Mamata Banerjee: প্রশান্ত কিশোরের টোটকায় তৃণমূলে এখন কী কী নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে

লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2019) বিজেপি-র বড় সাফল্যের পরই সঙ্কটে পড়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসনে জিতে বিজেপি কার্যত তৃণমূলের গাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। নির্বাচনের ফলপ্রকাশ পেতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের হিড়িক পড়ে।

প্রশান্ত কিশোর ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়( Photo Credit: PTI)

কলকাতা, ১২ জুলাই: লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2019) বিজেপি-র বড় সাফল্যের পরই সঙ্কটে পড়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্যে ১৮টি লোকসভা আসনে জিতে বিজেপি কার্যত তৃণমূলের গাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। নির্বাচনের ফলপ্রকাশ পেতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের হিড়িক পড়ে। বিধায়ক থেকে পৌর প্রতিনিধি, এমনকি আস্ত পুর বোর্ডও তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে যায়।

মুকুল রায়ের মাস্টারস্ট্রোক, মোদি ঝড় আর দেশজুড়ে বিজেপি-র দাপটে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু জায়গায় অস্তিত্বসঙ্কটে পড়ে যায়। এমন সময়ই দেশের এক নম্বর নির্বাচনী কৌশলী বা ভোটগুরু হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরের দ্বারস্থ হয়ে তৃণমূল। আরও পড়ুন-মুকুলকে হতবাক করে ফের তৃণমূলে কাঁচরাপাড়ার ৫ কাউন্সিলর, কী বললেন ববি হাকিম?

আগামী বিধানসভায় দিদিকে ক্ষমতায় রাখতে 'ভোটগুরু' প্রশান্ত কিশোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মমতা ব্যানার্জি-র সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক সারেন ২০১৪ লোকসভায় নরেন্দ্র মোদিকে জেতানোর কৌশলী নির্বাচনী গুরু পিকে। রাজ্যে তৃণমূলের চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ, দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের কারণে বিজেপি-তে যোগদান আর নিশ্চিত ভোটব্য়াঙ্কে ভাঙন। যে কারণে সিঙ্গুর, জঙ্গলমহলের মত দিদি গড়েও জিতে গিয়েছে বিজেপি-তে।

রাজ্যে হারানো জমিতে ফেরাতে প্রশান্ত কিশোর বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন। পিকে-র টিপসের সঙ্গে মমতা ব্যানার্জি-র রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা যোগ করে তৃণমূলে বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু হয়েছে--জানুন সেগুলি কী কী

১) দলীয় নেতৃত্বকে না জানিয়ে দলের কেউ রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না

একে একে দল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন বিধায়ক, কাউন্সিলর, নেতারা। কে কখন কি পরিস্থিতিতে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না দলনেত্রী তথা তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে কোর কমিটির বৈঠক বসল। সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে পরের দিনই দুজন দিল্লিতে চলে গেলেন পরে জানা গেল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

তাই দলের অন্দরেই একটি ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কে কখন দল ছাড়বেন বোঝা যাচ্ছে না। গতকাল তৃণমূল ভবনে দলনেত্রী স্পষ্টই বললেন, দল ও বিধানসভার স্পিকারকে না জানিয়ে তৃণমূলের কোনও বিধায়ক যেন রাজ্যের বাইরে ও বিদেশ সফরে না যান।

২) মিডিয়ার সামনে যে কোনও নেতা মুখ খুলতে পারবেন না

মিডিয়ায় দলের নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে তৃণমূলকে নিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। মিডিয়ায় দুর্বল মন্তব্যে দলীয় নেতাদের কথায় ঔদ্ধত্য ধরা পড়ছে। তাই মিডিয়ার সামনে দলের নির্দেশ ছাড়া যে কোনও নেতা মুখ খুলতে পারবেন না। টিভি চ্যানেলে বলার জন্যও আলাদা টিম গড়েছে তৃণমূল। কোনও ঘটনা বা বিষয় নিয়ে দলের তরফে বক্তব্যে 'বিভ্রান্তি' যাতে না হয়, সে ব্যাপারেও তিনি বিধায়কদের সতর্ক করে দেন। দলের তরফে মুখপাত্ররা ছাড়া আর কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য যাতে না করেন, তা খেয়াল রাখতে বলেছেন মমতা।

৩) মানুষের যে কোনও সমস্যায় ছুটে যেতে হবে

দলের নেতাদের সব সময় মনানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকতে হবে। এটা ক্ষমতায় আসার পর কমেছিল, এখন অনেকটা কমেছে। সেটা আবার ফিরিয়ে আনতেই হবে। তাই নেতা-কর্মীদের দলের সরাসরি নির্দেশ, মানুষের যে কোনও সমস্যায় ছুটে যান।

৪) প্রতি সপ্তাহে নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে

সব বিধায়ককে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার মানুষের অভাব অভিযোগ শুনতে হবে। জনগণ থেকে বিছিন্ন কোনওমতেই হওয়া যাবে না। শুধু অভিযোগ শোনাই নয়, সেগুলি মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

৫) জনপ্রতিনিধিদের সহজ-সাধারণ জীবনযাপন করতে হবে

বিধায়ক-কাউন্সিলারদের জীবন যাপন যেন কখনই মানুষ থেকে বিছিন্ন হওয়ার মত না হয়। জনপ্রতিনিধিদের সহজ-সাধারণ জীবনযাপন করতে হবে। যে দলের সুপ্রিমো-র জীবনযাপন এত সাধারণ, সে দলের নেতাদের দায় আরও থাকে তারা যেন মাটিতে পা দিয়ে চলেন।