West Bengal BJP: পাঁচ জেলায় নিশ্চিহ্ন, পাঁচটিতে কার্যত সাইনবোর্ড , জানুন বিজেপির বিপর্যয়ের এলাকাগুলি

বাংলায় এবার খারাপ ফল হয়েছে বিজেপির। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বাংলায় ফ্লপ শো হয় বিজেপির। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার-রা দিদির ম্যাজিকে ম্লান হয়ে যান। দু একটি জায়গা বাদ দিল সামগ্রিকভাবে দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবি হয়।

Suvendu Adhikari, Sukana Majumdar, Locket Chatterjee. (Photo Credits:X)

বাংলায় এবার খারাপ ফল হয়েছে বিজেপির। সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও বাংলায় ফ্লপ শো হয় বিজেপির। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার-রা দিদির ম্যাজিকে ম্লান হয়ে যান। দু একটি জায়গা বাদ দিল সামগ্রিকভাবে দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবি হয়। হেরে গেলেন বিজেপি-র একের পর এক তাবড় তাবড় নেতা মন্ত্রীরা।

বাংলায় দিদি ঝড়ে হেরে গেলেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীশীথ প্রামাণিক (কোচবিহার) ও সুভাষ সরকার (বাঁকুড়া)। হারতে হল দুই হেভিওয়েট অর্জুন সিং (ব্যারাকপুর), লকেট চট্টোপাধ্যায় (হুগলি)-ও। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও দিদি ঝড়ে উড়ে গেলেন। কাজে এল না সুরিন্দর সিং আলুওয়ালি-রা (আসানসোল) অভিজ্ঞতাও। রাজরাণী অমৃতা রায়ও মহুয়া মৈত্র-র কাছে হারলেন। দলবদলে আসা তাপস রায় (উত্তর কলকাতা),  শীলভদ্র দত্ত (দমদম)-রাও কিছু করতে পারলেন না। হিরণ, অগ্নিমিত্র পল-দের মত তারকা প্রার্থীরাও কিছু করতে পারলেন না।

তবে শুভেন্দু  অধিকারী নিজের গড়ে শক্তি ধরে রাখলেন। মতুয়া গড়ে শান্তনু ঠাকুরের ব্যক্তিগত ম্যাজিক, রানাঘাটে জগন্নাথ সরকার ভাল ফল করে জিতলেন। গণনায় অনেকটা সময় পিছিয়ে থেকে শেষ অবধি কম ব্যবধানে বালুরঘাট থেকে জিতলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

আসুন দেখে নেওয়া যাক জেলাভিত্তিক হিসেবে বিজেপির কোথায় সবচেয়ে খারাপ ফল হল--

১) দক্ষিণ ২৪ পরগণা (০/৩১): দক্ষিণ ২৪ পরগণার চারটি লোকসভা আসন-যাদবপুর, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর, জয়নগর- চারটিতেই ভরাডুবি হয়েছে বিজেপির। যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-কে হারানোর স্বপ্নে বুঁদ ছিল বিজেপি, তিনি জেতেন রেকর্ড ৭ লক্ষাধিক ভোটে। মথুরাপুর, জয়নগরে অনেক চেষ্টা করলেও খারাপ ফল হয়েছে। যাদবপুরে মন্দের ভাল, দ্বিতীয় স্থান। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ৩১টি আসনেই অনায়াসে জিতেছে তৃণমূল, বিজেপির পুরোপুরি ভরাডুবি হয়েছে। তৃণমূলের সংগঠন দারুণ কাজ করে। বিজেপি নেতাদের মাটিতে পরিশ্রম করতে দেখা যায়নি, বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের ওপর ভর করে বাজিমাতের শর্টকাটের চিন্তাও ধরাশায়ী হয়েছে।

২) হাওড়া (০/১৬): দক্ষিণ বঙ্গে দিদি গড় হিসেবে পরিচিত জেলা হাওড়া বিজেপি সবচেয়ে বেশী আশা করেছিল। ভোট শেষ হওয়ার পর তো বিজেপি-র আইটি সেল দারুণ হাওয়া তুলেছিল প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবার নিশ্চিত হারবেন। কিন্তু প্রতিবারের মত এবারও দিদিকে দু হাত ভরে ভালবাসা দিল হাওড়াবাসী। হাওড়া লোকসভার দুটি আসন-হাওড়া ও উলুবেরিয়ায় অনায়াসে জিতল তৃণমূল। পাশাপাশি হাওড়া জেলার ১৬টি বিধানসভাতে বড় ব্যবধানেই লিড নিল তৃণমূল। হাওড়া আরও একবার বিজেপিকে হতাশ করল।

