন্থীদের খণ্ডন করে পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী (Nrisingha Prasad Bhaduri) বলেছেন, কোনও দোষ নেই বাংলায় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ায়। নৃসিংহবাবুর যুক্তি, বৈদিক যুগে যে সংস্কৃত উচ্চারণে পুজো হত, সময়ের সঙ্গে তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তা-ই যদি হয়, তবে বাংলা নয় কেন?

কলকাতার দেড়শো পুজো সায় দিয়েছে। এমন প্রস্তাবে সন্ধি করেছে দিল্লি, মুম্বই, পাটনা, বেঙ্গালুরু মধ‌্যপ্রদেশের একাধিক পুজো। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এমন নজিরহীন পরিকল্পনায় শামিল হচ্ছেন সিডনি, দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, ক‌্যালিফোর্নিয়ার পুজো উদ্যোক্তারা।  ভাষা সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন কলকাতার কিছু সাবেক বাড়ির দুর্গাপুজোর আয়োজকরাও। সমস্ত জায়গায় এবার অষ্টমীর অঞ্জলি হবে বাংলাভাষায়।

যারা এই অঞ্জলি মন্ত্র পেতে চাইছেন তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন ই-মেলে। ই-মেলের ঠিকানা  pushpanjali@sangbadpratidin.inওয়েবসাইটেও মিলছে বাংলাভাষায় লেখা এই মন্ত্রের পিডিএফ এবং অডিও ফাইল।অডিও ফাইলে কণ্ঠদান করেছেন বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ‌্যায়(Satinath Mukhopadhay)।