৩) ঝাড়গ্রাম (০/৪): জঙ্গলমহলে এবার ধরাশায়ী বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে মোদী ঝড় ও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বে ভর করে ঝাড়গ্রামে অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েছিল পদ্ম-শিবির। জয়ের পর সাধারণ মানুষের পাশে না থাকার 'শাস্তি' পেতে হল গেরুয়া শিবির। প্রার্থী বদল করেও কোনও লাভ হল না। ভরাডুবি হল বিজেপির। ঝাড়গ্রামের ৪টি বিধানসভা আসনেই বড় লিড পায় তৃণমূল।

৪) পূর্ব বর্ধমান (০/১৬): দিদির ওপর আস্থা, ভালবাসা পূর্ব বর্ধমানের বরাবরের। এবার সেই ভালবাসা যেন অনেকটা বেড়ে গেল। পূর্ব বর্ধমানের ১৬টি আসনেই বড় লিড পেল তৃণমূল। কার্জেন গেট, ধান ভাণ্ডারের জেলায় দিদি ঝড়ে উড়ে গেলেন মোদী।

৫) বীরভূম (০/১১): অনুব্রত মণ্ডল জেলবন্দি। তিহার বন্দি কেষ্টর অনুপস্থিতিতেও বিজেপি দিদি ঝড়ে উড়ে গেল। বীরভূমের দুটি লোকসভা আসনেই অনয়াসে বড় ব্যবধানে জিতল তৃণমূল- বীরভূমে শতাব্দী রায় ও বোলপুরে অসিত মালের ধারেকাছে আসতে পারল না বিজেপি। বীরভূমের ১১টি বিধানসভা আসনেই বড় লিড নিল তৃণমূল। এরপর আবার কেষ্ট ছাড়া পেলে ২০২৬ বিধানসভায় বীরভূমে জমি উদ্ধার 'মিশন ইমপসিবল' হয়ে যেতে পারে বিজেপির।

৬) উত্তর ২৪ পরগনা (৮/৪৩): সন্দেশখালি কাণ্ড থেকে অর্জুন সিং। বিজেপির হিসেব ছিল উত্তর ২৪ পরগণার অন্তত তিনটে লোকসভা আসনে জেতার। বিজেপির ছিল অর্জুন সিং ব্যারাপুরে দলকে জিতিয়ে আনবেন। সন্দেশখালির ঘটনায় বসিরহাটে জয় আসবে। বারাসতে কাকলি ঘোষ দস্তিদারকেও হারানো যাবে। আর শীলভদ্র দত্ত দমদমে সৌগত রায়-কে হারিয়ে অঘটন ঘটাবেন। এক্সিট পোলেও তেমন ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু কোথায় কী! ব্যারাকপুরে অর্জুনের ভরাডুবি, বসিরহাটে রেকর্ড ভোটে হার, বারাসতে দিদিগড়ে খড়কুটোর মত উড়ে যাওয়া আর দমদমে সৌগত রায়ের ম্যাজিক অব্যাহত থেকে বিজেপি ০-৪ হারে। উত্তর ২৪ পরগণায় বিজেপির সংগঠনও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাও একেবারে কাজে দেয়নি। উত্তর ২৪ পরগণার ৪৩টি-র মধ্যে ৩৫টি-তে লিড পায় তৃণমূল,সেখানে ৮টি-তে লিড পায় বিজেপি। কিন্তু তার মধ্যে অর্জুন সিংয়ের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মারই অনেকটা হাত।

৭) পশ্চিম মেদিনীপুর (১/১৫): পশ্চিম মেদিনীপুরে গত লোকসভায় দুটি আসনে বাজিমাত করেছিল বিজেপি। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম দুটি লোকসভা আসনেই জিতেছিল বিজেপি। তবে ঘাটালে দেবের জাদুতে মোদী হাওয়া কাজে করেনি। কিন্তু এবার একেবারে খারাপ ফল হল বিজেপির। অগ্নিমিত্রা পল হারলেন জুন মালিয়ার কাছে। আর ঝাড়গ্রামে ম্যাজিক দেখালো তৃণমূলেরক সংগঠন। আর ঘাটালে দেবের জয় প্রত্যাশিতই ছিল। লাল মাটির জেলায় মাত্র একটি বিধানসভায় লিড পেল বিজেপি। অথচ পদ্ম শিবিরের হিসেব ছিল এই জেলায় অন্তত ৭৫-৮০ শতাংশ বিধানসভায় তাদের লিড থাকবে।

৮) হুগলি (৬/১৮): হুগলিতে জয়ের লকেট রচনার গলায় ওঠায় জেলায় বিজেপি হতাশ। আরামবাগে জয় নিয়েও বিজেপি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু আরামবাগে তৃণমূল প্রার্থী মিতালি বাগের প্রচার মানুষের কাছে বেশী পৌঁছনোয় সেখানেও হারতে হয় পদ্ম শিবিরকে। হুগলিতে ১৮টি-র মধ্যে মাত্র ৬টি বিধানসভায় জেতে বিজেপি। অথচ পদ্ম শিবিরের হিসেব ছিল ১৬টি বিধানসভায় লিড নিয়ে হুগলির দুটি লোকসভাতেই জিতবে বিজেপি।

৯) কলকাতা (২/১১)- মাত্র দিন কয়েকের দলবদলের পর অনেক আশা করে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক তাপস রায়-কে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায়ের কাছে বড় ব্যবধানেই হারলেন তাপস। দক্ষিণ কলকাতাতেও ধরাশায়ী হলেন বিজেপি-র দেবশ্রী রায় চৌধুরী। কলকাতায় বিজেপি ১১টি-র মধ্যে ২টি বিধানসভায় এগিয়ে থাকলেও সেটি কতটা দু ছর পর বিধানসভা আসনে পরিণত হবে তা নিয়ে নিশ্চিত সংশয় আছে।

বিজেপির জেলাভিত্তিক ফল

১) উত্তরবঙ্গ

আলিপুরদুয়ার- মোট আসন:৫, বিজেপি: ৫, তৃণমূল-০

কোচবিহার- মোট আসন: ৯, বিজেপি: ৪, তৃণমূল-৫

জলপাইগুড়ি- মোট আসন: ৭, বিজেপি: ৪, তৃণমূল-৩

উত্তর দিনাজপুর- মোট আসন: ৯, বিজেপি: ৪, তৃণমূল-৫

দক্ষিণ দিনাজপুর- মোট আসন: ৬, বিজেপি: ৩, তৃণমূল-৩

২) দার্জিলিং

দার্জিলিং- মোট আসন: ৫, বিজেপি-৫, তৃণমূল-০০

কালিম্পং- মোট আসন: ১ ,বিজেপি ১, তৃণমূল-০০

৩) মালদা

মোট আসন- ১২। বিজেপি-৬, কংগ্রেস-৬

৪) মুর্শিদাবাদ

মোট আসন- ২২। তৃণমূল-১৪, কংগ্রেস-৪, বিজেপি-৩, সিপিএম-১

৫) নদিয়া

মোট আসন- ১৭। তৃণমূল-৬, বিজেপি-১১

৬) উত্তর ২৪ পরগণা

মোট আসন-৩৩। তৃণমূল-২৫, বিজেপি-৮

৭) দক্ষিণ ২৪ পরগণা

মোট আসন- ৩১। তৃণমূল-৩১, বিজেপি-০০

৮) কলকাতা

মোট আসন- ১১। তৃণমূল-৯, বিজেপি-২

হাওড়া

মোট আসন- ১৬। তৃণমূল-১৬, বিজেপি-০০

হুগলি

মোট আসন- ১৮। তৃণমূল-১২, বিজেপি-৬

পূর্ব বর্ধমান

মোট আসন- ১৬। তৃণমূল-১৬, বিজেপি-০০

পশ্চিম বর্ধমান

মোট আসন- ১৫। তৃণমূল-১৪, বিজেপি-১

বীরভূম

মোট আসন- ১১। তৃণমূল-১১, বিজেপি-০০

বাঁকুড়া

মোট আসন- ১২। তৃণমূল-৬, বিজেপি-৬

পুরুলিয়া

মোট আসন- ৯। তৃণমূল-৬, বিজেপি-৩

ঝাড়গ্রাম

মোট আসন- ৪। তৃণমূল-৪, বিজেপি-০০

পশ্চিম মেদিনীপুর

মোট আসন- ১৫। তৃণমূল-১৪, বিজেপি-১

পূর্ব মেদিনীপুর

মোট আসন- ১৬। তৃণমূল-১, বিজেপি-১৫